Type Here to Get Search Results !

Matua Sangeet

Matua Sangeet

শ্রীশ্রী হরির ভাব সংকীর্ত্তন

 শ্রীশ্রী হরির ভাব সংকীর্ত্তন

https://www.matuasangeet.fun/


উৎসর্গ

এই সঙ্গীতাবলী মহাপ্রভু শ্রীশ্রী হরিচাঁদের

শ্রীশ্রীহরি গুরুচাঁদের শ্রীশ্রী চরণার বিন্দে

সমর্পিত হইল।

গ্রন্থকার:- শ্রী দীনবন্ধু ঠাকুর

  

 

দীনবন্ধু গোঁসাই সেবাশ্রম

স্বত্ত্বাধিকারী - মতুয়া রত্ন শ্রী কৃত্তিবাস ঠাকুর (ব্যারাকপুর, ভারত)

প্রকাশকাল  - শাখা বারুনী মেলা 

                 ৮ই চৈত্র; সন-১৪১৭

 

অগতির গতি পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের পাদপদ্ম ভরসা করিয়া বহুদিন অপ্রকাশিত “শ্রীশ্রীহরির ভাব সংকীর্ত্তন” গীতিমালা খানি পুনঃরায় মুদ্রিত করা হইল। এই সংস্করণে গ্রন্থাকারের পান্ডুলিপিতে পাওয়া কয়েক খানি নতুন গান সন্নিবেশিত করা হইল। এই গীতমালা খানি ঠাকুরের ভক্ত প্রাণের কিছু ঘাটতি প্রশমিত হইলে এই চেষ্টা সার্থক মনে করিব।।

ইতি:- শ্রী কৃত্তিবাস ঠাকুর


-:সূচনা:-

গুরুদেব শ্রীযুক্ত হরি গোস্বামী। তাঁহার আদেশে এবং দয়া-গুনে এই সঙ্গীতাবলী রচনা করা হয়। গুরুদেব একদিন ১৩৪২ সালে ১০ই ফাল্গুন বুধবার তারিখে বরিশাল জেলার বাধুরপুর গ্রামে নিকুঞ্জ বিহারী মতুয়ার বাড়ীতে বসে অনুকূল পন্ডিত কে বলেছিলেন “অনুকূল, তোমার বিদ্যা ও জ্ঞানশক্তি আছে, তুমি তো গান তৈয়ার করতে পার। তুমি গান তৈয়ার করিবা। এখনই একটি গান তৈয়ার করে আমাকে শুনাও।” তদুত্তরে তিনি কাগজ ও কলম লয়ে বসিলেন। এই কথা যখন উত্থাপন হয় সেই সময় সেই বিছানায় দীনবন্ধু বসা ছিল। শ্রী গোস্বামীর ঐ শ্রীমুখের বাক্য শুনে দীনবন্ধু গুন গুন রবে তান ধরে শ্রীহরির নাম-পদ রচনা করিতেছিলেন। ঐ সুরের সঙ্গে সঙ্গে অমনি বোল উঠতে লাগল। সেই গান শুনে শ্রীগোস্বামী হেসে উঠে বললেন “দীনবন্ধু গান তৈয়ার করতে অনুকুলকে বললাম, সেই গান কি তৈয়ার করলি তুই? তবে আজ হতে তুই গান তৈয়ার কর।” সেই দিন হতে শ্রীশ্রীহরি ঠাকুরের নামপদ গান তৈয়ার করতে আরম্ভ হয়।।


এ দিকে অনুকূল পন্ডিত একটা গান বেঁধে তার সুর করতে না পেরে গান রচনা করিতে খান্ত করিল। তার দ্বারা গান রচনা হল না। তৎপর ১৩৫১ সালে শ্রীযুক্ত শ্রীপতি প্রসন্ন ঠাকুর বরিশাল জিলার কাঁঠালিয়া দীনবন্ধুর সেই গান শুনে বলিলেন “দীনবন্ধু তোমার গানে আমি অতি সন্তুষ্ট হয়েছি, কিন্তু যাহাতে এই নাম জগতে প্রচার হয় তা করাই তোমার উচিৎ। নামেই মনের অন্ধকার ঘুঁচে। তাতেই জীবের মুক্তি; দীনবন্ধু এই কাজে কখনো আলস্য করিও না।” সে কথার উপর দীনবন্ধু বলিলেন, “ বাবা আমি বিদ্যা, বুদ্ধিহীন অতি জঘন্য দুর্ভাগা; আমার দ্বারা কি হবে।” তদুত্তরে ঠাকুর বলিলেন দীনবন্ধু গুরুর প্রতি ভক্তি রাখিস্, গুরুই দেহের মালিক, গুরুই সর্বস্ত, গুরুর প্রতি ভক্তি মতি রাখিলে  সর্ব্ব কর্ম্মে সুফল ফলে। হরি হরি।’

২১শে কার্ত্তিক, ১৩৫৮ সাল।                 -গ্রন্থাকার।

দীনবন্ধু ঠাকুর বরিশাল জেলায় বাউফল থানা অন্তর্গত ঘুচরাকাঠি গ্রামে ১৩১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁহার পিতার নাম কালীচরণ ঠাকুর ও তার মাতা আদ্যা দেবী।




সূচীপত্র

১) ডুবল দিনমণি এল রজনী

২৩) গুরু বিপদ কালে রৈলা কোথায়

২) মম কঠিন হৃদে মাগো হও অবস্থান

২৪) হরি লীলা বুঝতে না রে

৩) হরি এস আসরে, বসিবার আসন রেখেছি

২৫) কি ধনে পুজিবো গুরু আমার সে ধন

৪) হরি বিপদ ভঞ্জন শ্যামো গুনমনি

২৬) হরি কবে তোমায় চাবে আমার এ পাপ

৫) জয় জয় শান্তি হরিচাঁদ

২৭) তুই ভেবে দেখ ওই হরি বিনে

৬) হরি ভজলেম না তোমায় আমি

২৮) এবার ভাবনা ভাব অন্তরে গুরু বলে

৭) উঠরে যশবন্ত লালা

২৯) হরিচাদের পরান ছাড়া কেন আমি

৮) বেলা গেল হরি ঘরে চলো

৩০) এ বিপদে কোথায় ওহে হরিচাঁদ

৯) হরিচাঁদের অপার কীর্তি বুঝিতে না পারি

৩১) হরি এল ওড়াকান্দী

১০) গুরু বলে প্রাণ কাঁদে না  কি করি উপায়

৩২) হরিচাঁদ আমার মনের দুঃখ

১১) তুমি সদয় হইলা জীবের প্রতি হরি দয়াময়

৩৩) আমায় কি বেশে সাজালে হরি

১২) গুরু আমার প্রতি নিদয়া কেনে

৩৪) বহু যুগ পরে এল দয়াল হরিচাঁদ

১৩) আমি পড়েছি আকুল পাথারে এখন উপায় কি

৩৫) হরি বলে করলি নারে ভক্তি স্তূতি

১৪) গুরুর প্রতি না হলে মতি

৩৬) পাষাণ মনরে-

১৫) তোমরা লরে বল হরির কাছে রে

৩৭) হরি তুমি দাও পদাশ্রয়

১৬) তোরা কে কে যাবি ওড়াকান্দী তোরায় চলে আয়

৩৮) ও মন মাঝিরে আমি কেন

১৭) দয়াল হরি হে- আমি ডাকি অসীম কাতরে

৩৯) ওহে দয়াল হরি

১৮) এলো কলির শেষে জীব তরাতে

৪০) মন তুই গুরু চিনে ধর

১৯) আমি ঘুরে বেড়াই দেশ-বিদেশে

৪১) সবে বলরে দারুন বিধি

২০) তোরা আয় কি যাবি হরিচাঁদের প্রেম

৪২) মন তুই দেখ না চেয়ে নয়ন দিয়ে

২১) কেন ঘুরে বেড়াও অন্ধকারে

৪৩) পাষাণ মনা ভাই

২২) আমার কর্ম দোষে সব খোয়ালেম

৪৪) হরি আমর সাধন হল কৈ

৪৫) হরি তোমায় ডাকতে যেন পারি চিরদিন

৬৭) হরি এই মিনতি চরণে

৪৬) হরিনাম হৃদয় জপে যার

৬৮) দয়াল গুরুচাঁদ রে

৪৭) আমার এইভাবে কি যাবে চিরদিন

৬৯) কি দিয়ে পূজিব আমি

৪৮) যে জন হরি ভক্ত হরি পরায়ন

৭০) আমি শান্তি না পাই হে গুরুচাঁদ

৪৯) ও দরদিরে তুমি আমার বিপদ কালে

৭১) দয়াল গুরুচাঁদ রে

৫০) নামের সাধ লাগল না আমার লোভে

৭২) প্রানের ভাইরে আমার মাকে

৫১) কাল ঘুমে ঘুমিয়ে কেন রলি অচেতন

৭৩) মিছে মায়ার কান্না কাঁদলে কি হবে

৫২) এবার প্রেম নদীতে দে সাঁতার

৭৪) যদি তড়াতে চাও কাম দ্রোনে

৫৩) আমি ভজলেম না গুরুর চরণ

৭৫) হরি প্রেম দিয়ে ডাকতে পারি না

৫৪) বাজে কথায় দিন ফুরালি

৭৬) আমি কেমনে করিব সাধন

৫৫) গুরু গজাল হইলে হবে কি

৭৭) এই হরিনাম মহামন্ত্র সর্ব্ব যুগের সার

৫৬) মন্দিরে চল মন আমার

৭৮) যদি পারের আসা কর ও সুজন মনা

৫৭) আমার প্রানের দরদী হে এসে কর হে

৭৯) এমন সু মধুর হরিনাম নিয়ে একরাব

৫৮) প্রেম ভক্তি  যার উপজে তারে দয়া

৮০) এর সোনার মানুষ ওড়াকান্দি

৫৯) পাষাণ মন মনুরা লয় না পড়া

৮১) এর কলির শেষে পাগল বশে

৬০) মজিলি কেন বৃথা রঙ্গে

৮২) আমার মন পাখিতে বুঝ মানে না উপায়

৬১) প্রেম কাননে চলে যারে মন

৮৩) শ্রী হরির ঐ কৃপা বৃক্ষে

৬২) শ্রী গুরুর চরণ

৮৪) মন পাখি তুই হরি বলে বাহু তুলে ডাক

৬৩) হরি প্রেম ঢেউ উঠেছে যার

৮৫) দয়া ক'রে বলো সাধু ভাই

৬৪) শ্রী হরির কৃপা সাগরে আমার

৮৬) কত গুনে এ ঘর খানি গড়েছিল কোন

৬৫) মন ভ্রমর শুন বলি তোরে

৮৭) তুই করলি না তোর দেহের নিরূপণ

৬৬) ঘুচবে তোর ভব যন্ত্রনা

৮৮) রিপুর পিরনে

৮৯) তত্ত্ব বলব কিরে তায়

১১১)  কি গান গাব কেবা শুনে

৯০) আমার দেহখানি গুণমণি

১১২) কেন প্রশ্নয়ালা গানে শুধু লোক মজায়ছ

৯১) অনিবার্য্যে দেহ রাজ্যের

১১৩) হয় না কথায় কাবু মাস্টার বাবু

৯২) আর কত বুঝাবো তোরে বল দেখি

১১৪) কর্মে করিস নারে ভুল

৯৩) এবার চিনে লও গে তারে

১১৫) হরি বল মন দূরে যাবে কাল শমন

৯৪) গুরু তত্ত্ব না জানিয়ে

১১৬) হরি জীবের জন্য অবতীর্ণ সফলা গ্রামে

৯৫) ঘর কে গড়িল কোথা রল তালাস করলি

১১৭) সাধন এক ভাবে চলেনা

৯৬) হরি গুনমণি গড়ে তিনি দেহ রাজ্য

১১৮) হিন্দু আর মুসলমান

৯৭) সাধু বৈলে দাও মোরে

১১৯) এবার মৃত্যু কাছে এলো

৯৮) আমি বলবো কিরে আর

১২০) তবু হরি নাম করে না

৯৯) হরি প্রথম পূর্ণ মুলাধার

১২১) আমার মনের আগুন নিভাইব গো

১০০) প্রথম হরি পরম ব্রহ্ম জ্যোতির্ম্ময়

১২২) সখি নিল কেন আমার মন প্রাণ

১০১) এমন প্রশ্ন কোথা পেলে ভাই

১২৩) আমার কর্ম দোষে হলেম দোষী রে

১০২) শুনে বলিরে মন

১২৪) আমি উপায় কি করিব রে

১০৩) সাধন করবি কি তুই ম'লে

১২৫) ভাবি অন্তরে

১০৪) প্রেমিক কবি ধর চিনে

১২৬) বন্যার তরঙ্গে মরি আতঙ্কে

১০৫) গুরু জেনে কেন ধরানা

১২৭) হৃদয় আলোকে মনের পুলকে

১০৬) চিনিয়ে সদ গুরুকে ধর

১২৮) আমায় ছাড়িল বহুদিন ধরে

১০৭) এবার বেদ বিধি দাও ছেড়ে

১২৯) আমায় ফাঁকি দিয়ে এই করিল

১০৮) ক্রোধের বাধ্য থেক নারে ভাই

১৩০) গুরু তোমার জন্য এই অরণ্যে

১০৯) জগৎকে প্রেম কর এবার

১৩১) আমার প্রাণ নিয়েছে প্রাণ বল্লভে

১১০) আমি দুঃখে বাঁচিনা

১৩২) যে জন ভাব সাগরে ঝাঁপ দিয়েছে

১৩৩) আমার প্রাণ ঘৃত আহুতি দিলেম

১৫১) ওহে অন্তর্যামী দেখা দাও হে তুমি

১৩৪) আমার হৃদয় কানন হে গুরুধন

১৫২) এ বিপদে ওই শ্রীপদে কর্মদোষে না

১৩৫) দয়াল হরিচাঁদ তুমি আমায়

১৫৩) অপরূপে দেখা দিল

১৩৬) হরিচাদের যুগল মূরতি

১৫৪) গুরুপদে ভক্তি নাই যার

১৩৭) আমি বলব কিরে ভাই

১৫৫) মন তুই যে মানুষের সঙ্গ নিবি যেতে

১৩৮) মরি নিজের ব্যবহারে

১৫৬) মনে আমার যত দুঃখ

১৩৯) স্বামী হল মেয়ের ভগবান

১৫৭) শান্তি হরি যুগল মিলন

১৪০) দুঃখ হয়ে যার কর্ম ফেরে

১৫৮) ভজ পতীত উদ্ধারণ দয়াল শ্রীহরি

১৪১) যে জন সতী নারী হয় পতির পদে

১৫৯) আশ্চর্য এক ঘটনা শুনো দিয়া মন

১৪২) শুন বলি কুল বালা গন

১৬০) তুইতো প্রেমের গুরু

১৪৩) সবে পতি কর সার

১৬১) ক্রমে ক্রমে প্রভু নাম জগতে প্রকাশ

১৪৪) যেন মম নেত্র কোন

 

১৪৫) হস্তপদ বন্দী করে দরবারেতে নিয়া

 

১৪৬) মন মাঝি বলি তোমারে

 

১৪৭) চিতার থেকে চিন্তা ভারীরে

 

১৪৮) দয়াল গুরু হে আমার দরদী নাই তুমি

 

১৪৯) গুরু এই কি ছিল কপালে

 

১৫০) কি সাজ সাজে সাগর মাঝে পাঠাইলে গুরুচাঁদ

 



সন্ধ্যা আরতি

১নং গান,  তাল - একতাফা, রাগিনী - শানিরা

ডুবল দিনমণি এল রজনী

দিবা অবসানে সন্ধ্যায় কর, হরিনামের ধ্বনি।


১) ও তাঁর নামের বলে, পাষাণ গলেরে, উজান বহে তরঙ্গিণী।।

শ্রীহরির চরণ আমি, করজোরে বন্দি,

জন্ম সফলা নগরী, বসত করে ওড়াকান্দী।

ও তাঁর রূপে জগৎ আলো করে রে’ অন্নপূর্ণা তার জননী।।


২) আমি কৃষ্ণদাসের চরণ বন্দি, বন্দি বৈষ্ণব দাসের পায়,

গৌরিদাস স্বরূপদাস বন্দি, বন্দি কাতর হৃদয়।

দয়াল গুরুচাঁদের চরণ বন্দিরে, বন্দি সত্যভামার শিরোমণি।

শ্রী শশী সুধন্য চাঁদের, বন্দি শ্রীচরণে উপেন্দ্র, সুরেন্দ্র বন্দি, বন্দি অতি যতনে।।


৩) আমি বন্দি কায়মনে, শ্রীপতির চরণে, বন্দি মঞ্জুলিকার পা দু’খানি।।

বিশ্বনাথের চরণ বন্দি, বন্দি ব্রজনাথের পাও,

ব্রজনাটুর চরণ বন্দি, আমায় ঐ চরণে নেও।

আমি মাতা পিতার চরণ মন্দিরে, হয়ে আমি দীন দুঃখিনী।।

 

৪) তার পরে বন্দনা করি, দশরথ গোস্বামী,

মৃত্যুঞ্জয়ের চরণ বন্দি যাহার, ভক্তি বাধ্য অন্তর্য্যামী।

আমি বদন গোসাইর চরণ’ বন্দিরে, হরিনাম বিনে নাই অন্য বাণী।।


৫) গোলক চাঁদের চরণ বন্দি, বন্দি হীরামণের পায়,

লোচন গোসাইর চরণ বন্দি, বন্দি শ্রীহরির দয়ায়।

গোসাই তারক চাঁদের চরণ বন্দিরে, হরি লীলামৃত লিখিলেন যিনি।।


৬) আমি তা’পরে বন্দনা করি, হরি গোসাইর শ্রীচরণ,

জীবন অন্তকালে যেন, করি ঐ রূপ দরশন।

মাতা হরিদাসীর চরণ বন্দইরএ, হরি গোসাই যার হৃদয় মণি।।


৭) আমি এই সকল গোসাইর চরণে, করি যে মিনতি,

ভক্তি শূণ্য দীন দৈন্য, আমার কি হবে গতি।

অধম দীন দৈন্য, হৃদয় মাঝে সদায়, হরি হেরি যেন মুরতি খানি।।

 

সরস্বতীর স্তুতি

২নং গান, তাল-একতাফা, রাগিনী-ঝিঝিমারী

মম কঠিন হৃদে মাগো হও অবস্থান।

হও অবস্থান হও অবস্থান।।

১। হরি গোসাইয়ের দয়াগুনে, মাগিতেছি কায়মনে মা।

শ্রীহরি মা শান্তি দেবীর, বন্দী যুগল চরণ।।

২। গুরুচাঁদের কৃপা ডুরি, গলে দেও দয়ার মাধুরী মা।

এ অধমের সর্ব্ববাঞ্ছা করগো মা পূরণ।

৩। করি পদে এই মিনতি, এস কণ্ঠে সরস্বতী মা।

আমার নাহি শক্তি’ ভাব ভক্তি, নাহি আর্থীধন।।

৪। প্রথমে বন্দিলেম চরণ, পটরে বন্দী রূপের কিরণ মা।

(তব) রূপে গুনে ছড়াইল, এ তিন ভুবন।।

৫। পদযুগে সোনার নুপুর, বাদ্য হয় তার রুন ঝুনু মা।

রক্তজবা পদে দিয়ে করিয়াছ সাজন।

৬। জলপদ্ম রয় বাহু যুগে, মুক্তামালা গলে সাজে মা।

গজমতি হার গলে চূড়া শিরে ধারণ।।

৭। শ্বেতমাতা সরস্বতী, তব পদে করি স্তুতি মা।

তুমি বাগদেবী  কণ্ঠেশ্বরী, ভুতলে মান্যবান।।

৮। কৃপাকর কৃপাময়ী, সে কৃপাতে ধন্য হই মা।

তুমি বীনাপাণি কণ্ঠধ্বনি, যোগাও মধুর বলি মা।

জগতে মা সে বোল আমার হয় যেন অখন্ডন।।

১০। জগৎ জোড়া নামটি তোমার চরণেতে দিয়েছি ভর মা

এই দীন হীন সন্তানে দেখ, দিয়ে দুটো নয়ন।।

১১। এই ভিক্ষা মা তব পদে, দয়া ধূলি দেও মোর হৃদে মা।

অধম দীনবন্ধুর সর্ব্ব কর্ম্মে রাখিও মা স্মরণ।।


আসর

৩নং গান তাল- কাহারবা, রাগিনী জয় জিয়া লই

হরি এস আসরে, বসিবার আসন রেখেছি হৃদয় মন্দিরে।

হরি হৃদ আসনের মালিক তুমি, এস যুগল রূপ ধরে।।

১। সাদা আসন মন ফুলে, সাজায়ে রেখেছি, তুমি আসরে আসিলে আনন্দে নাচি।

আসরে হয়ে উদয়, আনন্দময়, আনন্দে রাখ মোরে।।

২। ভক্তের বাঞ্ছা পূর্ণকর, যশবন্তের নন্দন, শান্তি মায়ে সঙ্গে লয়ে, কর আগমন।

তুমি ক্ষীরোদের ধন মধুসূদন শ্রীচরণ, দেও আমারে।।

৩। পতিত পাবন নামটি তুমি করেছ ধারণ, হৃদয় আসরেতে হরি কর পদার্পন।

তুমি আসরে আসিবে বলে বসেছি আশা করে।।

৪। (অধম) দীনবন্ধুর মন বাঞ্ছা, রয়েছে ভারি, ফুল চন্দন তুলসী পদে, দিব বিরাগ ভরি।

হরি গোঁসাইর দয়ায়, বাঞ্ছা হৃদয়, অঞ্জলি দিব তোমারে।।


৪নং গান, ছত্রিশ নামাবলী

রাগিনী-জয় জিয়া লই

হরি বিপদ ভঞ্জন শ্যাম গুনমনি।

জয় জগৎপতি হরিচাঁদ জয় জয়।।

যার নামে রূপে দীপ্ত হল বিশ্বময়।

জয় শ্রীকৃষ্ণ দাস জয় বৈষ্ণব দাস।

জয় গৌরিদাস পূর্ণ কর অভিলাষ।।

জয় শ্রীস্বরূপ চন্দ্র জয় পঞ্চভ্রাতা।

যশবন্ত অন্নপূর্ণা হয় পিতা মাতা।।

জয় জয় গুরুচাঁদ শ্রীশশী সুধন্য।

আকুল পরানে মাগি উপেন্দ্র সুরেন্দ্র।।

অন্নপূর্ণা শান্তিদেবী জয় সত্যভামা।

সর্ব্ব জন্মের অপরাধ মোরে কর ক্ষমা।।

জয় ভগবতী ঠাকুরের জয় জয়।

ভিক্ষা দাও পদে মতি সদা যেন রয়।।

শ্রীপতি ঠাকুর মাতা মঞ্জুলিকা জয়।

জম্মে জন্মে কৃপা দৃষ্টি দিও হে আমায়।।

প্রমথ সম্মথ দয়া কর নিজ গুনে।

শান্তি হরি দেখা দেও হৃদি কুঞ্জবনে।।

জয় জয় মাতা পিতার চরণে প্রণাম।

কৃপা করি ঘুচাইও সর্ব্ব মনস্কাম।।

জয় শ্রীগোলক চন্দ্র জয় শ্রীবদন।

দশরথ মৃত্যুঞ্জয় ভক্ত প্রাণ ধন।।

জয় শ্রী তারক চন্দ্র জয় চিন্তামনি।

মম হৃদে দেও সদা ভাব তরঙ্গিনী।।

জয় জয় হীরামন জয় শ্রীলোচন।

ওড়াকান্দী লীলা ধন্য যাদের কারণ।।

জয় নাটু জয় ব্রজ বিশ্বনাথ জয়।

জয় মহানন্দ সর্ব্ব হরিভক্তের জয়।।

জয় শ্রীহরি গোসাই হরিদাসী জয়।

কলুষিত দেহ রাখ যুগল ছায়ায়।।

এ নামাবলী যে জন নিশী ভোরে লবে।

সারাদিন কুশলে যাবে অন্তে মুক্তি পাবে।।

হরি হরি বল মন চৈতন্য হইয়া।

দেখ হিসাবের দিন আসিছে এগুয়া।।

দীনা বলে পদতলে দাও হরি ঠাঁই।

তুমি বিনে ত্রিভুবনে মোর কেহ নাই।।

 

প্রভাতী

৫নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-করুণমারী

জয় জয় শান্তি হরিচাঁন

নিশী প্রভাতকালে বল শান্তি হরিচাঁন।

পুলক অন্তরে, নিশী ভোরে, নামে হও গমন।।

১। যত আছে জগতবাসী, শুন দিয়া মন।

বিভা ভোর হল হরি বল, আপন ভবন।।

২। মল্লকান্দী গিয়ে হরি, ভক্ত রঞ্জন।

মত্ত হয়ে সদা করে, হরি ভক্ত রঞ্জন।

মত্ত হয়ে সদা করে, হরি নাম কীর্ত্তণ।।

৩। প্রেমে অঙ্গ পুলকিত, নরনারীগণ।

দু নয়নে প্রেম ধারা, বহে সর্বক্ষণ।।

৪। চৈতন্য হয়ে সবে, ভাবে মনে মন।

কেহ বলে প্রভুসেবার, কর আয়োজন।

৫। শ্রীহরির স্নান লাগি, হইল মনন।

কুন্তু কাখে মনসুখে; সতীর আগমন।।

৬। কাশীশ্বরী সতী, আরও সঙ্গে যত জন।

পিছে পিছে চলে যায় মুখে গুনগান।।

৭। কাশীশ্বরী অতি ভারি, হরি পরায়ণ।

জল ভরিতে গিয়ে করে, ঐ রূপ দরর্শন।।

৮। কলসী ভরিতে সবে, করিল গমন।

গেলেন চলিয়া যথা, যশবন্তের নন্দন।।

৯। আসন পাতি কাশী সতী, বসায় হরিচাঁন।

হরির অঙ্গে তৈল মাখি, করাইল স্নান।।

১০। জানকী মন ফুলেতে, সাজায় হরিধন।

হৃদয় মন্দিরে ঐ রূপ, করিয়ে স্থাপন।।

১১। (এই) নিশী প্রভাত কালে ঘুমে, থেকনা কখন।

চৈতন্য হইয়ে কর, নামের মধু পান।।

১২। হরি গোসাই হরিদাসীর, পদে রেখ মন।

নাম গুন গেয়ে করগে দীনা, পাপ বিমোচন।।

 

৬নং গান, চৌত্রিশ পদবলী

হরি ভজলেম না তোমায় আমি, জন্মিয়া ধরায়।

ক = করুণ ক্রন্দনে হরি ডেকেছি তোমারে।

খ = খালাস করহ, বড় জ্বালা মা উদরে।।

গ = গর্ভেতে পঞ্চম মাসে থেকে অগ্নিকুন্ডে।

ঘ = ঘোরতর এভাবে ডাকিনু হেট মুন্ডে।।

ঙ = উদ্ধার করিতে জ্বালা, এলে দয়াময়।

চ = চিরদিন ডাকিব, বলেছি সে সময়।।

ছ = ছদ্মবেশে একবার নিলে সপ্ত মাসে।

জ = জন্মিয়া ওয়ানা বলি ভুলে রঙ্গরসে।।

ঝ = ঝলমল পূর্ণ শশী দয়ার সাগর।

ঞ = একান্বর রূপরাশী ভুলেছি এবার।।

ট = টলমল রঙ্গরসে দেখি এ ব্রহ্মান্ড।

ঠ = ঠেকে মহামায়ার হাতে সত্য করি পন্ড।।

ড = ডুবিয়া রয়েছি আমি ভবকূপ নীরে।

ঢ = ঢলিয়া পরেছি ভব সংসার সাগরে।।

ণ = নবরঙ্গ মঞ্চ মাঝে ভাসিয়ে বেড়াই।

ত = তরাইতে তরী নিয়ে এস হে গোঁসাই ।।

থ = স্থাবর জঙ্গমে তুমি সর্ব্বময় হরি।

দ = দয়া যদি হয় দয়া, কর দয়া করি।।

ধ = ধরাধামে সবেরে করহ্ তুমি দয়া।

ন = নহে দয়ার যোগ্য আমি নাহি সাজে দয়া।।

প = পবিত্র চরিত্র যেন, জন্মাবধি রাখি।

ফ = ফিরে না এ আঁখি যেন তব রূপে রাখি।।

ব = বশীভূত থাকি যেন তব রূপ সনে।

ভ = ভজন সাধন যাতে করি প্রাণপনে।।

ম = মনবাঞ্ছা পূর্ণ কর শ্রীমধুসুদন।

য = যনমে তোমার নাম না ভুলি কখন।।

র = রয়-তে রজনী গতে রবি হৃদাকাশে।

ল = লয়-তে রাধিকা শক্তি বসিয়াছে কাছে।।

ব = বয়-তে বসন্তকালে বসুমতি হাসি।

শ = শয়-তে শরৎকাল দাড়াইল আসি।।

ষ = ষয়-তে সুমতি হয় যাহার সহায়।

স = সয়-তে সরল হয় তাহার হৃদয়।।

হ = হয়-তে হরিনাম সে করে দিবারাতি।

ক্ষ = ক্ষীরোদে বিহারী এসে হয় তার সাথী।।

দীনাবলে পদতলে রাখো হরি মোরে।

পূনঃ পাঠাইও না হরি মায়ার সংসারে।।

তব পদ পাশে যেন থাকি দিবা রাতি।

দাস করি রাখ পদে হেরিব মূরতী।।

চৌত্রিশ পদাবলি সমাপন হ'ইল।

প্রেমে ভাসি জগৎবাসি হরি হরি বল।।

 

ভোর গোষ্ঠ

৭নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - হেলারী

উঠরে যশবন্ত লালা, গগনে হয়েছে বেলা।

ঐ দেখ, যত আছে ধেনু বৎস, কেঁদে কেঁদে হয় উতলা।।

১। তুই আয়রে ভাই প্রাণের হরি, আর তো সহে না দেরি, রত্নডাঙায় করব গোষ্ঠ লীলা।

এবার তোকে নিয়ে, গোষ্ঠে গিয়ে, মিলাইব প্রেমের মেলা।।

২। তোকে নিয়ে গোষ্ঠে যাব, রাখালরাজা সাজাইব, মনবাঞ্ছা পুরাব এ বেলা।

তোকে না হেরিলে একই বেলা, গোষ্ঠে যেতে ঘটে জ্বালা।।

৩। গোষ্ঠে ধেনু লয়ে কর খেলা, আজ কেন হল বেলা, গোষ্ঠ খেলার মনে কেন নাই।

হরি গোষ্ঠে চল বেলা হল, গলে দিব ফুলের মালা।।

৪। হরি গোঁসাইর শ্রীচরণে, বাঞ্ছা করি মন প্রাণে, ঐরূপ যেন হেরি দু'নয়নে।

বোকা দীনবন্ধু কয়, রত্নডাঙায়, রূপ দেখায়ে মন, কর ভোলা।।

 


ফিরা গোষ্ঠ

৮নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - হেলারী

বেলা গেল হরি ঘরে চল, আর কত খেলিবি খেলা।

রত্নডাঙার বিলে সব রাখালে, করে ছিলে কতই লীলা।।

১। শুন হরি শুন মনি, অন্নপূর্ণ মাতা যিনি, কাঁদে সদা হরিচাঁদ বলিয়া।

হরি ঘরে চল যাই, খেলায় কার্য্য নাই, চেয়ে দেখ গেল বেলা।।

২। (মায়ের) নয়ন জলে বয়ান ভাসে, যারে দেখে আপন পাশে, ডেকে বলে আয় হরি কোলে।

মায়ের নাই কোন ঠিক, হয়ে বিদিক, দিক হারায়ে হয় চঞ্চলা।।

৩। (তোমায়) না হেরিলে গুণমনি, মা হয় যেন পাগলিনী, সাঙ্গ কর এবে গোষ্ঠ খেলা।

ধেনু বৎস যত একত্রিত, করে চল থাকতে বেলা।।

৪। (অধম) দীনবন্ধুর বিনয় বচন, হরি গোঁসাইর ঐ শ্রীচরণ হয় যেন মোর ভবপারের ভেলা।

হৃদি বৃন্দাবনে করুনাদানে, দিও শ্রীচরণ ধূলা।।


৯নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - দ্রুতারঙ্গ

হরিচাঁদের অপার কীর্ত্তি বুঝিতে না পারি।

১। নামে মৃতদেহে জীবন পায়, অন্ধ নয়ন দূরে যায়, প্রেমানন্দে বলে হরি হরি।

নামে বোবায় ধরেছে তান, মধুর হরি গুণ গান, পাপী তাপী যেতেছে সব তরি।।

২। আছে কাঁঠালিয়ার হরি গোসাই, তার কীর্ত্তির অন্ত নাই, চাঁদেশ্বরে পাঠায় গুরুচাঁদ।

কত বাঘ সম্মুখে আয়, নামের গুনে সব পালায়, গোসাই বদনে বলে হরি।

৩। আছে আরও কত কীর্ত্তি তার, বিবাহের পর, ঘুমে ছিল শ্বশুরের ঘরে।

ও তাঁর পরীক্ষার জন্য হরি, জাতি সর্প দিলেন ছাড়ি, বাহুতে পেচায়ে থাকে ধরি।।

৪। গোসাই সজাগ হয়ে বসিয়া, সর্ব হস্তে দেখিয়া, ঝাঁকি দিয়ে ফেলাল সম্মুখে।

সর্ব ফনা ধরে চেয়ে রলে, গোসাই বলে যাও চলে, তাহা শুনে সাপ যায় ত্বরা করি।।

৫। গোঁসাই জালিয়ার টেকেতে যায়, কত কীর্ত্তি সেখানে রয়, সেই কীর্ত্তি বলিতে না পারি।

অধম দীনবন্ধু কয়, পরে রব রাঙা পায়, যাহা করে দয়াল শ্রীহরি।।


লোক শিক্ষা

১০নং গান, তাল –ঠুংরী, রাগিনী - দেবগিরি

গুরুবলে প্রাণে কাঁদে না কি করি উপায়।

মরলেম রিপুর বসে রঙ্গরসে, দমন কর রিপু সমুদয়।।

১। অন্তরালে থাক তুমি, সদা লুকায়ে, ডাকলে পরে হওনা চেতন, থাক ঘুমায়ে।

গুরু কি নাম ধরে ডাকলে পরে, চেতন হয়ে হইবা সদয়।।

২। কি নাম ধরে ডাকব আমি, নামটি না জানি, কোন নামেতে হবা চেতন, বল সে বাণী।

তোমার না জানিলেম স্তুতি বাণী, কুবাণীতে মত্ত রই সদায়।।

৩। দয়াময় নামটি শুনি, এ বিশ্বমাঝার, ব্যাক্ত রলে ভূমন্ডলে, যতই চরাচর।

তোমার নামের জোরে, পাপী তরে, আমায় কেন হইলা নিদয়।।

৪। আর কোন ধন, হে গুরুধন, আমি নাহি চাই,

দেহ অন্তিমকালে, চরণ তলে আমায় দিও ঠাঁই।

গুরু তুমি বিনে দীনহীনে, কে ঘুচাবে ভব পারের ভয়।।

৫। দীনা বলে রিপুর ছলে, হলেম ভজন হীন, কুকর্ম্মেতে অসার চিন্তে, গেল রাত্রিদিন।

দয়াল হরি গোঁসাই, এই ভিক্ষা চাই, অন্তে যেন থাকি রাতুল পায়।।

 

লোক শিক্ষা

১১নং গান, তাল – ঠুংরী, রাগিনী – মঞ্জরাসাই

তুমি সদয় হইলা জীবের প্রতি হরি দয়াময়।

আমি ঘোর পাতকী, উদ্ধারের বাকী, হরি আর কতদিন রয়।।

১। বড় বিপুল ভরসায়, হরি ডাকি হে তোমায়,

শুনিয়ে কেন তাই শুননা ওহে দয়াময়।

তুমি অর্ন্তয্যামী জগৎস্বামী, কেন আমায় হইলা নিদয়।।

২। তুমি তরাবে বলে, হরি জগতে এলে

আমি অধম ঘোর পাতকী এ ভুমন্ডলে।

(দেও) দুঃখ যত অবিরত অপরাধ ঘুচে যেন যায়।।

৩। তব পদে প্রণিপাত সর্ব্ব জম্মের অপরাধ,

ঘুচাও হরি এই জম্মেতে, রয়না যেন পাপ।

আমি অপরাধী দুঃখের ভাগী, দুঃখ মোচন কর সমুদয়।।

৪। অধম দীনা ভেবে কয়, আমি ঠেকে রলেম দায়,

সব অপরাধ ঘুচাইয়ে নেও হরি গোঁসাইর পায়।

তুমি পার কান্ডারী দয়াল হরি, ঘুচাও ভবপারের ভয়।।


১২নং গান, তাল - কাহারবা, রাগিনী - ভাটিয়ালী

গুরু আমার প্রতি নিদয়া কেনে।

আমার প্রতি তোমার দয়া, কবে হবে ভাবি মনে।।

১। তুমি আত্মা অন্তর্য্যামী, শান্তি মায়ের শিরমনি রেশম সুন্দর।

আমি তব দয়ায় হে দয়াময়, মিনতি করি তব চরণে।।।

২। শুনি তব দয়ার নাই তুলনা, আমার ভাগ্যে কেন হল না, ওহে দয়াময়।

দিয়ে পদ ছাড়য়া কর দয়া, অন্তিমে হেরি যেন নয়নে।।

৩। গুরুচাঁদের দয়া বলে, হরি গোঁসাইর  তরুতলে, থাকি যেন সদায়।

দীনার এই বাঞ্ছা হৃদয়, অন্য বাঞ্ছা নাই মনে।।

 

১৩নং গান, তাল - একতাফা, রাগিনী - উরয়ালী

আমি পড়েছি অকুল পাথারে এখন উপায় কি করি।

আমার কর্ম্ম দোষে ব খোয়ালেম, না পেলে চরণ তরী।।

১। পাপেতে ভরেছি ভরা, পাই না আমি কুল কিনারা, নদীর তরঙ্গ ভারী।

তাতে কু-পবনের হাওয়া লেগে, উথলে তুফান ভারি।।

২। একে আমার জীর্ণ তরী, কু-পবনের প্রবল ভারি, আমি উপায় কি করি।

আর ছয়জন দাঁড়ি, যুক্তি করি, ঘোলার দিকে নেয় তরী।।

৩। হাইল ধরিয়ে আছি বসে, নদীর কিনার পাবার আছে, হাইলে মানেনা বারি।

দয়াল গুরুচাঁদ মোর, কর উপায়, সে যে ভব কান্ডারী।।

৪। দীনা বলে হরি গোঁসাই, রক্ষার মালিক আর কেহ নাই, ডুবল এ মানব তরী।

তুমি এ বিপদে, কর দয়া, নহে ডুবিয়া মরি।

 

১৪নং গান, তাল - কাওয়ালী, রাগিনী - শিন্দারাহা

গুরুর প্রতি না হলে মতি, কেমনে যাবি হরি ধাম।

যদি হতো মতি গুরুর প্রতি, তবে তোর পুরে যেত মনষ্কাম।।

১। যদি করতে পার গুরুর করণ, পাবি হরির যুগল চরণ।

ছয় রিপু করিয়ে দমন, মনে প্রাণে জপ নাম।।

২। গুরুর করণ ভারি কড়া, করলে জিয়ন্তে হয় মরা।

তা হরে দেয় সে ধরা, সেই শ্রীহরি মনোরম।।

৩। যে জন প্রেম নগরে যেতে পারে, কাম গন্ধ তার রইতে নারে

তার প্রেমের অঙ্কুর বেড়ে পড়ে, প্রেমানন্দে করে আরাম।।

৪। কর গুরুচাঁদের করণ, ধরে হরি গোঁসাইর চরণ।

দীনবন্ধুর কর্ম্ম বন্ধন, কাটলে মিলবে শান্তি শ্যাম।।


১৫নং গান, তাল - কাওয়ালী, রাগিনী - করুনভান্ডার

তোমরা বৈলরে -  বৈল হরির কাছে রে।

বৈল তোমার একটি পাপী আছে রে, হারে আছে এ জগৎ মাঝারে রে।।

১। এ পাপীর কি গতি হবে, বল দয়া করি, পাপে পরিপূর্ণ হল, পাপে হল ভারি।

আমি এ পাপ লয়ে, কোথায় যাব রে, হারে আমি বুঝিতে না পারিবে।।

২। মোর বান্ধব নাই কোন দেশে, কার কাছেতে বলি বলতে আমি যার কাচে যাই, সে দেয় মনে কালি।

আমি কোথায় গিয়ে প্রাণ জুড়াব রে, হারে আমি না পাই সুখের ডালিরে।।

৩। বটবৃক্ষের তলে গেলাম, ছায়া পাবার আশে, পত্র ছেড়ে রৌদ্র লাগে, আপন কর্ম্ম দোষে।

আমি, শান্তির আশে যাই যে দেশে রে, হারে আমার দ্বিগুন হয় অশান্তিরে।।

৪। দীনা বলে কবে আমি, যাব ওড়াকান্দী, দুনয়ন জুড়াবো হেরে, হরি গুণ নিধি

সদা ঐ রূপ দেখবো প্রাণ জুড়াবো রে, হারে তবে ঘুচবে আশা নদীরে।।


১৬নং গান, তাল - একতাফা, রাগিনী -  উরয়ালী

তোরা কে কে যাবি, ওড়াকান্দী ত্বরায় চলে আয়রে আয়

দেখবি যাওয়া মাত্র দেহ পাত্র অনায়াসে গলে যায়।।

১। ওড়াকান্দী দেখে কান্ড, মনেতে লেগেছে ধন্দ মরি হায়রে।

জীবের ঘুচল সন্দ, কর্ম্ম বন্ধন, আর কি জীবের আছে ভয়।।

২। হরি এল ওড়াকান্দী যশবন্ত রাখলেন বাঁধি, আয় কে দেখবি আয়।

ও তার রূপে হল, জগৎ আলো, দেখলে তাপিত প্রাণ জুড়ায়।।

৩। রূপ হেরিয়ে যোগী ঋষি, সন্ধ্যা আহ্নিক ত্যাজে বসি আছে সর্বদায়।

তারা তন্ত্র মন্ত্র, ছেড়ে দিয়ে হরি নামে মত্ত হয়।।

৪। সেই রূপ রসে হরি গোঁসাই, দিবা নিশি মগ্ন সদাই হরি নাম গুন গায়।

বোকা দীনবন্ধু কয়, ঐ রূপের ঘায় মোর প্রাণ যেন গলে যায়।।


১৭নং গান, তাল -  ঠুংরি, রাগীনি - কেলেংরাণী

দয়াল হরি হে – আমি ডাকি অসীম কাতরে।

হরি মনোবাঞ্ছা কর পূরণ, এই আকিঞ্চন মোর অন্তরে।।

১। এই বাসনা মনে ভারি, তোমায় যেন ডাকতে পারি।

আমায় জম্মে জন্মে কৃপা করি, রেখ কৃপা সাগরে।।

যা ইচ্ছা তাই কর হরি, তাতে চিন্তা নাহি করি।

আমার কাটে যেন মায়া বেড়ী, পাপ ঘুচায়ে নেও আমারে।

৩। দুঃখ যত অবিরত, দেও হে দুঃখ, মনের মত।

(তোমার) চরণ সেবার যোগ্য মত, করে রেখ আমারে।।

৪। তুমি যে পাতকীর বন্ধু, তরাও আমায় ভবসিন্ধু।

দেহ অন্তিম কালে কৃপাসিন্ধু, চরণে স্থান দেও আমারে।।

৫। অধম দীনার এই আকিঞ্চন, কুকর্ম্মে হয়েছি পতন।

হরি কর আমার পাপ বিমোচন, শ্রীচরণ দেও হৃদ মাঝারে।।

 

১৮নং গান, তাল - গড়খেমটা, রাগীনি – আনারা

এল কলির শেসে জীব তরাতে, ওড়াকান্দী হরিচাঁদ আমার।

তোরা এই মধুর নাম নিলে পরে, অনায়াসে হয়ে যাবি পাড়।।

১। দুঃখী তাপি উদ্ধারিতে, এল হরি এ জগতে, 

ডাকার মত না ডাকিলে, দয়া হবে না।

অকুলে ভবকান্ডারী, ডাকিলে, দয়া হবে না।

অকুলে ভবকান্ডারী, ডাকলে পাবি পদতরি,

সবার বিপদ মোচনকারী, ভব নদী করে নেয় পাড়।।

২। বেলা থাকতে ধর পাড়ি, বদনে বলিয়ে হরি, 

অনায়াসে উঠবে পারি, ভয় রবে না আর।

এ দুঃখ ভব সাগরে, যদি ডাকতে পার তারে,

দয়াল মাঝি হলে রাজি, পার করতে বিলম্ব নাই তার।।

৩। আপনি সাজায়ে তরী, হরিচাঁদ কর কান্ডারি,

সাধু মহাজন বহর ধরি, প্রেমতারে লাগাইও ডুরি,

অনুরাগের দাড় মারি, ভবনদীর ধর কিনার।।

৪। দয়াল হরি গোঁসাই বলে, দীনারে তুই এই সকালে,

সারি গেয়ে হরি বলে, হয়ে যাবে পার।

ভবনদীর তুফান ভারি, উচ্চ স্বরে বল হরি,

তবে পারে যাবি ত্বরা করি, হরিনাম ভুলনারে আর।।


১৯নং গান, তাল –ঠুংরি, রাগিনী - ফকিরী ধাওয়া

আমি ঘুরে বেড়াই দেশ বিদেশে কোথায় গিয়ে হরিচাঁদ পাবরে।

আমি হরির আশে, দেশ বিদেশে, সদা বেড়াই ঘুরে ঘুরে।।

১। হরি আমার প্রাণের বড়ি, না দেখিলে জ্বলে মরি।

আমি কেমন করে, ধৈর্য্য ধরি, দিন রজনী প্রাণ পোড়ে।।

২। থাকে হরি যেই দেশে, যাব বলে সেই দেশে।

আমার যাওর্য়া হয় না, কর্ম্মদোষে, কুমতি রাখে ঘিরে।।

৩। বের হব হরিচাঁদ বলে, যা থাকে আমার কপালে।

আমি চরণের দাস, হয়ে রব, যদি দেখা পাই তারে।।

৪। কাতরে কয় দীনা বোকা, দেশবিদেশে ঘুরি একা।

আমি তবু হরি’র পাইনে দেখা, (আমি) উপায় কি করিব রে।।


২০নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-গোপীছোড়া

তোরা আয় কে যাবি হরিচাঁদের প্রেমের বাজারে।

তোরা গেলে পড়ে দেখতে পাবি, কত মাল আছে থরে থরে।

১। সম্পূর্ণ মাল রক্ষা করে, রেখ মালের কোঠা ভরে রে

এবার হুসিয়ার থেক দিবা রাত্রে, মাল যেন নেয়না চোরে।

২। সেই বাজারে আছে চোরা, নিয়ে যায় মাল সব হরিয়া রে।

চোরাবাতি জ্বেলে করে চুরি, জিলা আর মোকাম ধরে।।

৩। সেই মালের উপরথরে, সোর মানুষ বিরাজ করে রে।

ও তার রূপে ভুবন আলো করে, দেখলে জীবের মন হরে।।

৪। বাজারে সেই অটল মানুষ, সদা থাকে প্রেমে বেহুস রে।

ও সে সদা থাকে প্রেমের ঘরে, প্রেমানন্দে বাস করে।।

৫। হরি গোঁসাইর মধুর বচন, বোকা দীনা তোরে কই শুনরে।

যদি পেতে চাও সেই মানুষ রতন, গুরুর চরণ থাক ধরে।।


২১নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-আনারা

কেন ঘুরে বেড়াও অন্ধকারে, বিরাগ ভরে ডাক তারে।

ডাক দিয়ে ভক্তি পাবি মুক্তি, ভক্তি বিনে পায়না তারে।।

১। মুখে বল হরি হরি,  কর জুয়াচুরি,

কেম্নে পাবি সেই শ্রীহরি, কাজেঐ ভাব রসনা।

হও কেন বাক্য ভ্রষ্ট, গুরুর বাক্য কর নষ্ট,

হরি পাওয়া ভারি কষ্ট, নামে রুচি হলনারে।।

২। যদি করতে পার প্রেমভক্তি, হরিপদে হবে আর্থী,

না থাকিলে প্রেমভক্তি, তারে পাবেনা।

চায়না তোদের টাকাকড়ি, চায়না তোমার জমিদারি,

চায় সে শুধু ভক্তি ডুরি, ভক্তি বিনা চায় না কারে।।

৩। যদি দেখ টাকাকড়ি, ঘরেতে সুন্দরী নারী,

সে সব শুধু দিন দুই চারি, চেয়ে দেখনা।

ভেবে দেখ ঐ হৃদমন্দিরে, চোরা আছে সিং দুয়ারে,

সব ধন তোর নিবে হরে, মাল কোঠা ভাঙ্গিয়ে জোরে।।

৪। হরি গোসাই বলে একান্ত দীনারে তুই হসনে ভ্রান্ত,

করিয়ে মন সূক্ষ্ম শান্ত, হরি বলে ডাক।

ঘুচাইলে মনের ময়লা, দূরে যাবে শমন জ্বালা,

ভবপারে যাবার বেলা, কোন কষ্ট হবেনা রে।

 

২২নং গান, তাল- ঝাপ, রাগিনী-ভাটিয়াল

আমার কর্ম্ম দোষে সব খুয়ালেম, না পেলেম সেই অধর ধরা।

আমি যদি করতেম গুরুর করণ, তবে অধর চাঁদের পেতাম ধরা।।

১। কু-সঙ্গিনীর বাতাস লেগে গায়, হা-হুতাশে জীবন গেল, কি করি উপায়।

আমার নাই কোন বল, মনে গরল, চিন্তানলে হলেম সারা।।

২। কু-সঙ্গিনীর কু-চক্রে পড়ে, সারাজীবন গেল আমার দুষ্কর্ম্ম ফেরে।

মরলেম্ অসৎসঙ্গ কু-আচারে, কু-মতি চতুপার্শ ঘেরা।

৩। হরিচাঁদের প্রেমেরই বাতাস, আমার গায়ে লাগলনা, করি সদা পরিহাস।

হলাম অকাল কুষ্মান্ড, সকল পন্ড, ভজন পূজন নাই মোর করা।।

৪। যদি প্রেমের বাতাস এক দিন লাগত গায় তাপিত অঙ্গ গলে যেত, সেই বাতাসের গায়।

দীনার কাতর বাণী, দিন রজনী, হরি জীয়ন্তে দেও আমায় ধরা।।

 

২৩নং গান, তাল লোফা, রাগিনী সিন্ধুনী

গুরু বিপদ কালে রৈলা কোথায়।

আমি মায়া পিশাচি, মায়া দুর কর আসি, নহে এ পিশাচির কি উপায়।।

১। আমার নাই ভক্তি বল, আমার নাই নয়নে জল, নিজদাস বলিয়ে গুরু, ঘুচাও মনের খল।

গুরু তুমি না হলে, গতি নাই ভুমন্ডলে, তোমার শ্রীচরণ দেও মোর হৃদয়।।

২। আমি অতি অভাজন, তোমার না জানি সাধন, দিবানিধি দেখা দেও হে, শ্রীমধূসূদন।

আমার মনের বাসনা, ওহে কেলেসোনা, ভব-জ্বালা যেন ঘুচে যায়।

৩। আমার মনের অভিলাষ, তব পদে হব দাস, নয়ন জলে ধোয়াব চরণ, মনের এই আঁশ।

আমি অতি দীনহীন, পদে রেখ চিরদিন, বসে আছি ঐ চরণ আশায়।।

৪। দয়াল হরি গোসাই, তুমি বিনে গতি নাই, 

আমার মনের বেদনা, গুরু কেন দেখা দেও না,

তুমি আমায় কেন হইলা নিদয়।

 

২৪নং গান, তাল - গড়খেমটা, রাগিনী - ভেরি

হরি লীলা বুঝতে নারে, হরি লীলা বুঝতে নারে।।

দস্যু হয়ে যে জন থাকে, উদ্ধার করে নেয় তাহারে।।

১। যে জন হরিনাম করে সার, দুঃখ যাতনার সীমা নাই তার,

দস্যুকে করে নেয় পার, এইত হরির খেলা।

দুঃখী-জনার দুঃখ বুঝিবে, এমন লক্ষ্য নাই তার,

তারে মনের মত দুঃখ দিয়ে, ভাসায়ে দেয় দুঃখ সাগরে।।

২। (রাজা) হরিশ্চন্দ্র ধার্ম্মিক ছিল, ভার্য্যা পুত্র দান বিকাইল,

রাজ্য ছেড়ে যেতে হল, কত হয় লাঞ্ছনা।

পুত্র মরল সর্পাঘাতে, মায়ের সাক্ষাতে,

দুঃখে শৈব্যা রাণী, কাঁদে তিনি,

(রাজা) হরিশ্চন্দ্র দেখা দেও আমারে।।

৩। নরসিংহ অবতারে, হিরণ্যকশিপুরে,

অষ্ট হস্তে বিনাশ করে, উরুতে রাখিয়ে।

প্রহ্লাদ থাকে করজোড়ে, সম্মুখে দাড়ায়ে,

মুখে হরেকৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, নয়নেতে অশ্রু  ঝরে।।

৪। ধ্রুব প্রহ্লাদ ছিল ভক্ত, দুঃখ দিল অতি শক্ত,

সেই কথা বলিব কত, এ ভীষণ ব্যাপার।

হরি গোসাইর মধুর বাণী, শুনরে দীনা দুরাচার,

তোর দস্যু আত্মা কেটে, অনায়াসে যাবি তৈরে।।


২৫নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - ভজনা

কি ধনে পূজিব গুরু আমার সে ধন নাই রে।

তিনি হবে যে ধনেতে খুশি, সে ধন আমার নাই রে।।

১। গুরু দিল গোল আনা, করলেম না ঐ উপাসনা।

আমার গুরু রতি ঠিক হলনা, জনম বৃথায় গেল রে।।

২। গুরু আমার বলতে আছে যে ধন, দিতে পারলেম না গুরু ধন।

আমায় শিকায়ে লও সে ভাব রতন, পাই শ্রীচরণ কেমন করে।।

৩। বলে বোকা দীনবন্ধু, হরি গোসাইর দয়াবিন্দু।

আমি পেলেম না তার একবিন্দু কি উপায় মোর হবে রে।।


২৬নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - ভাটিয়াল

হরি কবে তোমায় চাবে আমার এ পাপ পরানে।

আমি পাপ অনলে মলেম জ্বলে সারা হলেম্ এ জীবনে।।

১। পেয়ে তোমার শান্তি সুখের ঘর, অন্ধকারে রলেম পড়ে সদা মোর অহঙ্কার।

রলেমত হিংসানলে, তোমায় ভুলে তোমার নামটি, নাই মোর মনে।।

২। আমি হয়ে রলেম মায়ার আবদ্ধ, তোমায় আমি ছেড়ে রলেম, সংসারেরর মধ্য।

কবে সংসার জ্বালা, হবে ত্যাজ্য, কবে রব তোমার ঐ চরণে।।

৩। দিয়ে আমায় ভাব, ভক্তি, জ্ঞান হরি আমার ষড়রিপু, করহে দমন।

আমার এ পাষান মন, কর দলন, (যেন) তোমায় না ভুলি কখনো।।

৪। দীনবন্ধু কাতর প্রাণে কয়, হরি আমায় চরণ তলে, রাখিও সদায়।।

করি মায়ার সংসার, হে শুনধর দেখি অন্ধকার দু’নয়েনে।।

 

২৭নং গান, তাল - ঝাপ, রাগিনী - ভাটিয়াল

তুই ভেবে দেখ ঐ হরি বিনে, বন্ধু নাই আর এ সংসারে।

হরি তোর হইল সর্ব্বস্ব, জীবন যৌবন দে তাহারে।।

১। হরি হইল সর্ব্ব মূলাধার, ব্যক্ত আছে ত্রিসংসারে, যতই চরাচর।

এবার সময় গেল হরি বল, দিন থাকতে নেও বদন ভরে।।

২। আগে মদনের ঘর বাঁধগে এটে, হরি বলে বাহু তুলে, যাও প্রেমের হাটে।

সদা ডাক তারে বিরাগ ভরে, শক্তি দিয়ে ভক্তি ডোরে।।

৩। কাম ক্রোধ লোভ মোহ মদ মাৎসর্য্য, ছয় রিপুকে করলে বাধ্য, হবেরে কার্য্য।

তবে প্রেমানন্দে কাল কাটাবি, থাকবি সদা প্রেমনগরে।।

৪। তুই থাক যেয়ে প্রেমেরি বাজার, প্রেমদাতা হরিকে তুই দেখবি রে এবার।

হরি গোসাই কয় এবার হরি কর সার, দীনবন্ধু বলি তোরে।।

 


২৮নং গান,  তাল - লোফা, রাগিনী - পানতুফাণি

এবার ভাবনা ভাব অন্তরে গুরু বলে।

তবে প্রেমের গুরু কল্পতরু, পাবিরে তুই প্রেম দিলে।।

১। ভক্তি প্রেমের গুরু মধুসূদন, ডাকতে পারলে পায় তার চরণ।

ও সে বসত করে সপ্ত তালায়, সে দ্দিলল পদ্মমূলে।।

২। আছে ষস্ট রথী, পঞ্চ সখা, যুদ্ধস্থলে পায় তার দেখা।

যে জন করতে পারে করণ যুদ্ধ, হরিধামে যায় সে চলে।।

৩। জানে কামদ্রোণ রাজা, ভীষণ যুদ্ধ, শরাঘাতে করে জব্দ।

পারবি না ঠিক থাকিতে কোন মতে, কাম দ্রোনের বাণ ভীষণ চলে।

৪। অর্জ্জুন যেমন ছিল যোদ্ধা, যুদ্ধে পায় দৌপদী সাধ্যা।

তেমনি তার মত হইলে যোদ্ধা, জয়ী হবি সেই রণস্থলে।।

৫। দীনবন্ধু ভ্রান্ত মনে, যুদ্ধ করবি কোন সন্ধ্যানে

(সন্ধান) জেনে হরি গোসাইর স্থানে, যুদ্ধে যাবি তারই বলে।।

 

২৯নং গান, তাল - ঠুংরী, রাগিনী - শিন্দীয়ারা

হরিচাঁদের চরণ ছাড়া কেন আমি হলেম ভাই।

আমি হরি বিনে মনোব্যাথা, কার কাছে যেয়ে জানাই।।

১। আমি কত অপরাধি, পাইনে দেখা গুণনিধি।

সে ভাবনা নিরবধি, কি দিয়ে মোর প্রাণ জুড়াই।।

২। (আমার) পিতার সু-পুত্র হও যারা, ওড়াকান্দী যা ভাই তোরা।

আমি হই ভক্তিহীন কর্ম্ম ছাড়া, কি শুনেতে তারে পাই।।

৩। আমার খবর বলিস তোরা, তারে বিনে গেলাম মারা।

এইবার যেন দেয় সে ধরা, সে বিনে মোর বান্ধব নাই।।

৪। হরি গোসাইর কৃপা জোরে, (রব) হরিচাঁদ কৃপা নগরে।

আমি আর যেন আসি ফিরে, দীনার অন্য আশা নাই।।


৩০নং গান, তাল - একতাফা, রাগিনী - উরয়ালিকা

এ বিপদে কোথায় ওহে হরিচাঁন।

নদীর ঘোলায় পড়ি ডাকি হরি, শ্রীচরণে দেও হে স্থান।।

১। মাল ভরিয়ে দিলেম পাড়ি, কাম নদীর ঐ পাকে পড়ি, বল কি উপায়।

নদীর তরঙ্গ ভারি ডুবে তরী, এ দেহ হয় অবসান।।

২। বিপদে পড়িয়ে ডাকি, বিপদ ভঞ্জন কমল আঁখি, হও সদয়।

তোমার দয়া বিনে এ তুফানে, সারা হল আমার প্রাণ।।

৩। পড়েছি অকুল পাথারে, রক্ষা কর অধমেরে অসময়।

হরি আমি অতি মূঢ় মতি না জানি পারের সন্ধান।।

৪। গুরুচাঁদের কৃপা ডুরি, নৌকায় দিয়ে বন্ধি করি, উঠাও কিনারায়।।

হরি গোসাই করে এই সদুপায়, দীনার রক্ষ দেহ প্রাণ।


৩১নং গান, তাল -  ঝাপ, রাগিনী - ভজনা

হরি এল ওড়াকান্দী, নামে জগৎ মাতালরে।

নামে জগৎ মাতালরে - নামে জগৎ মাতালরে।।

১। নামে প্রেমে বোঝাই করি, ছেড়ে দিল নামের তরী।

তোরা এই নাম নিবি বদন ভরি,, মনেরি পুলকে রে।।

২। ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, বৈশ্য, তাঁতি-সবে এক ভাই একই জাতি।

জাতির গৌরব ছাড়ি বল হরি, নামে যাও মাতিয়ারে।।

৩। ঘুচাও সবে মনের ভ্রান্ত, এই হরি নাম সূক্ষ্মশান্ত।

হল চারি যুগের মহামন্ত্র (হরি) নাম সংকীর্ত্তণ রে।।

৪। (হরি) নামেতে যার ভব-ব্যাধি, পান কর নাম নিরবধি।

ঐ দেখ নাম বিনে এ তিন ভুবনে, বন্ধু কেহ নাই রে।।

৫। নাম বিলায় সেই হরি গোসাঁই, বলে নাম ভিন্ন গতিনাই।

এমন শুভদিন আর পাবিনা তাই, দীনবন্ধু বলি তোরে।।


৩২তাল - ঝাপ, রাগিনী - হেলারি

হরিচাঁদ আমার মনের দুঃখ, মনের রল আশা পূর্ণ হইলনা।

আমার মনের দুঃখ মনে রল, আশা পুর্ণ কেন হল না।।

১। দুঃখে জনম গেল, মনের দুঃখ মনে রল, পেলেম না তব শ্রীচরণ।

অমি যদি পেতেম, হৃদয়ে লইতেম, পুরাইতেম মন বাসনা।।

২। (শুনি) নামে গুনে রাং হয় সোনা, হরি তোমার এই মহিমা, আমার প্রতি কেন দয়া হয়না।

আমার ভব বন্ধন কর খন্ডন, রাতুল চরণ হৃদয়ে দেও না।।

৩। আমার মনে এই আকিঞ্চন, হরি তোমার যুগল চরণ, পুজিব বিরলে বসিয়।

পুজিব অতি যতনে, আকুল প্রাণে, ভক্তি চন্দন দিব বাসনা।।

৪। দীনার মনে এই বারতা, হরি গোসাই ভরসা, তুমি বিনে আর প্রত্যাশা নাই।

গুরু তোমারি করণে, বাঁচি না তাড়নে, বিপদে স্থান কেন পাইনা।।

 

৩৩নং গান, তাল - গড়খেমটা, রাগিনী - বেহুন

আমায় কি বেশে সাজালে হরি

আমায় কি বেশে সাজালে হরি

আমি দেশ বিদেশে ভ্রমণ করি,

করলে আমায় দীন ভিখালী।।

১। আমার মন প্রাণ হল হুতাশী, গৃহ ছেড়ে হই বিদেশী,

বেড়াইতেছি কেউ নাই সাথী, এ তিন ভুবনে।

দুঃখ দিলে মনের মত, আরও দুঃখ দিবে কত।

এখন হওয়াও তোমার অনুগত, চাইনা বিষয় টাকাকড়ি।।

২। হৃদয়ের দেবতা তুমি, তুমি আত্মা অন্তর্যয্যামী,

তুমি জগৎ পিতা স্বামী, আমি কভু জানলেম না

তুমি জনম ভরে পালন করে, রাখলে এই ঘোর সংসারে,

মনের যায়না ময়লা করি হেলা, হৃদয়ে দেও হে প্রেম তোমারি।।

৩। (আমায়) দুঃখ দিলে, পেয়ে কষ্ট, ডাকি তোমায় হয়ে তুষ্ট,

ডাকেতে হয়ে সন্তুষ্ট, সুখে করাও বাস।

সুখ পেলে মনের এই গতি, হরিপদে রয় না মতি,

দীনা এবার করগে স্তুতি, হরি গোসাইর পদে পড়ি।। 


৩৪নং গান, তাল - ঠুংরী, রাগিনী - মঞ্জারাসাই

বহু যুগ পরে এল দয়াল হরিচাঁন

হরি এসে ভবে, সর্ব্বজীবে, রক্ষা কর প্রাণ।

১। তুই দেখ ভেবে মনে, এ  তিন ভুবনে, এমন পরম বান্ধব নাই আর, হরি বিনে।

একবার ডাক তারে, প্রেম ভরে, তবে পাবি পরিত্রাণ।।

২। রাজা অম্বরিসের ছেলে, আয়ু দশ বৎসর ছিল,

অযুত বৎসর আয়ু পেল, হরি নামের বলে।

লয়ে প্রজাগনে প্রাণ - প্রণে, করে হরিনাম গান।

৩। তার এক বৎসর পরে, হরি দেখা দেয় তারে,

যম অধিকার ঘুচে গেল, হরির দয়া জোরে।

ঘুচায় কর্ম্ম বন্ধন, সেই হরি ধন, হরি রাখে ভক্তের প্রান।।

৪। যুগে যুগে অবতার, করে জীবেরি উদ্ধার,

প্রেম-ভক্তি-ধন রসিক যে জন, তারে করে পার।

মুখে বলে হরি, নাই তার দেরি, হরি ঘুচায় তার নিদান।।

৫। হরি গোসাই কয় এবার, মিছে এ সংসার,

করগে দেহ ভুমি আবাদ, জ্ঞানে অস্ত্র ধর।

দীনা হরির প্রতি, রাখিস মতি, হরি করবে প্রেম দান।।



৩৫নং গান, তাল - আদ্ধা, রাগিনী - মনহরাসাই

হরি বলে করলি নারে ভক্তি স্তুতি, অন্তমকালে কি হবে তোর গতি।

হরিনাম পরম ধন, চিনলি না মন, অসার রাজ্যে করলি বসতি।।

১। মনরে হরি তোরে করে দয়া, নিদানে দেয় পদ চাড়া,

যা চাও তাই দেয়, তোরে যোগাড় করি।

তুই যার বলেতে হইলি বলি, তার কাছে করলি না মিনতি।।

২। মন'রে রঙ্গের খেলা হলে ভঙ্গ, চলে যাবে সাঙ্গ পাঙ্গ, আপন বলতে, কেউ না রবে ভবে।

তুই রঙ্গে ভঙ্গে রলি আনন্দে, হরিনামে হল না মতি।।

৩। মন রে - গুরু দিল ঘোল আনা, ব্যাপার থাক হলি দেনা, কুহকিনী নিল সকল হরে।

তুই ভুলে রলি সব খুয়ালি, দেখ না জ্বেলে জ্ঞানের বাতি।।

৪। মন রে - হরি গোসাই  বলে দীনবন্ধু, পার হবি তুই ভবসিন্ধু,

পারের কড়ি রাখলিনা তোর সাথে।

তুই পারের বেলা কাঁদড়ি একেলা কেউ হবে না সঙ্গের সাথী।। 


৩৬নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী- বিরহাসি

পাষান মনরে- গুরু তোর নিকটে থাকে চোখের আড়ালে

তোর গুরুর প্রতি, নাই রে মতি, গতি কি তোর অন্তিম কালে।।

১। গুরুর পদে মন মজায়ে, থাকরে মন চাতক হয়ে।

যে দিন হবে বর্ষন পাবি দর্শন, শান্তিপুরে যাবি চলে।।

২। রিপুর বশে থাকে যে জন, ধন-প্রান তার করে হরণ।

কাম রূপেতে দিয়ে নয়ন, কাম নগরে থাকে ভুলে।।

৩। যাহার আছে গুরু ভক্তি, সে করে গুরুকে ার্থী।

(সদা) জ্বেলে দুট জ্ঞানের বাতি, পাহারা দেয় রূপ নেহালে।।

৪। গুরু যদি পেতে চাও মন, বে-হালের বেশ কর ধারন।

পর অনুরাগের বসন, গড়ি দেও ঐ ভক্তি ধূলে।।

৫। হরি গোসাই কয় এই বচন, দীনবন্ধু করগে সাধন।

তাহলে তোর নাইরে মরন, থাকিসনে আর রিপুর দলে।।


৩৭তাল - ঝাপ, রাগিনী-জয়জয়ন্তী

হরি তুমি দাও পদাশ্রয়-শান্তি মায়ে লয়ে বামে।

হরি ঘুচাও আমার নিরানন্দ, আনন্দ দাও হৃদয়ধামে।।

১। হরি হে-যুগল পদ্ম মধুর আছে, আমি আছি সেই উদ্দেশে,

পান করিব ঐ রূপ রসে বসে।

আমি ভ্রমর হয়ে, শদু খেয়ে, পরাইব মনষ্কামে।।

২। হরি হে-ফুল ফোটে বনেতে, জগৎ মাতে সৌরভেতে, আকুল হয়ে গঞ্জরা গুঞ্জরে।

যত গঞ্জরা, যায় উদয় পূর্ণ করি, ক্ষুধা হলে ডালে ভ্রমে।।

৩। হরি হে- (আমার) যুগল নয়ন পদ্ম পাশে, সবাইব মন উল্লাসে, মধু পানে আশা পূর্ণ হবে।

আমি লব অঞ্চল পাতি, চাব না কুল মান জাতি, মধু খাব দমে দমে।।

৪। হরিহে-কাহর প্রানে দীনা বলে, যুগল পদ্ম তরুমুলে, রেখ হরি আমায় অধম বলে।

দয়াল হরি গোসাই, আমায় দিও ঠাই, যুগল যেন পাই শান্তি শ্যামে।।

 

৩৮নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ভাটিয়াল

ও মন মাঝিরে আমি কেন, এলম তোমার বৃথা কাষ্ঠের নায়।

তোমার নৌকায় উঠি, চলছি ভাটি, ছয় জন দাঁড়ি বাধ্য নয়।।

১। জান্তেম যদি নিরবধি, নৌকার বাইন খসিয়ে যায়

আমি বাইনে বাইনে দিতেম কালি, আলকাত্রা গাব দিতেম তায়।।

২। যদি যত্ন করতেম নৌকা আমি, মাল সব যেত নয়।

যদি দু’নয়ন প্রহরি রেখে মালের, পাহারা দিতেম সদায়।।

৩। নৌকার মাল কোঠাত্বে পাহারা দিতে আমার ভুল পড়িয়ে যায়।

তাতে ছয়জন দাঁড়ি, করে চুরি, মাল সকল হরিয়ে নেয়।

৪। যত্ন ছাড়া ডুবল ভরা, দেখলেম না চাহিয়া।

(দীনা) বলে রক্ষা নাই, দয়াল হরি গোঁসাই, চরণে স্থান দাও আমায়।।


৩৯নং গান,  তাল- গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

এই কি ছিল তোমার মনে বুঝিতে নারি।

তুমি মনের মত দুঃখ দিয়ে, ঘুরাতেছ বিদেশ ভরি।।

১। তোমার নাম গুন গেয়ে গেয়ে, বেড়াতেছি ঘুরি।

আমার সঙ্গের সাথী আর কেহ নাই, মনে বড় দুঃখ ভারী।।

২। বহুদিন ভ্রমিয়ে শেষে, কামপুরেতে পড়ি।

আছে সেই গ্রামে এক দস্যু বিপ্র প্রাণে কষ্ট দিচ্ছে ভারি।।

৩। বহু কথা জিজ্ঞাসিল, বলিতে না পারি।

বলে কটু বক্য ক্রোধ ঐক্য, চুপ করে রই ধৈর্য্য ধরি।।

৪। পাঠালে তুমি অর্ন্তযামী, এলেম একা পাড়ি।

আমার মনের কথা সকল জান, তবে কেন বিপাকে পড়ি।।

৫। হরি গোঁসাই বলে এবার, ছাড় জুয়াচুরি।

তবে পাবি দেখা বাঁকা সখা, দীনা কেন বেড়াও ঘুরি।।


৪০নং গান, তাল-কহার্বা, রাগিনী-জয় জিয়ালই

মন তুই গুরু চিনে ধর

গুরুর চরণ অমূল্য ধন, সাধন যেয়ে কর।

মন তুই গুরু চিনে না ধরিলে, কেমনে হবি ভব পার।।

১। গুরু ব্রহ্মা, গুরু বিষ্ণু, গুরু মহেশ্বর, গুরু করলে মনুষ্য জ্ঞান, সাধন হয়না তার।

মনরে গুরুর করণ, অসীম তারন, করতে পারলে হবি তার।।

২। সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়, পুরুষ যেই জন, গুরু তারে করে দয়া, দিয়ে শ্রীচরণ।

সদা তাঁর ভাবনা ভাবে যে জন, বিপদ না থাকে তার।।

৩। (ধরলে) অধর ধরা, হওগে মরা, যদি তারে চাও, দেহ তরী ছেড়ে দিয়, হরি গুণ গাও।

হরি নামের গুণে উঠবে পারি, ভক্তি বাদাম টেনে ধর।।

৪। হরি গোসাই বলে দীনা, গুণন বলি এবার, পারে যেতে ভয় করিস নে, গুরু করগে সার।

বেলা দন্ড চারি বোঝাই ভারী, দেখা যায়না কূল কিনায়।।


৪১তাল-ঝাপ, রাগিনী - ভাটিয়াল

সবে বলরে দারুন বিধি

আমায় কেন নয়ন দিয়াছে।

নয়ন রঙ্গরসে সদা ভাসে, রূপের ঘর ফেলে পিছে।।

১। রঙ্গে ভঙ্গে সেই আনন্দে নয়ন, সর্ব্বদায় আছে।

নয়ন ফিরাতে চাই নাহি ফিরে, কু-রসের ভাবে নাচে।।

২। কেমনে নয়ন ফিরাব সন্ধান, পাব কার কাছে।

আমি পড়েছি দায়, মন চলে যায়, দুষ্ট নয়নের পিছে।।

৩। রূপ নিরখি রয় না আঁখি কেন, বিরূপ হয়েছে।

থাকে মায়াপুরে, কুপথ জুড়ে, মায়োয় জড়ি আছে।।

৪। আমায় মন দিয়াছে, নয়ন দিয়াছে বিধি, সৎকর্ম্ম করিতে।

আমি তাই না, করি, জনম, ভরি, দুষ্কর্ম্মে মন রয়েছে।।

৫। আমার এ দুষ্ট মন, আর দু’নয়ন আমি পারিনা ফিরাতে।

এবার কর্ম্ম দোষে, রিপুর বসে, দীনার জনম যায় মিছে।।


৪২নং গান, তাল-লোফা, রাগিনী-পানতুফানি

মন তুই দেখনা চেয়ে নয়ন দিয়ে কেউ নয় আপন।

মিছে আমার আমার ভেবে মর, পরকাল কেন ভাবনা মন।।

১। ঐ দেখ ভ্রাতা পুত্র ঘরের নারী, নিদান কালে যার যার তারী।

মায়ার ধাঁধাঁ দিন দুই চারি, নিশির স্বপনের মতন।।

২। ভাব ধরে খেল ভাবের খেলা, ঘুচবেরে তোর ভব-জ্বালা।

হরি নামে হওরে ভোলা, অন্তিমে ছোবে না শমন।।

৩। মন প্রাণ দিয়ে তারে, নিরন্তর ভাব অন্তরে।

দয়াল হরি দয়া করে, প্রাণ অন্তে  দিবে শ্রীচরণ।।

৪। হরি গোসাইর বাক্য ধরি, বদন ভরে বল হরি।

দীনারে তুই দেখ বিচারি, হরি বিনে কি আছে ধন।।


৪৩নং গান, তাল-কহর্বা, রাগিনী -জয় জিয়ালাই

পাষণ মনা ভাই

এই সংসার সাগরের আর, কুল কিনারা নাই।

মন তুই কেমন করে, যাবি পারে, কান্ডারি চিনে লও ভাই।।

১। সাগর মাছে, বৃথা কাজে, থাক অকারন,

কাম কুন্তীরে ধরে খাবে, না রবে জীবন।

আছে হা করা, মুল্লুক জোড়া, হাহাকার করে সদাই।।

২। অনুরাগের ভরে, ডঙ্কা মেরে, কাম কুন্তীর তাছাড়,

মহাভাবের তরী নিয়ে, সাগর মাঝে রও।

এবার প্রেমানন্দে ঢেউ খেল মন, সাগরের ভয় কিছুই নাই।

৩। রসিক যে জন, সেই নদীর গোন, জেনে তরী বায়

হরি নামের সারি গেয়ে, তরী বেয়ে যায়।

তারা থাকতে বেলা ধরে নালা, আনন্দের আর সীমা নাই।।

৪। (যে জন) কামুক মানুষ, চলে বেহুশ, ধনপ্রাণ হত হয়,

ও তার সর্ব্বস্ব ধন, করে হরণ, কিছুই নাহি রয়।

হরি গোঁসাই কয় এবার দীনারে তোর, পারের উপায় কর না তাই।

 

৪৪নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী - উরুশেন

হরি আমার সাধন হল ক'ই

সদা কু-কর্ম্মেতে মত্ত রই

তোমায় স্মরণ নিলেম না একদিন।

স্মরণ যদি নিতেম, তোমায় পেতেম হে, আমার মন হত তোমার অধীন।।

১। যখন মাতৃ গর্ভে ছিলেম, করুণ স্বরে স্মরণ নিলেম, দিলে দেখা সপ্ত মাসের দিন।

তখন বল্লেম হরি, কষ্ট ভারি হে, হরি ঘুচাও আমার এ দুর্নিদন।।

২। অন্ধকুপে কারাগারে, কেন রেখে দিলে মোরে, যাতনা মোর হইল প্রবীন।

অমি কড়ার নিলেম, বলে ছিলেম হে, তোমার নামটি নিব চিরদিন।।

৩। ভুমিষ্ট হইলেম যখন, ভুলে গেলেম সে সব কখন, মুখে মন দিল মাতৃস্তন।

ওয়ানা বলে হই আপন স্বাধীন।

৪। মরলে নেয় শ্মশানে বেঁধে, সত্য ভ্রষ্ট অপরাধে, সেই জন্যেতে মুখ পোড়ায় সেই দিন।

হরি গোঁসাই বলে, রলি ভুলেরে দীনা নাম নিতে হলি কঠিন।

 

৪৫নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

হরি তোমার ডাকতে যেন পারি চিরদিন

ভুলে যাইনে যেন কোদনি, এই মিনতি চরণে তোমার।

হরিনাম সিন্ধু-অম্বুতে ডুইবে হে, যেন থাকে পাষান মন আমার।।

১। ভারত ভুমে এসে আমি, পেয়ে তোমার সংসার ভুমি, হয়ে আছি কর্ম্ম দুরাচার।

আমি সৎকর্ম্ম করিতেম যদি হে, হরি থাকিতেম হয়ে তোমার।।

২। (আমার) সু মতিকে শক্তি দিও, কু মতিকে তাড়াইও কু-মতি সে বারি দুরাচার।

ও সে রং দেখায়ে, নেয় ভুলায়ে হে, সেত সু-পথের ধারে না ধার।।

৩। (যেন) সদা করি নামের ধ্বনি, আর না বলি অন্য বাণী, দিবানিধি ঐ নাম করি সার।

আমার হৃদয় ধামে, দমে দমে হে, হরিনামটি জপি আনিবার।।

৪। হরি গোঁসাইর পদে মতি, থাকে যেন দিবারাতি, খন্ড রতি হয়না যেন আর।

দীনবন্ধু বলে, দিন ফুরালে হে, হরি গতি কি হবে আমার।।

 


৪৬নং গান, তাল - গড়খেমটা, রাগিনী - লম্পট

হরিনাম  হৃদয় জপে যার

সে যায় শেষে অনায়াসে ভবসিন্ধু পার।

হরি কৃপাসিন্ধু অনাথ বন্ধু, অসময় সে করে পার।।

১। (এল) নামের তরী, বোঝাই করি, হরি কর্ণধার ,

প্রেমভক্তি ধন, রসিক যে জন, তারে করে পার।

তিনি ধনী-মানী পার করে না, পার করে নেয়, এক মন যার।।

২। বিনা মূল্যে পার করে সে, পারের মাশুল নাই,

বশে ঘাটে, নিষ্কপটে, ডাক ক্ষীরোদসাই।

এবার মন প্রাণ খুলে, হরি বলে, ঘাট মাঝিকে বাধ্য কর।।

৩। (নৌকায়) ভাবের মাস্তুল, প্রেমের বৈঠা, ভক্তির গুণ দড়ি,

শ্রদ্ধা কাষ্ঠের তরী নিয়ে, এলেন শ্রীহরি।

মনের ছাড়লে কপট, ঘুচবে সঙ্কট, পারে যাবি অনিবার।।

৪। হরি গোঁসাই বলে গুন, এই বানী আমার,

(যে জন) ডাকে তারে, নেয় সে পারে, না করে বিচার।

ওরে দীনা বোকা, সুযোগ পাকা, ছাড়লে পাবি নারে আর।।

 

৪৭নং গান, তাল- ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

আমার এই ভাবে কি যাবে চিরদিন

অমি বসে ভাবি রাত্রি দিন, বল গুরু গতি কি আমার।

মরি কু-চিন্তাতে অশান্তিতে হে, গুরু শান্তি কর শান্তিধর।।

১। দুষ্কৃতী স্বভাবের দোষে, দুঃখে যাতনা ভোগি এসে শান্তির ডালি পেলেম না এবার।

আমার দুষ্কৃতী বিনাশ করিয়ে হে, গুরু সুকৃতি দেও হৃদ মাঝার।।

২। কুহকিনীর মায়ায় পড়ি, কু-পথে বেড়ালেম ঘুরি, তোমায় গুরু ডাকলেম না একবার।

এখন ডাকার মত শক্তি দিও হে, গুরু ডাকি যেন অনিবার।।

৩। কৃপা বারি সিঞ্চনেতে, শীতলতা দাও প্রাণেতে, কৃপা বিনে মরণ হয় আমার।

গুরু তুমি বিনে দীনহীনে হে, আমার আর কোন নাই পারাপার।।

৪। ভেবে অধীন দীনা বলে, গুরু কেন ভবে পাঠাইলে, সাধন ভজন না হল আমার।

আমি জনম ভরি দুরাচারি হে, হরি গোঁসাইর বাণী করলেম না সার।।


৪৮নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

যে জন হরি ভক্ত হরি পরায়ন

হরি নামে ঝরে দু’নয়ন - তার কি ভবে ভাবনা আছে।

ও তার অনুরাগের তনুখানি হে, সারা দিবা নিশি জ্বলতেছে।।

১। তিনি ভাব নদীতে ঝাপ দিয়েছে, প্রেম তরঙ্গে ঢেউ খেলতেছে, স্নেহের  মন্দির ভেঙ্গে গিয়েছে।

নাই তার স্নেহের মন্দির, ভাবে অস্থির হে, ও তার ছয় ভ্রাতা সদা নাচে।।

২। প্রেম সাগরের তরঙ্গ ভারি, বাহিতেছে স্রোত বারি, মায়ার ভেরি ছুটে গিয়েছে।

তাহার নাই কোন ঠিক, হয়ে বিদিক হে, তিনি পথ বিপথে চলতেছে।।

৩। মাঝে মাঝে হয় উতলা, ভাবেতে হয়ে বিভোলা, কি করিতে কি না করতেছে।

তখন বেগের চোটে, প্রাণ যায় ফেটে হে, শুধু হতাশে তার প্রাণ আছে।।

৪। হরি গোঁসাই বলে দীনা, এমন সুদিন আর পাবিনা, সুযোগের পথ কাছে এসেছে।

এবার হরিবলে বাহু তুলে হে, ও তুই চলে যা গুরুর পিছে।।


৪৯নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ভেন্ডিল কাহিনী

ও দরদিরে তুমি আমার বিপদকালে নিদয়া হইওনা।

আমার বিপদকালে নিদয় হলেরে, হারে দরদ কে বুঝবে তুমি বিনা।।

১। ঘুরে দেখি দেশ বিদেশে, বান্ধব নাই মোর কোন দেশে।

আমি আছি তোমার ঐ উদ্দেশ্যে রে, গুরু আমাকে ত্যাজিও না।।

২। (আমার) এ হেন দুঃখের কপাল, বন্ধু বান্ধব নাই মোর সবল।

(তাঁরা) জ্বালিয়ে ভীষণ অনল রে, হারে আমার অন্তরে দেয় বেদনা।।

৩। অসহ্য অনল অন্তরে, ধেয়ে যাই জুড়াবার তরে।

(আমার) বন্ধু বান্ধব চায় না ফিরে রে, হারে তারা কটু বলে স্থান দেয় না।।

৪। (হরি) দেও দুঃখ যা কর্ম্মের লিখন, সব জম্মের দুঃখ কর মোচন।

(দীনার) মনেতে এই আকিঞ্চন রে, গুরু করব তোমার সাধনা।।

 

৫০নং গান, তাল- ঠুংরী

নামের সাধ লাগল না আমার লোভে। (২)

কু-রসেরি সাধে মত্ত ভুলে রলেম ভবে রে।।

১। কু-রসেরি আস্বাদনে হারাইলে পিতৃধনে।

এখন পাইনে বিশ্ব-জনার্দ্ধনে, নিজের কর্ম দোষে রে।।

২। পিতৃধন সব ত্যাজ্য করি, নিলেম গরল বোঝাই ভরি।

এখন ভবের ঘাটে ডুবে মরি, কিনারা না হেরি রে।।

৩। নামাস্বাদ মিলায়ে হরি, দিয়ে তোমার পদ তরি।

(ভবের) আসা যাওয়া বারণ করি, রাখ পদ তলেরে।।

৪। বলে দীনা এই বাসনা, জনম আমায় আর দিওনা।

ঐ চরণে আশ্রয় বিনা, মৈলেম গরল পানে রে।।

 

৫১নং গান, তাল-কাওয়ালী, রাগিনী-বিরোলা

কাল ঘুমে ঘুমিয়ে কেন রলি অচেতন, এই ভাবে কি জনম যাবে ওরে পাষান মন।

ও তুই দেখ না চেয়ে দু নয়ন মেলিয়ে, দীপ্ত ময় হইল ভাই, এ বিশ্ব ভুবন।।

১। পুর্ব্বা পুরুষ ভেবে ছিল উচ্চ বর্ণেতে, ভগবান জম্মিয়া ছিল দীজ কুলেতে।

ঐ কুলে গুরু করিলে, ভগবান পাব সকালে, তাই যেনে ঐ চরণে, লোটায় সর্ব্বজন।।

২। খাড়া পাতায় লিখে গেল পূর্ব্বা - পুরুষগণ, এখন কি খাড়া পাতায় লিখিয়ে,

নিজের বুঝ ভাই নেও বুঝিয়ে, এমন সুদিন আর পাবেনা কখন।।

৩। উচ্চ কুলে গুরু করে এলি চিরকাল, পাতিয়া গিয়াছে তাঁরা, এসব কৌশল।

যত পূজা বেদ বিধি, গঠন করল ব্যবসা আমি, এখন ঐ ব্যবসায় তারা হয় পরিপোষণ।।

৪। (উচ্চ) কুলের গুরু না ধরিয়া, ভাবুক চিনে ধর, তন্ত্র মন্ত্র ছেড়ে দিয়ে, হরি কর সার।

যদি উদ্ধার হতে চাও, অন্য পূজা ছেড়ে দাও, হরি গুরু পূজায় থাকো সতত মগন।।

৫। কলিতে হরিনাম যজ্ঞ ভাগবতে পাই, হরি-গুরু পূজা ভিন্ন, অন্য পূজা নাই।

মনকে কর সরল সূক্ষ্ম, আর থেকনা হয়ে মূর্খ, পূজ সবে যে যেই তন্ত্রে আছ উপাসন।।

৬। নানা পূজায় কি ফল হবে, বল দেখিরে ভাই, অন্তিম কালে এসে উদ্ধার, করবেন কোন গোসাই।

যদি বল আল্লা হরি, কে নিবে ভাই উদ্ধার করি, মনের ময়লা কর হরি নামেতে খন্ডন।।

৭। হরি ধরায় অবতীর্ণ, অন্ধকার আর নাই, সর্ব্ব জীবে পুলকিত, সুখের সীমা নাই।

কুল গুরুর বিচার ছাড়, মন গুরু জড়িয়ে ধর, হরি গোঁসাইর করণ কর দীনা অভাজন।।


৫২নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অকালা

এবার প্রেম নদীতে দে সাঁতার, যদি রে তুই যাবি রে ওপার।

ঐ দেখ প্রেম নদীর ওপারে আছে রে, প্রেমিক গুরু কর্ণধর।।

১। ভাবের ভষ্ম অঙ্গে মেখে, সাঁতার দেরে মন সুখে।

ও তুই অনুরাগের হাত পা ঝেকে রে, প্রেম নদীর ধর কিনার।।

২। গেলে প্রেমিক গুরুর পাশে, দেখবি ঐ রূপ সদা বসে।

রাখবি প্রেমের ছবি, হৃদাকাশে রে, তবে হবি অনুগত তার।।

৩। হলে গুরুর মনের মত গুরু হবে অনুগত।

তিনি চাকর সম অবিরত রে, (ও তোর) মন যোগাবে নিরন্তর ।।

৪। দয়াল হরি গোঁসাই বলে, গুরু পদে প্রাণ সপিলে।

তবে শঙ্কা নাই তোর কোন কালে রে, দীনা তারে ভেবে দে সাঁতার।।


৫৩নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-আকালা

আমি ভজলেম না গুরুর চরণ, কিসে মিলবে গুরু বস্তু ধন।

আমার গোনার দিন ফুরিয়ে গেল হে, কোন দিন যেন হয় মরন।।

১। রলেম বৃথা কাজে, সংসার মাঝে, চললেনম না তাই আপন বুঝে।

তোমায় নাহি পূজে, মায়ায় মজে হে, কবি রঙ্গে ভঙ্গে কাল যাপন।।

২। সৎসঙ্গ ভিতরে গেলে, সৎ কথায় মোর মন না চলে।

আমার মন মজে কু-মতির ছলে, ফিরে না ঐ দুষ্ট মন।।

৩। যথা হরি নাম সংকীর্ত্তন হয়, সময় কাটাই বাজে কথায়।

আমি কর্ম দোষী হে দয়াময়, নিলেম না তোমার স্মরণ।।

৪। দীনা বলে হরি গোঁসাই পদতলে আমায় দেও ঠাই।

গুরু তুমি বিনে মোর কেহ নাই, অন্তে পাই যেন শ্রী চরণ।।


৫৪নং গান, তাল-ঝুলুন, রাগিনী-মহসালা

বাজে কথায় দিন ফুরালি, গুরু কেন ভজলি না।

যদি গোনার দিনের এক দিন কমে, সেদিন তো আর পাবি না।।

১। বৃথা কাজে কাটালি দিন, কু-কর্ম্মে হও কালের অধীন।

অসৎ কথায় হয়ে প্রবীন, গুরু কর্ম্ম করলি না।।

২। সৎসঙ্গ ভিতরে গিয়ে, সৎ কথায় কেন মন না দিয়ে।

জংলী কথায় মত্ত হয়ে, সৎ উপদেশ শুনলি না।।

৩। যদি যাও নাম সংকীর্ত্তনে, মন দেও বাজে আলাপনে।

শুনতে দেও না অন্য জনে, নিজেও তাই শুন না।।

৪। কু-ভক্ষনে হয়ে মত্ত, সদা কর মন রাজত্ব-

সার করলিনে গুরু তত্ত্ব, অন্তরে কু-ভাবনা।।

৫। হরি গোঁসাই বলে বারে বারে দিন খুয়াসনে জুলুম করে।

যমের হাতে পড়লে পড়ে, দীনা এড়াতে (আর) পারবি না।


৫৫নং গান, তাল-গড়খেমটা

গুরু গজাল হইলে হবে কি, আমি যে কোচ বিহীন সম্বল বিহীন।

গজালের রূপ নিরখি সেই কোচ হাকি, আমি তাই রলেম না একদিন।।

১। সেই গজাল রূপ সাগরে, থাকে ঐ অতল নীরে

নিবিড়ে আছে পরে, অচেতন থাকে নিশিদিন।

গজাল ধরিবারে খুজি তারে, খুজে না পেলাম কোনদিন।।

২। ভক্তি কোচ থাকত যদি, গুরু গজাল নিরবধি-

কোপাইবার পেতেম সন্ধি, তাকিয়ে রতেম্ চিরদিন।

গজাল পেলে দর্শন, মনের মতন, কুপিয়ে করতেম্ স্বাধীন।।

৩। চিরকাল রাখতেম কাজে, অন্ধকার যেত ঘুচে,

কুলমান দিতেম পিছে, হতেম তার চরণে অধীন।

ও তার চরণ পাশে রতেম বসে, থাকত না আমার এই দুর্দিন।।

৪। দুঃখে দীনবন্ধু বলে, গুরু গজাল নাহি মিলে,

জনম আমার যায় বিফলে, অকাজে বিজ্ঞ হই প্রবীন।

আমি রলেম্ ভ্রান্তে অসার চিন্তে, তাইতে মোর হলো না সুদিন।।

 

৫৬নং গান, তাল- গড়খেমটা, রাগিনী লম্পট

মন্দিরে চল মন আমার,

ঐ দেখ দিন ফুরাল কাছে এল, মরণ তোমার।

মন তোর ফেলে গরল, হইলে সরল, মিলবে হরি অনিবার।।

১। বিশ্বাস আর প্রেম ভক্তি দিও চরণে, হরি উদয় হবে হৃদয়, দ্বিদল আসনে।

তবে রূপের ছবি দর্শন পাবি, নাম সুধায় পুরবে উদর।।

২। ভক্তির জোরে শ্রীমন্দিরে হরির অবস্থান, দিবানিশি ভাব বসি যুগল চরণ।

হবে বাঞ্ছা পূরণ পাবি দর্শন, শান্তি হরি একান্তর।।

৩। চরণ পাশে রবি বসে ওরে পাষান মন, দেও সপে যুগল রূপে রাখবি দুনয়ন।

তবে রূপ নিরখি রেখে আঁখি, থাকবি আনন্দ অন্তর।।

৪। হরি চাঁদের রূপের কিরণ, লাগে যদি গায়,

আকুল প্রাণে নিশিদিনে হরিগুণ গায়।

ওরে শুনরে দীনা ঐ রূপ বিনা, যায়না মনের অন্ধকার।


৫৭নং গান, তাল – ঝাপ, রাগিনী–কাহিনা

আমার প্রাণের দরদি হে এসে কর হে পার।

আমি অকুল ভবেদি নীরে হে, তব বলে দিলেম সাঁতার।।

১। (বহে) তরঙ্গ এদিন রজনী, ভয়েতে কাঁপছে পরানী।

তুমি এসে হরি নিরাদ মনি হে, অকুল নীরে তরাও কিনার।।

২। ভাব দরিয়ার অতল বার, ঘোর তুফানে প্রাণে মরি।

(দিয়ে) অকুল নেয়ে পদতরি হে, শুনি পার কান্ডারির কান্ড অপার।

৩। বিপ্লব ঝটিকা জোরে, সঙ্গী সবে গেছে ছেড়ে।

আমায় এই সঙ্কটে কেবা ধরে হে, তুমি বিনে কে আছে আর।।

৪। ভবাদি দরিয়ার পারে, যেতে বাঞ্ছা নাই অন্তরে।

দীনাবলে সকাতরে হে, হরি গোঁসাই তরাও এবার।।

 

লোকশিক্ষা

৫৮নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

প্রেমভক্তি যার উপজে, তারে দয়া কিঞ্চিৎ সাজে।

যার দিনে দিনে মন প্রাণে, সদা জ্বলে হৃদয় মাঝে।।

১। গুরু অনুরাগী যে জন হয়, তারে ছোঁয়না শমন বাঘে, বন বাঘের কি ভয়।

থাকে পাহাড় পর্ব্বত গিরি গুহায়, দুর্গম অরণ্য মাঝে।।

২। (যার) অনুরাগের অঙ্কুর বেড়ে যায়, কাম, ক্রোধ, ষড় রিপু, হয় তার পরাজয়।

ও সে আহার নিদ্রা করি ত্যাজ্য, দিন রজনী গরু ভজে।।

৩। (তার) নয় দ্বারে হয় পঁচিশজন দ্বারি, দিবা নিশি বিশ্রাম নাই তার দিচ্ছে প্রহরী।

যিনি মহাপুরুষ হয় না বেহুস, হুসের ঘরে থাকে মজে।।

৪। ভেবে তাই আদিত্য ডেকে কয়, দীনবন্ধু হইসনে বেহুশ, ঘটবে বিষম দায়।

দয়াল হরি গোঁসাইর দয়া ভারি, দয়া বিলায় যারে সাজে।।

 

লোকশিক্ষা

৫৯নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

পাষান মন মনুরা লয় না পড়া, আমার সাধন ভজন হবে কেমনে।

সদা চেয়ে থাকে কু-পথ পানে,ম সু-পথ সে চায়না কখনে।।

১। বুঝাই কখন ব্যক্ত কখন গোপনে, বুঝালে বুঝ মানেনা সেই বিপুল বেইমানে।

আমি হায় কি করি, ভেবে মরি, সাধন পথে যাই কেমনে।।

২। আমি পরেছি আজ ভীষণ সঙ্কটে, সে দুষ্ট নয়নের পিছে, মনুরায় হাটে।

কেম্নে ফিরাই আঁখি, উপায় না দেখি, হাকিনী পিছনে টানে।।

৩। আমার মন মনুরায় সাধন পথে গেলে, দুষ্ট নয়ন অভি ভীষণ অগ্রেতে চলে।

তাইতে হয়না সাধন সঙ্গেতে মদন, বিধতে চায় তার পঞ্চ বাণে।।

৪। আদিত্য কয় শুনরে মন, হরি গোঁসাই করণ বিনে, হবেনা সাধন।

(এবার) দীনা বলে কি কৌশলে সাধন করি মন-প্রাণে।।

 

লোকশিক্ষা

৬০নং গান, তাল-ঝুলুন, রাগিনী-মহশালা

মজিলি কেন বৃথা রঙ্গে, ডাক হরি রস রঙ্গে।

সৎবাক্য সদ্ব্যবহারে, থাক রে মন মনোরঙ্গে।।

১। অসৎসঙ্গ ছেড়ে দিবি, থাকবি সদা সাধুর সঙ্গে।।

২। মুখে বল সত্য বাক্য নাম করিও হৃদয় ঐক্য।

মনকে কর সরল সূক্ষ্ম, পাবি মোক্ষ ধাম ত্রিভঙ্গে।।

৩। ভাই ভার্য্য বন্ধগুণে, কেউ যাবেনা তোমার সনে।

পালাবে সব ঘোর নিদানে, একা যাবি অগ্নির সঙ্গে।।

৪। আদিত্যের অমূল্য বুলি, দীবন্ধু যাসনে ভুলি।

হরি গোঁসাইর চরণ ধূলি, মাখবি সদা সর্ব্ব অঙ্গে।।

 

লোকশিক্ষা

৬১ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-বিরহাসী

প্রেম কাননে চলে যারে মন, কাম্য বনে যেয়ে কেন হারাও পরমধন।

যাবি পৃপা দানে, প্রেম কাননে, শীতল হবে তাপিত জীবন।।

১। প্রেম কাননে কামব্যাঘ্রের হানা, লোভী কামুক কেউ যেওনা।

যিনি প্রেম উন্মাদিনী সত্যবাদী, বনে গেলে নাই তার মরণ।।

২। অমাবস্যা পূর্ণিমাতে, ব্যাঘ্র দায় মহা বেগেতে,

কাপে হুঙ্কার শুনে, সর্ব্বজনে, স্বর্গ মর্ত্ত পাতাল ভুবন।।

৩। অনুরাগের শিকল নিয়ে, জ্ঞানের অলো জ্বালাইয়ে।

পথ নিরখে দাঁড়া হুঁসে, পাবি সে ব্যাঘ্রের দরশন।।

৪। মহাবেগে ক্রোধ করি, আসবে ব্যাঘ্র গর্জ্জন করি।

তখন নাম মন্ত্রে দিস ধূলা পড়ি, শিকলে করিবি বন্ধন।।

৫। আদিত্য কয় প্রেম কাননে , দীনবন্ধু থাক সন্ধানে।

হরি গোঁসাইর কৃপাবানে, কাম ব্যাঘ্রকে কর নিধন।।

 

লোকশিক্ষা

৬২ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-বিরহাসী

রাত্রি দিনে কায়োমনে ভজ আমার মন।

দেহ থাকতে চেতন হয়ে মগন, প্রানপনে করগে সাধন।।

১। গুরু ভজন করবি যদি, ছেঁড়ে দেরে ঐ বেদ বিধি।

জপ কর নাম নিরবধি, নির্ম্মল প্রেমে মিলে সেই ধন।।

২। বেদ বিধির পার হল যেইজন, তার হয়েছে সাধন ভজন।

ছয় রিপু করেছে দমন, জন্ম মৃত্যু হল নির্ব্বাণ।।

৩। মনপ্রাণ হৃদয় শুচি, নাম রসেতে রাখ রুচি।

নিও ঐ নাম সর্ব্বশুচি ঘুম যেও না থেক চেতন।।

৪। উগ্রচন্ডা পরিহসি, ঘুমের ঘরে করে চুরি।

(যে জন) ঢলে নিন্দ্রার কোলো পড়ি দেখায় স্বপ্ন, হরে নেয় ধন।।

৫। আদিত্য কয় শুনরে দীনা, ভজন বিনে সাধন হয়না।

হরি গোঁসাইর উপাসনা, ভজনে হয় বাঞ্ছা পূরণ।।

 

লোকশিক্ষা

৬৩ নং গান, তাল-একতালা, রাগিনী-ভোজেশ্বরা

হরি প্রেমের ঢেউ উঠেছে যার

তাতে স্বর্গ মর্ত্ত পাতাল ভূতল, সাত তালের ভাঙ্গে কিনার।।

১। সাত তালে সাতটি ব্রহ্মান্ড, ডুবায়ে সব করল পন্ড,

যত কৃষি শস্য নাইরে ভাস্য, ডুবায়ে মৈল সবাকার।

আছে সাত সমুদ্র, নয়রে ক্ষুদ্র, সমুদ্রে ঢেউ উঠিলে অন্ধকার।।

২। সমুদ্রের কান্ড বিপরীত, সে ঢেউতে রয়না হিতাহিত,

কত হাঙ্গর কুন্তীর, সবে অস্থির ঢেউ লেগে হইল স্তন্তিুত।

যত প্রেমের মকর, ঢেউতে বিভোর, তারা ঢেউ খেয়ে হয়েছে সার।।

৩। সাগরে ঢেউ উঠে যখন, আকাশ পাতাল খিলে তুফান,

তাতে মুক্তির ফারি মায়ার ভেরি, তলায়ে থাকে সর্ব্বক্ষণ।

ডুবায় অজ্ঞান পুরি, তুফান ভারি, প্রেম ঢেউতে দেখা যায়না কূল কিনারা।

৪। ভেবে আদিত্য বলে, সে ঢেউ যখন উথলে,

ওরে দীনবন্ধু হইসনে বেহুস, সে প্রেম ঢেউ ধরিস কৌশলে।

দয়াল হরি গোঁসাইর দয়া বলে, অধর চাঁদ অনিবার্য্য মিলবে তোর।।



লোকশিক্ষা

৬৪ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

শ্রীহরির কৃপা সাগরে আমার, গেল না মন মাঝির তরী।

মাঝি চালায় তরী কৃপা সাগর, সন্দীপ নদী নেয় ছয় দাঁড়ি।।

১। সন্দীপ নদীরএই বুঝি  হয় রীতি, তিন ধারাতে বসা তাতে, তিন মহামতি।

তাতে চুম্বক লোহা আছে স্থিতি, (নিল) নায়ের লোহা আকর্ষণ করি।।

২। অবশেষে জোড়া খসে তায়, নৌকা ধ্বংস অধ্বংস তাই কিছু নাহি রয়।

সন্দীপ নদীর স্রোতে, তুফানেতে, ছিঁড়ে গেল কাছি দড়ি।।

৩। (মাঝি) যদি যেত কৃপাসাগরে, আশার নঙ্গর করে রতেম পূর্ণ মাল ভরে।

রইতেম প্রেমানন্দে বহর সঙ্গে, মরমে থাকিতেম মরি।।

৪। দীনা বলে সন্দীপ নদীতে, হলেম সারা প্রাণে মরা, ছয় দাঁড়িয়ে মতে।

বল হরি গোঁসাই, উপায় কি তাই, মন মাঝি হয়  পাজি ভারি।।


লোকশিক্ষা

৬৫ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

মন ভ্রমর শুন বলি তোরে

শ্রী হরি নাম ফুলের মধু খাও উদর ভরে।

খেলে জন্ম মৃত্যু হবে বারণ, ভব ব্যাধি যাবে দুরে।।

১। প্রভাতে খাইও মধু, বেলা কইর না, লাগলে পবন ভানুর কিরণ, মধু পাবানা।

ফুলে না পেলে মধু - হবা চদু, ঘটবে জ্বালা হেলা করে।।

২। হরি বিলাস ফুল বাগানে, যত যত ফুল, আছে পুরা মধু ভরা, সৌরভে আকুল।

যত অলিগনে রয় সেখানে, ঐ নাম মধু পান করে।।

৩। উড়ে উড়ে হরি নাম গুণ, গেয়ে হও বিভোর, ফুলের মধু খাওরে শুধু, ও মন মধুকর।

তবে প্রেমানন্দে সুখে রবি, ক্ষুধা তৃষ্ণা যাবে দুরে।।

৪। আদিত্য তাই অলি হয়ে, ভ্রমিয়ে বেড়ায়, মধুর আছে মন উল্লাসে, ফুলে ফুলে ধঅয়।

হরি গোঁসাই কয় মধু না পায়, দীনবন্ধুর কর্ম্ম ফেরে।।


লোকশিক্ষা

৬৬ নং গান, তাল-খেম্টা, রাগিনী-লম্পট

ঘুচবে তোর ভব যন্ত্রনা,

কল্প বৃক্ষ মূলে যেয়ে কর কামনা।

সবে প্রেমানন্দে নেচে গেয়ে, কর পূজা অর্চ্চনা।।

১। কল্প বৃক্ষে আছেন গুরু, পরম দয়াল,

যে ফল যে কল্পনা করে, মিলে তার সেই ফল।

জীবের ফ’রাতে কল্পনা ধরায়, এল হরি কেলেসোনা।।

২। বিবেক সিন্দুর, ভক্তি চন্দ্রন, দিয়ে বৃক্ষের  গায়,

কামপাঠাকে বলি দিও, ঐ বৃক্ষের তলায়।

জ্বেলে জ্ঞানের বাতি কর স্তুতি, প্রেম স্বরে প্রার্থনা।।

৩। ভবে এসে হিংসা দ্বেশে, করলি কাল যাপন,

(মনের) ফেলে গরল হয়ে সরল, ভাবে হও মগন।

খেও ভাবের ঘরে প্রেমের মধু, গরল খেয়ে দৈরনা।।

৪। আদিত্য কয় গুন, কয় আত্মদান, ও দীনা নর্ব্বর

(তবে) কল্পতরু পরম দয়াল মিলবে এসে তোর।

হরি গোঁসাইর চরণ রাখিস্ স্মরণ, ভব বন্ধন রবেনা।।

 

লোকশিক্ষা

৬৭নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া

হরি এই মিনতি চরণে, তোমারয় যেন ভুলিনা কখনে।

যখন দেখিতে চাই দেখা যেন পাই শান্তি হরি একসনে।।

১। জম্মে জম্মে কৃপা করে, সৎপথে রখিও মোরে।

তোমার নাম যেন রাখি অন্তরে, তিলেক না ভুলি কোন দি।ে।

২। সৎমতি সদ্ব্যবহারে, রেখ সৎসঙ্গের ভিতরে।

আমার কুমতি রাখিয়ে দূরে, স্থান দাও হরি চরণে।।

৩। (তুমি)  পূর্ণচাঁদ ক্ষীরোদবিহারী, সর্ব্ববাঞ্ছা পূর্ণকারী।

নিয়ে প্রেম অনুরাগ হিরার ছুরি, নাশ কামরূপ বেইমানে।।

৪। (আমার) এহৃদি পর্ণ কুটিরে, পদার্পণ দেও কৃপা করে।

দীনার কলুষিত দেহ কর সুশীতল, শান্তি দানে।।


 

লোকশিক্ষা

৬৮ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া 

দয়াল গুরুচাঁদ রে আমি কি করিতে যাব মম দেশে।

ঐ সব সকল অসার মায়ার সংসার, শৈলেম্ সে বিষয় বিষে।।

১। পেয়েছি মন চোরা হরি, মনে বড় আশা ভারি।

আমি আসন দিব হৃদয় পুরি, রাখব হৃদি আকাশে।।

২। বহুদিন পর দিয়ে দেখা, ছেড়ে যায় আজ প্রাণ সখা

আমি কেম্নে রাখি বাকা সখা , ভাবিতেছি তাই বসে।।

৩। চিরদিনের দাসী হয়ে, আছি যার ভরসায় চেয়ে,

সে যদি যায় নিদয় হয়ে, দেহ রাখি কার আশে।

৪। দীনবন্ধু দুঃখে বলে, এই কি ছিল মোর কপালে।

(আমি) হরি গোঁসাইর চরণ ভুলে, মত্ত রলেম কু-রসে।।


লোকশিক্ষা

৬৯নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

কি দিয়ে পূজিব আমি, গুরু তোমার ঐ শ্রীচরণ।

আমার শক্তি ভক্তি সব নিয়ে যায়, দুষ্ট কু-মতির কু-পবন।।

১। যে ধনেতে তুমি হও খুসী, সে ধন আমার নাই, কি তোমায় দিয়ে ভালবাসি।

হও এক মনেতে তুমি খুসী, তাও ত' আমার হয়না কখন।।

২। (আমার) মন যদি দিতে চাই তব পায়, সে মন আমার উড়ায়ে নেয়, কু-মতির হাওয়ায়।

আমি দিবানিশি ভাবি বসি, ভাবতে ভাবতে দিন অবসান।।

৩। এই ভবে চৌরাশি লক্ষ বার, জনম ধারন করে আমি, এলম বারে বার।

ভুলে কু-মতির সেই কু-চক্রেতে কোন জন্মে হয় না সাধন।।

৪। ভেবে তাই আদিত্য ডেকে কয়,মন প্রাণ সমর্পণ করগে, হরি গোঁসাই'র পায়।

দীনা বলে কু-মতির ছলে, জন্মে জন্মে হল মরণ।।

 

লোকশিক্ষা

৭০নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া

আমি শান্তি না পাই হে গুরুচাঁদ, এ দেহ প্রেম শুন্য প্রাণে।

আমি চাই না শান্তি ঘুচাও ভ্রান্তি, যাতে নাম না ভুলি জীবনে।।

১। (মনে) তব নাম ভাবেনা কখন, কু-পথ পানে থাক মগন।

আমি কেমনে করিব সাধন, সারা জনম যায় অকারণে।।

২। সদা যেন তব গুণ গাই, রিপুর বসে ভুলে না যাই।

গুরু ঐ চরণে এই ভিক্ষা চাই, মত্ত থাকি যেন কীর্ত্তনে।।

৩। নাম নিতে মোর না হয় ধন্দ, মন মনুয়ার ঘুচাও সন্দ।

আমার মনেতে চায় সতের সঙ্গ, কু-মতি পিছে টানে।।

৪। প্রার্থনা হরি গোসাইর পায়, অন্তে মোর করিও উপায়।

গুরু ঐ নাম যেন কঠিন হৃদয়, দীনা জপে যেন নিশিদিনে।।


লোকশিক্ষা

৭১ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-ফকিরি ধাওয়া

দয়াল গুরু চাঁদ রে-

আমি প্রাণে মারা গেলাম রে এ দেশে।

আমি এ দেশ ছেড়ে বিদেশী হর, রবনা গৃহ-বাসে।।

১। এ দেশে ভূলিয়ে রঙ্গে, পয়মাল হলেম অসৎসঙ্গে।

দুষ্ট কুমতির কুরঙ্গে, ভুলে য়ায় মন হরিষে।।

২। এই যে সাধের দেহ খানি, ক্ষয় হতেছে দিন রজনী,

গুরু হৃদে দেও চরণ দুখানি, সারা জনম যার মোর কু-রসে।।

৩। কারে জানাই দু॥খের কথা, ব্যথিত আমি পাব কোথা।

গুরু এমন বান্ধব নাই মোর হেথা, সব হারালেম কর্ম্মদোষে।।

৪। দীনা কয় মোর এই বাসনা, হৃদে রাখব্ কেলে সোনা।

আমার সংসার বিষয় যাতনা, ঐ চিন্তে সকল নাশে।।

 

লোকশিক্ষা

৭২নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ভাটিয়অল

প্রাণের ভাইরে আমার মাকে, বদন ভরে ডাকিও মা বইলে।

মায়ের প্রাণের দরদ বুঝবে এমন দরদী নাই ভুতলে।।

১। মাকে আমার মা বলিবার, তোমারা আছ সকলে।

আমি হই কু-পুত্র, অপবিত্র, জঘন্ন ভূমণ্ডলে।।

২। তোমরা মায়ের হও সু-পুত্র সবে রও মায়ের কোলে।

মায়ের কর যতœ, পাবে রতœ, আমার নাই ছার কপালে।।

৩। আমার শান্তি মায়ের করলে যতœ, শান্তি হয় অন্তিমকালে।

আমি সুকর্ম্মহীন, ভজনবিহীন, দেশে যাব কোন বলে।।

৪। দীন কয় বিদেশে, পাগল বেশে বেড়াই কু-পুত্র বৈলে।।

আমার বঞ্ছা হিয়ে, দেশে গিয়ে, রব মায়ের চরণ তলে।।

 

লোকশিক্ষা

৭৩নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

মিছে মায়ার কান্না কাঁদলে কি হবে,

দেখ মন সব ফেলে যেতে হবে, সময় থাকতে সম্বল নেও করি।

মন তোর সকল অসার মায়ার সংসার হে, যত ভ্রাতা আর পুত্র নারী।।

১। মায়ার রাজ্যে বসত কর, মায়ার কান্ন কেঁদে মর, হনি নামে ঝরে না বারি।

ঐ মায়ার রাজত্ব, মেয়ে, পুত্র হে, হল কূহলিনী পায়ের বেড়ি।।

২। যে খেলঅ খেলিতে এলি, মায়ার ছলে ভুলে গেলি, সে খেলা তোর পিছে রয় পড়ি।

কর মায়ার খেলঅ, ঘটবে জ্বালা হে, যে দিন যাবিরে যমের বাড়ি।।

৩। পূর্ব্বের কথা ভুলে গিয়ে, মায়ার খেলায় মত্ত হয়ে, স্থুলের কথা করলি রে চুরি।

বলছ সপ্ত মাসে, স্থুলের দেশে হে, রলি সে কথা কেন ভূল করি।।

৪। সপ্ত মাসে মায়ের উদরে, এলি হরির সাথে সত্য ক’রে, নাম নিবি তুই এ জনম ভরি।

হয়ে সত্য ভ্রষ্ট হলি নষ্ট হে, এখন কু-পথে বেড়াও ঘুরি।।

৫। আদিত্য কয় বলি তোরে, গুরুর দেহ এমনি করে। বৃথা কাজে দিলি ক্ষয় করি।

হরি গোঁসাই বলে, মায়ার ভুলে হে, দীনা কাঁদলি দিন বিভাবরী।

 

লোকশিক্ষা

৭৪নং গান, তাল-একতালা, রাগিনী-ভোজেশ্বর

যদি তাড়াতে চাও কাম দ্রোনে।

গিয়ে রূপের দেশে, মন উল্লাসে, যুদ্ধ কর তার সনে।।

১। সাদা ঠিক রেখ নয়ন, পলক দিওনা কখন,

রূপের ঘরে রূপ নেহারে, থাকিও চেতন।

যেমন চৌদ্দ বৎসর ছিল লক্ষণ, অনিদ্রায় অনাহারে ভ্রমে বনে।।

২। দ্বাপরে যত যুদ্ধ হয়, সারথী শ্রী কৃষ্ণ সহায়

(কৃষ্ণের) কৃপাগুণে, সে অর্জ্জুনে, প্রাণে ভিক্ষা পায়।

তেমনি করলে সহায়, হরির দয়ায়, তবে জয়ী হবি কামদ্রোনের রণে।।

৩। কাম দ্রোন মহাযোদ্ধা হন, জ্ঞানধনুকে জুড়ে রূপের বাণ,

নামের হুঙ্কারেতে, শরাঘাতে, তাড়াও সে দুর্জ্জন।

অনুরাগের বসন কর ধারণ, শ্রদ্ধা পত্র দেও গুরুর চরণে।।

৪। সেরূপ মহাযোদ্ধা সেজে, আরোহন কর মন গজে,

(ক্রোধ), লোভ, মোহ, সেনা সৈন্যে, রনে যাও সেজে।

বাজবে রনভেরি, হৃদয় পুরি, অগ্রসর হইও অতি সাবধানে।।

৫। আদিত্য বলে হও হুসিয়ার, দীনবন্ধুরে এবার, হরি গোঁসাইর দয়া বিনে, গতি নাইরে আর।

গুরুর আদেশ নিয়ে যুদ্ধে গিয়ে, কামদ্রোণকে হটাও ঐ পঞ্চ বাণে।।

 

লোকশিক্ষা

৭৫নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

হরি প্রেম দিয়ে ডাকতে পারি না, তাইতে কি দয়া হবে না।

যত বোবা খঞ্জ পাগল অন্ধ, তোমার সৃষ্টি বিশ্বজনা।।

১। যে জন প্রেম বারি দিতে পারে, তারে কৃপা দর্শণ দিয়ে, নেও মুক্তি করে।

যার নাই প্রেম বারি, আঁখি ভরি, সে তোমার কি তৈয়ারী না।।

২। মন সাধে সৃষ্টি করে, এখন কেন ডুবাতেছ, অকূল সাগরে।

কেন করলে সৃজন, বিশ্ব ভূবন, হরি নাম যেন তোমার ডুবেনা।।

৩। যেমন, ছায়া নিতে বৃক্ষতলে যায়, ডাল পাতা ভাঙ্গিয়ে লোকে, তার উপরে রয়।

কত গোড়া কোপায়, শিকর উঠায়, তাতে বৃক্ষের ক্রোধ হয় না।।

৪। তুমি কল্পতরু নামটি ধরে, কঠিন জোরে, শিকড় করে আছ মৃত্তিকা পরে।

কল্পতরু নামে, এ অধমে কত দিতেছি ভর্ৎসনা।

৫। তাই বলে কি ক্রোধ ভরে, করবে নাকি প্রাণে নষ্ট, অজ্ঞান ছেলেরে।

অজ অজ্ঞান ছেলে, কৃপা আপিলে, দীনার কি ক্ষমা হবে না।।

 

লোকশিক্ষা

৭৬নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ভাটিয়াল

আমি কেমনে করিব সাধন, এ দেহ প্রেমশূন্য প্রাণে।

আমার নাই ভাব ভক্তি, প্রেম শক্তি, করি দুর্ভাবনা দিনে দিনে।।

১। অসৎ সঙ্গের ভিতরে পড়ে, রঙ্গে ভঙ্গে কাল কাটালেম, বিষয় সংসারে।

আমার হয় না সাধন, কুছার জীবন, জনম গেল অকারণে।।

২। আমি কর্ম্ম দোষী সাধন ভজন হীন, তাইতে নাকি গুরু আমায়, করলে দীনহীন।

আমি কর্ম্ম যদি তরতেম ভাল, থাকতেম গুরুর শ্রীচরণে।।

৩। দুর্ভাগ্য কি এই ছিল আমার, বিধির কি দোষ দিব সকল, কর্ম্মেরি ব্যাপার।

কবে সাধরনের ধন, পাই দরশন, জুড়াইব দু’নয়নে।।

৪। সর্ব্ব ধন মোর বাটপড়ে দিয়ে, অসময় হাহাকার করি, ভীরু সাজিয়ে।

দীনা বলে ভুমন্ডলে, (জন্মিয়ে) মৃত্যু কেন হল না প্রাণে।।


লোকশিক্ষা

৭৭নং গান, তাল-কাণ্ডয়ালী, রাগিনী-বিরোলা

এই হরি নাম মহামন্ত্র সর্ব্ব যুগের সার,

হাতে কাম মুখে হরিনাম লওরে বারে বার।

ছাড় অসৎসঙ্গ কু-কথা বারে বার।

সত্য বাক্য মনকে সূক্ষণ, রাখ মন আমার।।

১। ডঙ্কা, সিঙ্গা, ঝাজ, ঢোল, কাশী লও ধরি,

উচ্চস্বরে ব্যক্ত ক’রে, বল হরি হরি।

গোলকে গোপনে ছিল, কলিতে নাম ব্যক্ত হল,

মন সাধ মিটাইয়ে নেও, পুরিয়া উদর।।

২। বহু শাস্ত্রিক বক্ত যারা, তাদের এই রীতি,

তর্ক দিয়ে জয়ী হইবে, মনের এই গতি।

বৃথা তর্ক ছেড়ে দেও, পরের সম্বল করে লও,

পারের বেলা ঘটবে জ্বালা, গতি কে তোমার।।

৩। শাস্ত্র গ্রন্থ লোক বুঝান, দৃষ্টান্ত প্রমাণ,

উহাতে কখনও পাওয়া যায় না ভগবান।

মন প্রাণ দিয়ে তাঁহারে, নয়ন রেখে এক নেহারে,

যুদ্ধের বেশে, রূপের দেশে, করগে সময়।।

৪। প্রেমিক গুরুর হুকুম নিয়ে, যেও সমরে,

যুদ্ধে অগ্রসর হইও, অতি হুসিয়ারে

সদা রেখ উর্দ্ধ নয়ন, পলক মারিও না কখন,

জুড়িও ঐ রূপের বাণ, জ্ঞান ধনুক উপর।।

৫। অনুরাগ সৈন্যকে নিয়ে, রণে দেও হানা,

কাম দ্রোনকে বধ আগে, দুষ্ট সেইজনা।

আদিত্য কয় শুনরে দীনা, শ্রী হরি নাম ভুলিও না,

হরি গোঁসাইর উপাসনা, ছাড়িও না আর।।

 

লোকশিক্ষা

৭৮নং গান, তাল-কান্ডয়ালী, রাগিনী-বিরোলঅ

যদি পারের আশা কর ও সুজন মনা;

সকালে ধরিও পাড়ি-বসে থেক না।

সদা বল হরি হরি, দু’হাতে হাইল ধরি

শ্রদ্ধা মাস্তুলে দিয়ে, বিবেকের টানা।।

১। ভক্তি বাদাম তুলে দিয়ে, আনন্দ প্রাণে,

প্রেম বায়ুতে খাটাইও, অনুসন্ধানে।

যখন উঠবে ভাবের তুফান, ঢেউ খেলিও হয়ে মগন,

আনন্দ পাবি সর্বক্ষণ, পূরিবে সব কামনা।।

২। কু-মতির ঐ কু-পবন, যদি উথলে,

উল্টা বেয়ে যেও তরী, রাখিও তায় নঙ্গর করি,

মুখে বল হরি হরি, পবনের ভয় রবে না।।

৩। ভোর বেলা ধরিলে পাড়ি, শঙ্কা নাই তাহার,

অনায়াসে উঠে পাড়ি, হয়ে যায় সে পার।

শেষ বেলা ধরিলে পাড়ি, দিবা শেষে বেড়ায় ঘুরি,

অন্ধকারে ডুবায় তরী, দুর্ভোগে মরে সেই জনা।।

৪। প্রহ্লাদ দিয়ৈছিল পাড়ি, অতি সকালে,

মহাসুখে পার হ’য়ে যায়, হরি বল বলে।

প্রহ্লাদ চারি ভাইর কনিষ্ঠ, কর্ম্ম গুণে সর্বশ্রেষ্ঠ।

ত্রি-ভূবনে নাম উৎকৃষ্ট, রল তাহার ঘোষণা।।

৫। আদিত্য কয় দিনে দিনে, দিন ফুরায়ে যায়,

সুখ শয্যায় ঘুমিয়ে রলি, পারের কি উপায়।

হরি গোঁসাই কয় পারের বেলা,

ঘটবেরে তোর বিষম জ্বালা,

পাড়ি ধর এই ভোর বেলা, পারে যদি যাওরে দীনা।।

 

৭৯ নং গান, তাল-ঝুলুন, রাগিনী-মহসালা

এমন সুমধুর হরিনাম নিয়ে একবার দেখনা।

উদর ভরি নিলে পরে, অরুচি কখন হবেনা।।

১। যে পেয়েছে নামের মর্ম্ম, করতে চায় সে হরির কর্ম্ম।

চিনে নিয়ে হরি ব্রহ্ম, হৃদয় করে নাম জপনা।।

২। পেল মর্ম্ম পাগলঅ ভোলঅ, খেলে সদা নামের খেলা।

তাড়িয়ে দিয়ে ভরের জ্বালা, শ্মশানেতে দিচ্ছে হানা।।

৩। পঞ্চাননে পঞ্চমুখে, জপে ঐ নাম পরম সুখে।

ব্রহ্মাজপে চর্তুমুখে, জপে নারদ নিয়ে বীন।।

৪। আদিত্য কয় দীনবন্ধু, পার হও যদি ভব সিন্ধু।

হরি গোঁসাই পারের বন্ধু, সদা করিস তাই ধারণা


৮০ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-হেলারি

এল সোনার মানুষ ওড়াকান্দী, কে দেখবি ত্বরায় চলে আয়।

মানুষ দেখলে জুড়ায়, তাপিত জীবন, প্রেম হিল্লোলে মন গলিয়ে যায়।।

১। যদি সেই মানুষ ধরতে চাও, মুখে হরি গুনগান গাও, নিরীখ ধরে সদা রও সেই মানুষ পানে,

এবার কামের ঘরে কপাট মেরে, নামের হুঙ্কার ছাড় সদায়।।

২। সেই মানুষ শান্তিপুরে, শান্তি মায়ের স্নেহাগারে, গেলে পরে দেখবি তারে, জুড়ারি জীবন।

তবে প্রেমানন্দে কাল কাটাবি, দেখতে পাকি ঐরুপ সদায়।।

৩। সেই মানুষ ধরা বিষম দায়, শান্তিপুরে থাকে সদায়, ধরতে গেলে ছুটিয়ে পালায়।

তুই কেমন করে ধরবি তারে, উল্টাকলে চলে সদায়।।

৪। (দয়াল) হরি গোঁসাইর দয়াবানী, করলে গুরুর করন জানি, পাবি সেই মানুষের দরশন।

বোকা দীনারে তুই, করলি না করন, মানুষ মিলবে কোন গুনের দায়।।


৮১ নং গান, তাল-আদ্ধা, রাগিনী-গুজরাটিয়া

এল কলির শেষে পাগল বেশে, এল পাগল হরিচাঁন।

আমার হরিচাঁদের প্রেম বাজারে, যেতে পারে হয় যার একমন।।

১। হরিচাঁদের নির্ম্মল করন, যার মন করেছে হরন, তার কি ঘরে থাকে প্রাণ।

ও সে ঘরের বাহির, হয়ে গিয়াছে, ত্যাজ্য করে সব কুলমান।।

২। হরিচাঁদের ঐ রূপ বরন, দেখলে জুড়ায় তাপিত জীবন, এমন রূপ কেউ দেখনাই।

ঐ রূপ দেখবি যদি নিরবধি, হরিচাঁদ বলে সদা কান।।

৩। কর গুরুচাঁদের করন, সে হয় প্রেমের মহাজন, ডেকে বলে কে নিবি আয়।

বলে কে নিবি কে নিবি তোরা, ধর বলে যাচে প্রেমধন।।

৪। হরি গোঁসাই পেয়ে প্রেমধন, জগতে করলেন বিতরণ, মাতাইল এ ত্রিভূবন।

ও সে মাতাইল পুরুষ নারী, মাতৃলনা দীনবন্ধুর মন।।

 

মনশিক্ষা

৮২ নং গান, তাল-আড়া, রাগিনী-ঘুগুট

আমার মন পাখীতে বুঝ মানে না উপায় কি করি।

আমি দিবানিশি বুঝাই তারে রে মন, পাখীর নয়নে ঝরে না বারি।।

১। পাখী আনন্দ হৃদি পিঞ্জরে, সপ্ত তালায় বসত করে রে।

পাখী ভাল ভাল আহার করে রে মন, হরি নামে যায় না গড়াগড়ি।।

২। পাখী ঘৃত মাখন ননী খেয়ে, রল বন পানে চেয়ে রে।

আমার কি লাভ হল, পাখী পুষে রে মন, পাখী কখন জানি যাবে উড়ি।।

৩। পাখী কেন হরি বল বলেনা, ভাবিতেছি সেই ভাবনারে।

পাখী সদা জপে কু-মন্ত্রণা রে মন, পাখী একদিনও না বলল হরি।।

৪। পাখি হরিচাঁদের চরণ ভূলে, সর্ব্বদা কু-বুলি বলে রে।

দীনা বলে নামে পাষান গলেরে মন, আমার মন গল্ল না জনম ভরি।।

 

মনশিক্ষা

৮৩নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরী

শ্রী হরির ঐ কৃপা বৃক্ষে,

মন পাখী তুই পড় যেয়ে উড়ে।

যাবি খেদ শরীরে, কুতুহলে, হরিচাঁদ কৃপা নগরে।।

১। পাখী প্রেম বায়ুতে যাবি ভর করি, ভক্তির পাখা দিয়ে ঝাকা, যাবিরে উড়ি।

বসবি দয়াডালে, সে নাম ফুলে, মধু পান কর উদর ভরে।।

২। পাখী কৃপা নগর হরির অবস্থান, নামের মধু খাও রে শুধু, করনা গুমান।

এবার শ্রদ্ধা রাখি ও মন পাখী, রও কৃপা বৃক্ষের উপরে।।

৩। (ডালে) আশার বেড়ি থাক জড়ায়ে, কল্পতরু ফলের পানে, সদা রও চেয়ে।

চেয়ে রও চিরকাল, মিলবে সে ফল, স্থান পাবি শান্তি কুটীরে।।

৪। দীনা বলে উপায় কি করি, মন পাখীতে লয় না কথা, ঐ দুঃখে মরি।

করে কু-ভাবনা কু-পথ হানা, হরি নামের বুলি নাহি ধরে।।


৮৪ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ইরাহারা

মন পাখি তুই হরি বলে বাহু তুলে ডাক দেখি।

ও তুই ডাকলে পরে দেখবি তারে, জুড়াবে তোর দুই আঁখি।

১। জংলি ভাষা ত্যাজ্য করে, হরি নাম বিরাগ ভরে, প্রেমশ্বরে ডাক পাখি।

তবে পাখি জনম যাবে কেটে, যাবি শেসে প্রেমের হাটে, নামে ঝরবে দুই আঁখি।।

২। সদা কর জোরা মালি, হেলা করে দিন খুয়ালি, কার আশায় হয়ে সুখী।

পাখি চিরকাল কাটালি হেলে, কাঁদবিরে তুই নদীর কুলে, হারাবি তোর দুই আঁখি।।

৩। স্থুলের কথা ভুলে গিয়ে, কু-কর্ম্মে রলি মজিয়ে, পারের উপায় করলি কি।

পাখি এ দেহের গৌরব ছাড়, ভব পারের সম্বল কর, তা বিনে তো গতি কি।।

৪। এসেছ ভবে কি ধন লয়ে, কি ভাবেতে যাও চলিয়ে, রবির সুতকে বলিবি কি।

যে দিন হস্ত পদ বন্ধন করে, নিয়ে যাবে যমের ঘরে, কি বলে দিবি ফাঁকি।।

৫। ভবে এসে রলি বসে, কাল কাটালি রঙ্গ রসে, এমনি দিন যাবে নাকি।

হরি গোঁসাই বলে কর্ম্ম ফলে, দীনা গেলি রসাতলে, বিষয় চিন্তা গায় মাখি।।

 

তত্ত্ব গীতি

৮৫নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

দয়া করে বল সাধু ভাই

আমি প্রেমিক গুরু কোথা পাই প্রেমিক গুরু চিনব কেমনে।

কি তার রতি মতি, ভাবের গতি হে, বল বসত করে কোন খানে।।

১। কি প্রকারে যাবে জানা, প্রেমিক গুরুর কি নিশানা, কি আকার তার কি বেশ ভূষনে।

কেমন আঁকি তারা, রূপ চেহারা হে, তারে ধরিব কি সন্ধানে।।

২। অধর মানুষ যে ধরেছে, যাব আমি তারি কাছে, চিনায়ে দেও সেই গুরুধনে।

আমার এই আকিঞ্চন, করব সাধন হে, সদা থাকিব তাঁর চরনে।।

৩। প্রেমিক গুরুর সহবাসে, থেকে আমি মন উল্লাসে, পূজব তাঁরে অতি যতনে।

আমি পেলে দেখা, সুজন সখা হে, সাধন করিব মন প্রাণে।।

৪। আদিত্যের ঐ সু-আদেশে, হরি গোঁসাইর কৃপাদেশে, যাব বলে বাসনা মনে।

ভেবে দীনা বলে, চরণ তলে হে, রব এ দেহ সমর্পণে।।

 

তত্ত্ব গীতি

৮৬নং গান, তাল – ঝাপ, রাগিনী – ভাটিয়াল

কত গুনে এঘরখানি গড়েছিল কোন গুণমনি,

ও সে কোথা থাকে কেউ না দেখে, কার কাছে শুনিব বাণী।।

১। তাঁহার গুণের কথা বলিব কত, সেই ঘরের ভিতরে কল, করেছে যত।

ও তার জোড়ায় জোড়ায় কব্জা এটে, বসাল কল সে সন্ধানী।।

২। চিনিনা চিনিয়ে দেও তারে, কোথায় তাহার হয় উৎপত্তি, কি নামটি ধরে।

আমি কেমন করে ধরব তারে, কোথায় রয় সে গুণমণি।

৩। সেই ঘরেতে আছে আট কোঠা, না জানি তার নয়দরজা, কি ভাবে আটা।

আরও কোথায় বা তার মটিকোঠা, কোথায় রেখেছে প্রেম রতœ খানি।।

৪। (ঘরে) চৌষট্টি জন কার নাম কি ধরে, কার কোন খানে হয় বসতি, বলে দেও মোরে।

ভেবে দীনা বলে কি কৌশলে, পাব হরি গোঁসাইর দয়া কণি।

 

তত্ত্ব গীতি

৮৭নং গান, তাল-কান্ডয়ালি, রাগিনী-মেনলোহই

তুই করলি না তোর দেহের নিরুপণ।

হারাইলি আত্ম তত্ত্ব, পরমার্থ গুরুতত্ত্ব পরম ধন।।

১। নয়টি জেলায় দেহরাজ্য, পেয়াদা, মৃধা পঞ্চ বাধ্য,

ছয় জনেতে তহশীলদারী, করেন গ্রাহ্য।

নবীন রাজা নামটি ধরি, বসে আছে অন্তপুরি,

ঘুমের ঘরে কপাট মারি, আছে মুমেতে অচেতন।।

২। ছয় জনে ছয় তহশলি নিয়ে, ভ্রমে জিলা মোকাম মিয়ে

তহশলি করে সন্ধ্যানেতে, অতি গোপনে।

তহশীলের মাল করে চুরি, তিলেক মাত্র হয়না দেরি

সহরিয়া চোর সন্ধান ভারি, দিক ভুলায়ে করে হরণ।

৩। তাতে তিন মহকুমা চারটি থানা, লোভি কামুক যেতে মানা

গেলে পরে ঘটে যন্ত্রনা, সেই রাগ দরবারে।

স্থুল, প্রবর্ত্ত, সাধক, সিদ্ধি, চার থানার চার নিয়ম বুদ্ধি

হাকিম হয় তার সর্ব্ব সিদ্ধি, হুজুরে হয় বিচার পতন।

৪। মেরুদন্ডের দক্ষিণভাগে, পিঙ্গলা নাড়ী বিরাজ করে,

মধ্যেতে সুষুুা থাকে, ইড়া নাড়ীর যোগে।

রাজার হল এই তিন নারী, চলে তারা দ্রুত ভারী,

কফ, পিত্ত, বায়ু লয়ে চলেতেছে, সেই নারী তিন জন।।

৫। ইড়া, সুষুুা, পিঙ্গলা, সত্ত্ব, রজ, তম গুনে করে খেলা,

যে দিন তারা হয় উতলা, জীবের সারা দায়।

ভেবে বলে হরি গোঁসাই, দীনবন্ধু তোর রক্ষা নই,

হারাইলি আত্ম তত্ত্ব, চিনলি না সেই ড়গুরু কি ধন।।

 

তত্ত্ব গীতি

৮৮নং গান, তাল-কহরাবা, রাগিনী-জয় জিয়ালই

রিপুর পীড়নে-

সারা জীবন যায় অকারন তত্ত্ব না জেনে,

আমি না জানিলেম গুরু তত্ত্ব, দেহে কে রয় কোন খানে।।

১। চতুর্দ্দল হয় কোনখানেতে, বসতি কাহার, বল গুরু দয়া করে, ধরে কোন আকার।

সে কি কাজের হয় অধিপতি, কি কাজ করে সে জানে।।

২। ষড়দলটি কোন খানেতে, বল সেই বাণী, সেই পদ্মেতে বসত করে, কোন গুণমনি।

তাহার কি আকৃতি, না পাই স্থিতি, কি কাজ তার ভার বহনে।।

৩। দশম দল আর দ্বাদশদলে, থাকে কোন কোন জন, কার কি বর্ণ, কি কার কর্ম্ম, বলে দেও এখন।

আরও কোনখানে ঘোড়শদল দ্বিদল, কোখানে থাকে কোন জনে।।

৪। সবার স্বরূপ কি কাহার রূপ, তাহা শুন্তে চাই, কি কার্য কার হয় অধিকার, বল হে গোসাই।

হরি গোঁসাই এবার তত্ত্ব জানবার, বাসনা দীনার মনে।।

 

তত্ত্ব গীতি

৮৯নং গান, তাল-কহরাবা, রাগিনী-জয় জিয়ালই

তত্ত্ব বলব কিরে তায়

গুহ্যমূলে চতুর্দ্দলে জীবাত্মা সে রয়।

তার আকার হল রক্ত বর্ণ, ভার বহন তার জল কাজ হয়।।

১। আরও শুন বলিরে তাই, তত্ত্বের বাণী,

ভূতাত্মা সে লিঙ্গ মুলে শাস্ত্রেতে জানি।

আছে হরিতাল বর্ণ তাহার, ষড়দলে রয় সদায়।।

২। পরম আত্মা নাভিতে রয়, দশম দলেতে,

আকার হয় তার বিদ্যুৎ বর্ণ, কর্ম্ম বায়ূতে।

আছে আত্মারাম বক্ষস্থলে, দ্বাদশদল বসত আশ্রয়।।

৩। চন্দ্র বর্ণ আকার হয় তার, আহার হরি কথা,

হাস্য হয়ে সদা থাকে, আনন্দ যথা,

প্রেমানন্দ অপার থাকে বিভোর, তিনি যে আনন্দময়।।

৪। কণ্ঠস্বথলে ষোড়শ দলে, আত্মা রামেশ্বর,

আকার হয় তার সূর্য্য বর্ণ হরি কথা সার

আছে বুদ্ধি জ্ঞান, রস আস্বাদন, হরি ভজন সর্ব্বদায়।।

৫। মস্তকেতে দ্বিদল পদ্ম, সহস্র আরে,

পরম আত্মা রয় তাহার নাম, মহাজন ধরে।

হরি গোঁসাইর বাণী, তত্ত্বখানি, শুনরে দীনা দুরাশয়।।

 

তত্ত্ব গীতি

৯০নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

আমার দেহখানি গুণমণি গড়িয়ে সে কোথা গেল।

আমার আঠার মোকামের পাশে, কে কোন খানে থাকে বল।।

১। আমার দেহের খবর বল সাধু ভাই,

দেহের মালিক কোথায় থাকে, তারে কেমনেতে পাই।

হয় তার কি আকৃতি, রূপের জ্যোতি, কোথায় তার বসতি বল।।

২। দেহে আট কোঠরা নয় দরজা হয়, কোনখানেতে মহাশক্তির বসতি আশ্রয়।

বল নয় দরজায় কে কে থাকে, জীবাত্মার স্থান কোথা বল।।

৩। ব্রহ্মা বিষ্ণু থাকে কোথা, দয়া করে বল সাধু সেই সব বারতা।

বল হাকিনী কোন খানে থঅকে, শুনিবার বাসনা হল।।

৪। ভাবি আমি নিশি দিনে, মানব দুর্লভ জনম গেল, তত্ত্ব বিহনে।

হরি গোঁসাইর দয়া বিনে, দীনার সাধন না হইল।।

 

তত্ত্ব গীতি

৯১নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

অনিবার্য্যে দেহ রাজ্যের, খবর যেয়ে জেনে নে এবার।

শ্রীশ্রীহরির ভাব সংকীর্ত্তন

জানলে দেহের খবর, ঘুচবে আঁধার, দেহ তোর হবে দীপ্তাকার।।

১। আঠার মোকামের পাশে রয়, একবারে বলিব কত, কথা সমুদয়।

আছে দেহের মালিক সহস্রারে, পরম ব্রহ্ম জ্যোতির্ম্ময় যার।।

২। চতুর্দ্দলে রয় মহাশক্তি, জীবাত্মা ধন তাহার কোলে করে বসতি।

আরও ভ্রু-মধ্যে দ্বিদলেতে, হাকিনী সে রয় নিরন্তর।।

৩। লিঙ্গে ব্রহ্মা করে অবস্থান, পাট মধ্যে মহাবিষ্ণু, থাকে সর্ব্বক্ষণ।

আছে ব্রহ্মা লিঙ্গে মনোরঙ্গে, খেলা করতেছে অনিবার।।

৪। দেহের রাজা হরিধনে, ডাক তারে প্রেম ভরে, আকুল প্রাণে।

হরি গোঁসাই বলে তত্ত্ব বিনে, দীনারে তোর নাই পারা পার।।

 

তত্ত্ব গীতি

৯২নং গান, কতাল-কান্ডয়ালী, রাগিনী-বিরলা

আর কত বুঝাব তোরে বল দেখি আমায়, বুঝাইলে বুঝা মাননা এ ভারি বিষ্ময়।

তোর বুঝ নিতে কি জনম যাবে, সাধন ভজন করবি কবে, শুনে নেরে নিঘুর ভাবে, কে কোন খানে রয়।।

১। নাভি মুলের অগ্রভাবে সূর্যের স্থিতি, তাহার অগ্রে বকায়ু পিত্ত, করে বসতি।

তালু মুলে চন্দ্রের বাস, রাহু করে সর্ব্বনাশ, অকালেতে গিয়ে রাহু গ্রাস করে তাহায়।।

২। ঋতুকালে চন্দ্র সূর্যের যদি হয় মিলন, সেই দিবসে পুর্ণিমা, জেনে লবে মন।

দীপ্ত করে সপ্ত তাল, স্বর্গ মত্ত পাতাল ভূতল, পূর্ণ হয়ে পূর্ণ চন্দ্র জম্মে দুনিয়ায়।।

৩। কাম রাহুর ঐ উত্তেজনে চন্দ্র কম্পিত, গ্রাস করে না যেন সদা থাকো, হুসিয়ার মত।

হবি যদি সর্ব্ব জয়ী, জানিসনে আর গুরু বৈ, রবির সুতে কোন মতে, ছোবে না তোমায়।।

৪। আদিত্য কয় অজ্ঞানতায়, রবি কতদিন, জন্মে জন্মে সাধন বিনে, করলি দেহ ক্ষীন।

হরি গোঁসাইর পদে নত, হয়ে থাকগে মনের মত, দীনা তোরে বলব কত, তত্ত্বেরি বিষয়।।

 

তত্ত্বগীতি

৯৪নং গান,  তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

এবার চিনে লও গে তারে

এবার চিনে লও গে তারে।

পিতৃধন হয় মহারত্ন, আদি শক্তি মুলাধারে।।

১। মুলাধার রক্ত আকার, তাতে ধরে চারটি আকার,

ব হতে চারি অক্ষর, আছে তাই শাস্ত্রের মাঝারে,

মায়া ডাকিনী শক্তি, বয় সে তথাকারে,

সাড়ে তিন প্যাচে তিনি, কুন্ডলিনী, আছে শ্রীহরিকে ঘিরে।।

২। পরম আত্মা পরম ব্রহ্ম, যার হাতে এ ব্রহ্মান্ড,

করতে পারে অসীম কান্ড, জিনিতে শক্তি নাই সংসারে

তিনি কখন সাকার, হয় নিরাকার, এক এক বর্ণ ধরে,

ক্ষণেক আরাম নাই তার বিশ্রাম, কখন বাহির কখন ঘরে।।

৩। ডেকে বলে আদিত্য, হরি গোঁসাই জানে তত্ত্ব,

শিখে নিলে তার মাহাত্ম্য, যাবি তুই আব্রহ্ম ভেদ করে।

বোকা দীনবন্ধু ঘুরে মর, কেন অন্ধকারে,

তুই জ্ঞানের আলো জ্বালাইয়ে, হুশের ঘরে থাকিস পড়ে।।

 

তত্ত্ব গীতি

৯৪নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী - দেবগিরী

গুরু তত্ত্ব না জানিয়ে, আগে কেন ধর মূল,

তাইতে কি তোর প্রেমের গাছে ফুটবে ফুল।

গুরু তত্ত্ব আগে জান মন, প্রেম লতায় বেড়বে দুকূল।।

১। মনরে গুরু তত্ত্ব না জেনে, গুরুর করণ বিহনে, প্রেমের গাছে ফুল ফোটেনা কখনে।

গুরুর করণ করলে পরে, প্রেমের গাছের পাবি মূল।।

২। মনরে ভেবে দেখ ঐ নির্গমে, আগম নির্গম সাধনে, অধর চাঁদকে পেতে পারে সব জনে।

আগম নিগম সাধন বিনে, অধর চাঁদকে পাওয়া ভুল।।

৩। মন রে গুরুর তত্ত্ব যেয়ে জান, গুরুর বাক্য সদা মান, তাহলে তোর হবে প্রেমের অঙ্কুর।

সেই অঙ্কুরে লতা বেড়ে, সেই লতায় ধরিবে ফুল।।

৪। মনরে হরি গোঁসাই বলে গুন, দীনবন্ধু কর সাধন, অসুর হয়ে রবি নাকি চিরদিন।

যে দিন শমন এসে বাঁধবে কশে, পিটায়ে ভাঙ্গবে দুকূল।।

 

তত্ত্ব গীতি

৯৪ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-দেবগিরী

ঘর কে গড়িল কোথা রল তালাস করসিল না।

ঘরের মধ্যে কে রয় সেই সমুদয়, নেহার করে একদিন দেখলিনা।।

১। চৌরশি ক্রোশ ঘরখানি, হাড়ের গাথনি,

সেই ঘরেতে দিয়েছে তায়, চামড়ার ছাউনি।

তার জোড়ায় জোড়ায় কব্জা এটে, গড়েছে ঘর সেই জনা।।

২। জ্ঞানের আলো বসাইল, মাক্তার উপর,

সেই আলো বন্ধ হলে, জগৎ অন্ধকার।

আলো বন্ধ হয় ঐ কু-বাতাসে, সে বিনে আর বন্ধ হয় না।

৩। ঘরের মধ্যে আট কোঠরা, নয় দরজা হয়,

নয় জন দ্বারী নয় দরজায়, দাঁড়াইয়ে রয়।

তার আঠার মোকামের পাশে, আরও আছে আঠার জনা।।

৪। ঘরের মধ্যে কাল কামিনী, রয় নামটি ধরে

নিন্দ্রাযোগে সে সর্ব্বধন, নিয়ে যায় হরে।

ঘরে আরও আছে পঞ্চজনা, ঘরের মালিক আছে একজনা।

৫। হরি গোঁসাই বলে যদি, ধরবি মালিক জন,

অনায়াসে শান্তিপুরে, করিবি গমন।

তোর ঘরের মালিক নয় বহুদুর দীনবন্ধু করগে সাধনা।।

 

৯৫ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুন ভেরী

হরি গুনমণি গড়ে তিনি দেহ রাজ্য করলেন স্থিতি।

রাজ্যে নয়টি জেলা-আঠার মোকাম, মন মন্ত্রী হয় চালকপতি।।

১। নাভির অগ্রে সূয্যের অবস্থান, (তালু) পরে সহস্রারে, চন্দ্র আছে নিরূপন।

তাইতে চন্দ্র, সূর্য্যে দেহরাজ্যে আলো করে দিবা রাতি।।

২। আছে স্বর্গ, মর্ত্য, পাতাল, ভূতল, বীতল, তলাতল, রসাতল এই সপ্ততল।

আছে সপ্ত সাগর রাজ্যের ভিতর, তাতে রয় সাত মহামতি।।

৩। দেহের রাজ হরি দয়াময়, ভক্তিভরে ডাক তারে কাতর হৃদয়।

ও তুই ধরগে তারে সেই অধরে, ছেড়ে কুল মান জাতি।।

৪। দেহের কোন খানে কি খুঁজে বেড়ালে, পরম রতন পায়না কখন, প্রেম ভক্তি নইলে।

ছেড়ে কুটি নাটি ময়লা মাটি, গুরু পদে রাখো আর্থী।।

৫। হরি গোঁসাই বলে গুরু করে সার, মন-প্রাণ সমর্পয়ে মরার মতো মর।

দীনা হওগে রত, মনের মত, মিলবে জগৎ গতি।।


৯৬ নং গান, তাল -ঠুংরী, রাগিনী-বিরহাসী

সাধু বৈলে দাও মোরে

জানিনা সে তত্ত্ব, “কোথায়” কে বসত করে।

দেহ কোথায় স্থিতি, সেই ভারতী, বলে দাও সব দয়াকরে।।

১। কোথায় থাকে হর পার্ব্বতী, গঙ্গা, যমুনা সরস্বতী।

ভগবান কোন পদ্মে স্থিতি, পুরুষ না প্রকৃতি আকারে।।

২। পৃথিবীর বসতি কোথায়, দেহ স্থিতি কোন পদ্মে হয়।

(সাড়ে) চব্বিশ চন্দ্র কোথায় বা রয়, কোন বীজে এই দেহ ধরে।।

৩। নীল পদ্মটি থাকে কোথায়, জিহ্বায় কার বসিত আশ্রয়

(বল) সেই বারতা সাধু আমায়, শুনিবার বাঞ্ছা অন্তরে।।

৪। দীনা বলে তত্তব গুণে, আদিত্যের ঐ দয়াগুণে।

হরি গোঁসাইর শ্রী চরণে, থাকব জন্ম জন্মান্তরে।।


৯৭ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-বিরহাসী

আমি বলবো কিরে আর

তত্ত্ব বিনে যায়না কখন, মনেরি বিকার।

দেহ নবরত্ব না করলি যত্ন,অযত্নে ধন হারালি তোর।।

১। গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী, আরও আছে হর পার্ব্বতী।

দ্বিদলে করেন বসতি, ত্রিবেণরি জল বয়ে নিরন্তর।।

২। ভগবান সে না হয় মানুষ, না হয় প্রকৃতি বা পুরুষ।।

আত্মা রূপে হৃদ পম্মে রয় বেহুশ কখন সাকার হয় নিরাকার।।

৩। পৃথিবীর ঐ দ্বাদশ পদ্মে, এ দেহ স্থিতি তার মধ্যে।

(সাড়ে) চব্বিশ চন্দ্র হস্ত পদে, গন্ডস্থল, বক্ষ ভ্রু পর।।

৪। গুহ্যমূলে চর্তুদ্দলে, স্থিতি হয় জীব মূলাদারে।

রাগবাদিনী জিহ্বা পরে, বিরাজ করে সে অনিবার।।

৫। আবেগ খায় আর আবেগ রান্ধে, নাভিমূলে, দশম দলপদ্মে।

হংস রূপে বিহার করে, সে নীল পদ্ম ঐ সরবর।।

৬। আদিত্য কয় তত্ত্ব ছাড়া, মিলেনা সে অধর ধরা।

হরি গোঁসাইর করণ করা, দীনা করগে এই কর্ম্ম সার।।

 

সৃষ্টি তত্ত্ব

৯৮ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

হরি প্রথম পূর্ন মূলাধার-

তাহার উর্দ্ধবাগে কেউ নাই আর হরি হইতে সৃস্টি সবাকার।

ছিল পূর্বে অন্ধকার, বিশ্ব স্থলা করা হে, ছিলেন জ্যোতির্ন্ময় রূপ নিরাকার।

১। গোলক বীহারি হরি, স্বীয় হেদ দু- ভাগ করি, হয় প্রকৃতি পুরুষ আকার।

দক্ষিণেতে পুরুষ বামে নারী হে- দোহে আনন্দিত হয় অপার।।

২। সৃষ্টি করিবার তরে, বীর্য্যদান করিলে তারে, গর্ভে ধরে শত মন্বন্তর।

শেষে ডিম্বাকারে প্রসব করে হে, হয় প্রকান্ড স্বত্ত্ব বর্ণ ধর।।

৩। লজ্জান্বিতা হয়ে সতী, জলে নিক্ষেপিলা অতি, জলে ডিম্ব ফাটিল তৎপর।

হল বিরাট রূপী, জগৎ ব্যাপী হে, থাকে বহুকাল জলশয্যা পর।

৪। শেষে রাম, কৃষ্ণ, গৌর লীলা করি, জন্মেন সফলা নগরী, হলে যশবন্তেরি কুমার,

সাঙ্গ-পাঙ্গ সঙ্গে পরম রঙ্গে হে, নিলেন হরিচাঁদ রূপ অবতার।।

৫। বলব কি আর পূর্বের ঘটন, শুনরে দীনা অভাজন, সাকার ভজন-গুরুর চরণ সার।

হরি গোঁসাই বলে, অন্ধকারে হে, জীবে ঘুরে মরে নিরন্তর।।


সৃষ্টি তত্ত্ব

৯৯ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

প্রথম হরি পরম ব্রহ্ম জ্যোতির্ন্ময়,

তিনির গোলকেতে স্থিতি হয়, তার অংশ রূপ বিরাট কলেবর।

হইল রাম, কৃষ্ণ, গৌর, দারুব্রহ্ম হে, লীলা ওড়াকান্দী চমৎকার।।

১। সত্য যুগে বিরাট রূপী, ছিলে তুমি --- লোম কুপে অনন্ত ভূবন যার।

বহুকাল অবস্থান রও ভাসমান হে, পরে সৃষ্টি করলে সৃষ্টিধর।।

২। পঞ্চভুতের দেহগড়ে, দিলে এই জীব সৃষ্টি করে, মায়ায় ভুলে নাম লয় না তোমার।

সে সব দুষ্কৃতি পরায়ণগণে হে, কর যুগে যুগে তাই উদ্ধার।।

৩। প্রলয় কালে এই ভুত সবাই, তোমারই ত্রিগুনাত্মীকায়, প্রকৃতিতে লীন হয়ে যায়।

পুনঃ সৃষ্টিকালে, ভুমন্ডলে হে, তুমি সৃষ্টি কর সবাকার।

৪। ধর্ম সংস্থাপনের তরে, রক্ষা হেতু সাধুদেরে, পুনঃ লীলা কর বারে বার।

দীনা বলে এবার, কর উদ্ধার হে, আমি পাতকি জগৎ মাঝার।।

 

তত্ত্বগীতি

১০০ নং গান, তাল-বিষম একাতাল, রাগিনী-খেবেন্ডা

এমন প্রশ্ন কোথা পেলে ভাই।

তাহা বল তুমি মম ঠাঁই।।

১। বেড়াও দেশ বিদেশে, মনের হরিশে, মানুষকে ঠকায়ে ফির, ঐ প্রশ্নের রসে।

নাই তোর গুরুর প্রতি, নিষ্ঠা রতি, হরি নামের গন্ধ নাই।।

২। কাজের কাজে নাই মতি, সদা কু-কর্মে গতি,

জনম ভরি হলনা তোর গুরুতে আর্থী।

শুধু বাঘের মত ভঙ্গি অতি, ভিতরে ময়লা বোঝাই।।

৩। ঐ সব প্রশ্ন ছেড়ে দেও, মুখে হরি গুণ গাও,

প্রেমের মদে মত্ত হয়ে মহানন্দে রও।

দেহের কপটতা সব খুলে দেও, প্রশ্নেতে সার বন্তু নাই।।

৪। আদিত্য কয় অতি দুঃখে, দীনা আছ কি সুখে,

কু-কথায় বিজ্ঞমান হইলি, নাম তোর নাই মুখে।

হরি গোঁসাই বলে সময় গেলে, তরাইবে কোন গোঁসাই।।

 

লোক শিক্ষা

১০১ নং গান, তাল-কহরাবা, রাগিনী-জয় জিয়ালাই

শুন বলিরে মন-

প্রণালীতে কুল পাবিনা কর যেয়ে সাধন।

ভাইরে এক পিতার সন্তান হয়ে, দ্বেষা-দ্বেষী কি কারণ।।

১। স্বরূপ প্রণালী, জিজ্ঞাসিলি, আশ্রয় পাত্রের কথা

না জানিলি সাধন পথের, কোন জায়গায় মাথা।

আরও কয় শাখা, কোন পরিবার, এ সবে কি প্রয়োজন।

২। ধরে সৎগুরু কল্প তরু, রিপু কর বারণ অনায়াসে শান্তিপুরে করিবি গমন।

মিছে তর্ক দিলে, কি ফল ফলে, লোককে ঠকাও অকারন।।

৩। নানা কথা জিজ্ঞাসিয়ে, কি কাজ হবে বল,

সাধন ভজন না করিলে, যাবি রসাতল।

ভাইরে তর্ক ছাড়, রাজি কর, আপন দেহের মালিক জন।।

৪। ভাইরে তোর গুরু, আমার গুরু, একই ভগবান,

তবে আবার কেন কর, দ্বিতীয় গেয়ান।

গুরুর ভক্ত মহৎ, হও দন্ডবৎ, দেখে তাদের বেশ ভুষণ।।

৫। ভাব ভক্তি, প্রেম শক্তি, সদা রেখ মন,

হিংসা নিন্দা গুরু পদে, সব করগে অর্পণ।

ভাইরে ভক্ত দেখলে ভক্তি করে, সেবা কর ভক্তের চরণ।।

৬। হরি গোঁসাই বলে এবার, গুরু কর সার, গুরু বিনে ত্রিভুবনে, বন্ধু নাহি আর।

বোকা দীনারে তুই কৃপা সিন্ধুর, নাম করিসনে অস্মরণ।।

 

১০২ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

সাধন করবি কি তুই মলে, ভজন করবি কি তুই মলে।

গুরু ধরার সময় হয়না, ওজর দেও কাজ আছে বলে।।

১। (ভাবছ) মন্ত্র যেদিন নিব, বন্ধু বান্ধব খাওয়াইব,

যোগাড় যন্ত্র বহুত লব, নাম নিব বাড়ী গুরু এলে।

তোর ওজর যায় না, সময় হয়না, এই ভাবে দিন চলে

আজ নিবি কাল নিবি মন্ত্র, আশায় আশায় দিন খুয়ালে।।

২। আয়ু যদি ঘাষ বৎসর হয়, ওজরে সেই দিন কেটে যায়,

কাছে আসে অন্তিম সময়, মনে কয় গুরু কোথা মিলে।

নাম না নিলেম, কি করিলেম, বয়সের সময় কালে,

এমন সুধা থুইয়ে গরল খেলেম, জনম গেল মায়ার ছলে।।

৩। (যেমন) গরু অমর ঔষধ চিনে, আগে সে ভাবে মনে

খাব ঔষধ মৃত্যু দিনে, আশায় তাই রাখে খাব বলে।

জিহ্বা লেহায় মরণ সময়, কোথায় ঔষধ রলে,

তখন হায় হায় করে, যায় সে মরে, ঔষধ পায়না কোন কালে।।

৪। আয়ু হেতার ঠিক দেওয়া, সেই দিনে হবে যাওয়া,

গুরু কেন না ধরিয়া, কু-কর্ম্মে মজ রসাতলে।

হবেনা তোর সাধন করা, গণার দিন ফুরালে,

যদি গণার দিনের একদিন কমে, সেই দিন পাবি কোথা গেলে।।

৫। আদিত্য বলে এবার, গুরুর চরণ কর সার,

এসব অনিত্য সংসার, মিছে কেন মর আমার বলে।

বোকা দীনবন্ধু গুরু ছাড়া রলি দস্যুর দলে,

তোর দস্যু আত্মা ঠেলে দে রে, হরি গোঁসাইর চরণ তলে।।


১০৩ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

প্রেমিক গুরু ধর চিনে, প্রেমিক গুরু ধর চিনে।

অপ্রেমিকের সঙ্গ নিলে সাধন হয় না কোন দিনে।।

১। শাস্ত্র, শ্লোক বক্তা হলে, বক বক করে সদা চলে

তারে গুরু করতে হলে, অধর ধরা শক্তি মিলবে কেনে।

তার বক বকি সার, ভিতর উসার, সারবস্তু না চিনে

ও তার ঠিক নাইরে দিল, নষ্ট হয় বিল, কানা বকের আগমনে।।

২। অধর ধরেছে যেই জন, বক বকি নাই তার কখন,

ছয় রিপু করিয়ে দমন, প্রেমে সে মগন রাত্রি দিনে।

পাগল ধারা মাতোয়ারা, ধারা বয় নয়নে,

তিনি প্রেম কান্থা করিয়ে ধারণ, নাম জপে সে মনে প্রাণে।।

৩। প্রেমিকের এই নশানা, সৎমতি, সংকল্পনা,

তরায় দিয়ে উপাসনা, যাহাতে উদ্ধার হয় জীবগণে।

অধর চাঁদকে যে ধরেছে, ধরগে সেই জনে,

তবে অধর মানুষ পাবি ধরা, ঐ মানুষের দয়া গুণে।।

৪। আদিত্য বলে দুঃখে, ভুলিসনে বক বকির বকে,

সদগুরু ধর সুখে, উদ্ধার হবি তার পরশনে।

ওরে দীনা মুর্খ পিতৃধন সূক্ষ্ম পতন দিনে দিনে,

প্রেমিক হরি গোঁসাইর স্বভাব নিয়ে, হুসের ঘরে থাক চেতনে।।

 

লোকশিক্ষা

১০৪ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

গুরু জেনে কেন ধরনা,

গুরু চিনে কেন ধরনা।

মন গুরু হয় সর্বশ্রেষ্ঠ পরের কথায় ভুলিও না

১। কেহ করে এই প্রবঞ্চ, মাতা পিতার গুরু বংশ,

নাম না নিলে হরি ধ্বংশ, গুরুত্যাগী কেউ তোকে ছোবেনা।

ঐ কথা ভাই বাজে কথা, তাতে মন দিও না

কুল গুরু না ধরিলে, কখন গুরু ত্যাগী হয় না।।

২। কুল গুরু বংশ ধরে, বোবা পাগল হলে পরে,

তবে নাকি গুরু করে, কেমনে শিখিবি সাধনা।

নিজে না জানিলে, ধর্ম্ম শিকাতে পারেনা,

এমত সিদ্ধান্ত, গীতায়, ভাগবতে আছে নিশানা।।

৩। যার কাছে চলে যায় মন, গুরু করে পুজ চরণ।

তাঁরে ভুলিও না কখন, জ্ঞান ক’র পূর্ণ কেলে সোনা,

ভাব ভক্তি ধন, প্রেমিক যে জন, গুরু হয় সেই জনা,

প্রেমিক গুরু ধর, করণ ধর, হরিনাম সদা জপনা।।

৪। কলিতে নাই দীক্ষা শিক্ষা, ভুলে যাও অন্য সব কল্পনা,

হরে নাম কেবলম্ কলৌ নাস্তব্য অন্যথা,

মনের ঘুচাও ময়লা, মন দুদিলা কুটিনাটি কু-ভাবনা।।

৫। বলব কি ভ্রান্ত নরগণে, দীক্ষা নেয় না ব্রাহ্মণ বিনে,

যজ্ঞসূত না দেখলে নয়নে, কঠিন দেহে ভক্তি জম্মেনা।

আদিত্য কয় ব্রাহ্মণ যে হয়, ব্রহ্ম থাকে জানা,

হরি গোঁসাইর বাণী, অক্ষয় জানি, দীনবন্ধু ছাড়িও না।।

 

লোকশিক্ষা

১০৫ নং গান, তাল-খেম্টা, রাগিনী-লম্পট

চিনিয়ে সদ গুরু কে ধর

উচ্চ কুলের গুরু ধরলে কেমনে হবি পার।

তারা জাতির গৌরব নিয়ে চলে, চায় না শিস্য তরাবার।।

১। গুরুর কাছে উচ্চ নীচ, ভিন্ন জাতি নাই,

(যেমন) সর্ব্বজীবকে সমজ্ঞানে, নাম দিয়ে করবেন উদ্ধার।।

২। গুরু শিষ্য একই আত্মা, পিতা পুত্রের ভাব,

তার বিতরে দেখরে ভাই দ্বিথীয় স্বভাব।

তারা নীচ বলে ঘৃণার ছলে, ছোঁয়না ভারি অহঙ্কার।।

৩। ও দুষ্ট মন তোরে কই গুণ, ব্রাহ্মণ বল কাকে

ব্রহ্ম জানাইতে ব্রাহ্মণ শাস্ত্রনে দেখে।

কেবল দ্বিজ দেখলে ভক্তির উদয়, ভক্তি নাই অন্য জাতির উপর।।

৪। আদিত্য কয় বলি তোমায় শুনে নাও এবার,

দিনে দিনে সাধন বিনে দিন হতেছে পার।

হরি গোঁসাইর বচন, দীনা দুর্জ্জন, জানিয়ে সদ্ গুরু ধর।।


লোক শিক্ষা

১০৬ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

এবার বেদ বিধি দাও ছেড়ে,

এবার বেদ বিধি দাও ছেড়ে।

ও তুই বেদ বিধি জড়িয়ে রলি, হরি পাবি কেমন করে।।

১। দেখ বেদ বিধির উপর, হরিধন রয় নিরন্তর,

হও যদি বেদ বিধি পার, তাহলে পারিবে তাহারে।

ময়লা বাঁধে মনে, বেদ বিধানে ময়লা নাহি ছাড়ে,

যদি হরি পেতে আশা কর, রাগের ঘরে থাক মরে।।

২। যেমন ঐ সমুদ্রেতে, এনে বালু তুফানেতে,

নিদারুন চর ফেলে তাতে, তেম্নিরূপ বেদ বিধিতে করে।

(লোকের)মনের ভ্রান্ত, বেদবিধান্ত মতে কার্য্য করে,

ঐ বেদের বিধান না না হইলে মনের ময়লা যায় না দুরে।।

৩। দেহ গুরুকে দিয়ে খাস প্রজা থাক হয়ে,

খাসমহলে নাম লেখাইয়ে, থাক সেই খাস মালিকের ঘরে।

এবার হরি নামের মাজন সদা, রেখ অন্তপুরে,

কাটবে দেহের ময়লা, মন দোদিলা, কোটি জন্ম জন্মান্তরে।।

৪। ডেকে বলে আদত্য, হইল বেদ বিধি যত,

তাতে নাই রে সার পদার্থ, হরি নামে সর্ব্ব পাপ হরে।

হরি গোঁসাই বলে, গয়া গেলে, পিন্ডে কি পাপ যায় রে,

ভেবে দেখ নাম সূক্ষ, দীনা মূর্খ, নামে কোটি কুল তরে।।


লোক শিক্ষা

১০৭ নং গান, তাল-খেমটা, রাগিনী-লম্পট

ক্রোধের বাধ্য থেক নারে ভাই

ক্রোধে ঘটায় মহাপ্রলয়, মান্য গণ্য নাই।

ভাইরে ববে এসে ক্রোধের বশে, নিয়ে রলি সব বালাই।।

১। ক্রোধ অর্থাৎ রাগ বলে, বিপদ সে ঘটায়,

আত্ম-হত্যা, নরহত্যা ক্রোধ দ্বারা হয়।

(সোনার) রাজ্য পুড়ে, শ্নশান করে, স্ব চক্ষেতে দেখতে পাই।।

২। কারাগার বাস অর্থ বিনাশ, গুরু ভক্তি নাশ।

এই সব ব্যাপার হল তাহার, ক্রোধী ব্যক্তির যশ।

আছে এম্নি রীতি, ক্রোধী ব্যক্তি, তাদের শত্রুর অভাব নাই।।

৩। ক্রোধ উত্থাপন হইলে, সদজ্ঞান থাকেনা;

আপনকে পর করতে পারে, এই তার নিশানা।

তিনি আপনি আপনার শত্রু, শত্রু হয় তার আপন ভাই ।।

৪। আদিত্যের আশ, ক্রোধেরই বশ, দীনা হয়োনা;

সতত সাবধানে থেক, ভুলে যেয়ো না।

হরি গোঁসাইর বচন, ক্রোধ দুর্জ্জন, ভক্তির দেশে দিও ঠাঁই।।

 

লোক শিক্ষা

১০৮ নং গান, তাল-খেমটা, রাগিনী-লম্পট

জগৎকে প্রেম কর এবার

না করলে প্রেম কোন জনম, কুল পাবেনা আর।

ভাইরে নিজকে যেমন ভালবাস, তেমনি ভাল বাস পর।।

১। হিন্দু খৃষ্টান, আর মুসলামান, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি,

(ধর্ম্ম) অবলম্বি বর্ণ হিংসা করনা অতি।

ভাইরে লোক দেখে তায়, জাতির নির্ণয়, করার সাধ্য নাই তাহার।।

২। (কোন) মুচিকে দেখে ব্রাহ্মণ অনুমান করা হয়,

(আবার) ব্রাহ্মণ দেখে নিকৃষ্ট জাতি অনুমান হয়।

যখন পরিচয় হয় হেন সময়, অবিশ্বাস হয় তার উপর।।

৩। যে মুচিকে দ্বিজ ভ্রম হইয়াছিল, তখনে তার প্রতি ঘৃণা আপনি আসিল।

যাকে অপছন্দ হয়ে ছিল, দ্বিজ শুনে ভক্তি অপার।।

৪। এই ভ্রান্তি দুর কর গিয়ে, ওরে পাষাণ মন,

সর্ব্ব জীবে সম জ্ঞান, রেখ সর্ব্বক্ষণ।

তবে জগৎকে প্রেম করা হবে, গুরুবৈ জানবি না আর।।

৫। সর্ব্ব জীব ইশ্বরের সন্তান, এক ভাই সবাকার,

শান্ত্রে   পাওয়া যায় সিদ্ধান্ত, ব্যাক্ত চরাচর।

ভাইরে এক ভিন্ন দ্বিতীয় নাস্তি, জ্ঞান করিও অনিবার।।

৬। উচ্চ বাচ্য জাতিভেদ, করিও না ভাই,

জাতিভেদ মহাপাপ বলে, প্রমানেতে পাই।

শুধু একই পিতার সন্তান হয়ে, ভাই ভাই বিরোধের সঞ্চার।।

৭। জাতি হিংসায় এ দুনিয়ায় গেল রসাতল,

ছেড়ে দেও সব, হিংসা গৌরব, মনেরি গরল।

করে জগৎকে প্রেম, দীনা অধম, আগম নিগম সাধন কর।।

 


লোক শিক্ষা

১০৯ নং গান, তাল-খেম্টা, রাগিনী-লম্পট

হেরিয়ে মানুষের যত কর্ম্ম কারখানা।

এ সে ঘোর কলিতে দুষ্কর্ম্মেতে, কত পায় দুঃখ যাতনা।।

১। মাতা পিতার গুণে পুত্রের, শান্তি অশান্তি, স্বাস্থ্য চেহারা কিম্বা, শরীরের কান্তি।

কারও অতুল সম্পদ, কেহর যায় বাদ, কারু জনম ভরি দেনা।।

২। হলে মাতা পিতা অশিক্ষিত, নিজ সন্তানেরে,

ক্রোধতরে অভিমাপ দেয়, সামান্যের তরে।

তাতে ব্যধি যুক্ত, মেয়ে পুত্র, দুঃখ যাতনা ঘুচেনা।।

৩। ভাগ্যক্রমে পুত্রের ঘরে, যদি সন্তান হয়,

কর্ম্ম অক্ষম করে দুষ্কাম, ব্যাধিগ্রস্ত রয়।

পেয়ে খেতে কষ্ট, অসন্তুষ্ট, হরিনাম মুখে আসে না।।

৪। এই ভাবে তার পূর্ব্ব পুরুষ, হীন হইয়ে রয়,

(শাপে) অর্থের অভাব, কু স্বভাব, আর ব্যাধি নাহি যায়।

করে কম্ম মন্দ অসৎ সঙ্গ, দিবা নিশি কুভাবনা।।

৫। সুশিক্ষিত অতি জ্ঞানী, মাতা পিতা হলে,

অভিশাপ দেয় না কখনে, বহুকষ্ট পেলে।

তারা ভাবে মনে, ক্ষুদ্র জ্ঞানে, বলে মন্দ রাগ হব না।।

৬। (আদিত্য) বলে রিপুর ছলে, জ্ঞান হারাইও না,

হরি গোঁসাইর রণ নিয়ে কর সাধনা।

বোকা দীনবন্ধু সাধন বন্ধু, গুমানে হারাইওনা।।

 


লোক শিক্ষা

১১০ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

কি গান গাব কেবা শুনে

কি গান গাব কেবা শুনে।

লোকে কু-কর্ম কু-কথা নিয়ে, মত্ত থাকে রাত্রিদিনে।।

১। কেহ গুরুর বাক্য ধরে, সদ্ভাবেতে থাকলে পরে,

নিন্দুকে তার নিন্দা করে, থাকে আর কলঙ্কের সন্ধানে।

অন্তরেতে ঐ ভাবনা থাকে সর্ব্বক্ষণে,

তাদের নাই মন সুহ্ম দেহ রুক্ষ, সদা ভন্ডামি রয় মনে।

২। সাধুর বেশ ভুষণ দেখিলে, নিন্দুক যায় তার নিন্দার ছলে,

সাধুর সঙ্গে কথা বলে, পূর্ণ অহঙ্কার নিয়ে প্রাণে।

বলে কটু বাক্যে সে অকথ্য ঐ দুষ্ট বেইমানে,

এই ভাবে দস্যুত্ব করে, ঘুরে বেড়ায় গায়ের গুমানে।।

৩। মন ভাঙ্গায়ে সাধুজনার, পাঠায়ে দেয় কুমতির ঘর,

সাঁতারিয়ে অকূল পাথার, মারা যায় নিদারুন তুফানে।

তাহার সাধন ভজন হয়না কখন, দুষ্ট কলির টানে,

শেষে সারা জীবন, যায় অকারন, গুরুর করণ সাধন বিনে।।

৪। আদিত্য কয় বলি তোরে, দিন খুয়ালি জুলুম করে,

যাবি যেদিন যমের ঘরে, কি জবাব দিবি তারি সনে।

তখন কোথা রবে হিংসা গৌরব শমনের শাসনে,

হরি গোঁসাই বলে, গৌরব ফেলে, দীনা ঐ নাম বল বদনে।।

 

লোক শিক্ষা

১১১ নং গান, তাল গড়খেমটা

কোন প্রশ্নয়ালা গানে শুধু লোক মজায়েছ

তোর ভাব, প্রেম, সঙ্গে নাই সম্বন্ধ, কেবল দর্পে কাল কাটায়েছ।।

১। লোক ঠকাতে প্রশ্নের গান শুনাও, দুষ্ট মুখে পরম সুখে, সুনাম নিয়ে যাও।

মন খোলসা নও, গরল ধরে খাও, প্রশ্নে গান সব গেয়ে গেয়ে, আমার মন জহুরী চেতায়েছ।।

২। ভাব দেখায়ে রঙ্গের মোসন দেও, বাঘের সম গর্জ্জন মেরে, দুই চক্ষু পাকাও। 

দেহে সরলতা নও, ময়লা ভরে লও, যত সতের প্রাণে কষ্ট দিতে সেই হেতু ভবে জন্ম নিয়েছ।।

৩। লোক ভুলাতে ভাবেরই গান গাও, গুরুর করণ সাধন ভজন, সে পথে না যাও।

ও তোর শুষ্ক কাষ্ঠের নাও, মাঝে মাঝে বাও,

যদি শমন ঘোলায়, ডুবায় সে নাও, এড়াতে সন্ধান কি তার করেছ।।

৪। হরি গোঁসাই বলে হুসিয়ারী, সরল রাস্তায় না হাঁটিলে, কষ্ট হয় ভারী।

(নইলে) কেন মিলবে সেই শ্রীহরি, দীনা তুই ভজনে বাদ পড়েছ।।


লোক শিক্ষা

১১২ নং গান, তাল-একতালা

হয় না কথায় কাবু মাষ্টার বাবুম, বিদ্যার গৌরবে।

বিদ্যা কামাই করে তর্ক ভরে, লোক ঠকায় হিংসা রবে।।

১। কেবল তর্কেরি বাহার, মান্য নাই গুরু জনার, বলে যথা কুৎসিত কথা, মাতা-পিতার পর।

হইল বুড়া বুড়ি দোষী ভারী, স্ত্রীর মান্য রয় ভবে।।

২। অষ্ট শক্তি মাতা-পিতার, দেহ গঠন তাতে সবার, বিদ্যার জোরে মা বাবারে, বলে কটুত্তর।

দিয়ে প্রাণে কষ্ট, শাপ ভ্রষ্ট, হয় পূর্ব্বাপুরুষ সবে।।

৩। বাবুর গলে মালা নাই, শুধু লুঙ্গি পরা চাই, ধর্ম্ম পূণ্য হইল শূন্য, মান্য গন্য নাই।

হরি ভক্তের পায়, মাথা না নোয়ায়, ভাব ভক্তি প্রেম অভাবে।।

৪। মাষ্টার কথায় কাতর নয়, হরি ভক্ত দেখলে তায়, তর্ক ভরে জব্দ করে, কু নিরে ডুবায়।

ডুবে সাধু জনা সাধন বিনা, ভব কূপ বৌরবে।।

৫। দীনবন্ধুর এই বাণী, পাপের ভার সয়না মেদিনী, পাপের ভরে বসুন্ধরে, শস্যের হয় হানি।

এখন খেতে কষ্ট, ব্যাধি গ্রস্থ, হয়ে থাকে এই ভাবে।।

 

লোকশিক্ষা

১১৩ নং গান, তাল-কাহারবা, রাগিনী-জয় জিয়ালই

কর্ম্মে করিস নারে ভুল

ঐ দেখ সব চেয়ে কর্ম্ম শ্রেষ্ঠ কর্ম্ম সর্বমুল।

যদি করলে কর্ম্ম মিলে ধর্ম্ম, কর্ম্ম বিনে, নাইরে কুল।।

১। কর্ম্ম বলে সকল ফলে, স্বর্গ কি নরক, কর্ম্মে হয় অসাধ্য ব্যাধি, নিতান্ত দুভোগ।

কেহ কর্ম্ম গুনে যায় গোলকে, কর্ম্মে পায় অকূলের কূল।।

২। রাজা অন্বরিসের ছেলের, দশ বৎসর আয়ূ ছিল, কর্ম্ম গুণে অযুত বৎসর, আয়ূ সে পেল।

গেল যম দন্ড কর্ম্ম বন্ধন, আনন্দ হৃদয় আকুল।।

৩। (ঐ দেখ) মুনি ছিল বিশ্বামিত্র, গাধির নন্দন, মেনকার সঙ্গে তাঁহার, হইল মিলন।

তাইতে জন্মে কন্যঅ শকুন্তলা, কুরু পান্ডবের আদিমুল।।

৪। এই মত দেখ চেয়ে, কর্ম্মেরি বিহন, (অধম) দীনবন্ধু পড়ে রল, না হল সাধন।

দয়াল হরি গোসাই, উপায় কি তাই, পেলেম না চরণের ধূলা।।

 

লোক শিক্ষা

১১৪ নং গান, তাল ঠুংরী, রাগিনী-কেলেংড়া

হরি বল মন দূরে যাবে কাল শমন

জীবের পরম ধন এল বহু যুগ পর।

ঐ দেখ হরি বিনে, কলির জীবের, গতি নাইরে আর।।

১। সত্য ত্রেতা দ্বাপরেরতে, এ নাম ছিল গোপনেতে,

জীবের পরম ভাগ্যেতে, করিল প্রচার।

মনে প্রানে ঐক্য করে, এনাম নেরে বদন ভরে,

অনায়াসে যাবি তরে, শঙ্কা নাইরে আর।।

২। ছেড়ে দে তাস, পাশা, দাবা, তন্ত্র-মন্ত্র কর জপা,

কলিতে হরিনাম জপা, অন্য কথা নাই।

৩। হরি মানব কুলে আসিয়ে যশবস্তু সূত হয়ে,

জন্ম নিল সফলা ডাঙায়।

গোসাই রাম কান্তের বরে, অন্নপূর্ণা মাতার ঘরে,

এল পূর্ণ শক্তি ধরে, করতে জীব উদ্ধার।।

৪। ভেবে হরি গোসাই কয়, হরি এল এ ধরায়

হরির তরী ধর রে সবাই।

শুনরে বোকা দীনবন্ধু, ডাকলি না অনাথের বন্ধু,

কেমন করে ভবসিন্ধু, হয়ে যাবি পার।।

 

লোক শিক্ষা

১১৫ নং গান, তাল-কাওয়ালি, রাগিনী-ঝাঝিট

হরি জীবের জন্য অবতীর্ণ সফলা গ্রামে আসিয়া।

তিনি অনর্পিত ধন করে বিতরণ, আপনি হরি যাচিয়া।।

১। মায়ের কড়ার শুধিবে বলে, বুদ্ধ তপস্যারি ফলে, এল নিচু হইয়া।

কারু জাতির গৌরব রবে নারে, যারে একচাবি হইয়া।।

২। গৌরলীলা সাঙ্গ করি, শ্রীনিবাস রূপ ধরি, গোপন লীলা করিয়া।

করে শেষ লীলা ঐ ঈশান কোনে, পূর্ণ শক্তি ধরিয়া।।

৩। পতিত পান নামটি ধরি এল উড়িয়া নগরী, পতিতের লাগিয়া।

হবে পতিতি আবাদ ছাড় বিবাদ, লও হরি বল মাত মাতিয়া।।

৪। হরি গোঁসাইর এই সুবচন, দীবন্ধু এই পরম ধন, দিসনারে তুই চাড়িয়া।

এবার দিন থাকিতে শ্রীহরির নাম, নেওনা বদন ভরিয়া।।


লোক শিক্ষা

১১৬ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী - উল্টাকেশী

সাধন এক ভাবে চলেনা, সাধন এক ভাবে চলেনা।

গুরুর করণ অসীম তারণ, যে ভাবে যার আছে জানা।।

১। জগতে এক হরি ধন, সাধন হয় বহুবচন,

যেই ভাবে ডাকে যে জন, সেই ভাবে দেখা পায় সেই জনা।

কেহ আল্লা কেহ হরি, বুদ্ধ কেলে সোনা,

মনের গরল ফেলে সরল, নৈলে একমন ভিন্ন দেখা পায়না।।

২। যে পেয়েছে নামে মধু, পান করে সে হয় সাধু,

সাধন করিছে শুধু, নিরলে ভাবে তার ভাবনা।

গৃহে কিবা জঙ্গলেতে পাহাড় ঠিকানা,

তারা সাধন করে বিরাগ ভরে, নিয়ে গুরুর উপাসনা।।

৩। যাদের কুমতি লাগে, সুমতি আগে ভাগে,

কায় তারে ছয় রপু ছাগে, ধর্ম্মের দিক ভক্তি জ্ঞান থাকেনা।

টাকা পয়সা অর্থ সম্পদ, জোর জুলুম কারখানা,

হিংসা নিন্দা পরদারি, ডেকে লয় সে যেতে দেয়না।।

৪। আদিত্যের এই বচন, দীনা তুই করিস সাধন,

রিপুর বস হইসনে কখন, পানি সেই অধর কেলেসোনা।

হরি গোঁসাইর বাক্য ধরে করগে সাধনা,

তুই ধর্ম্মের প্রতি রাখিস মতি, শমনের ভয় আর রবে না।

 

লোক শিক্ষা

১১৭ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী কেলেংড়া

হিন্দু আর মুসলমান, সবে এক পিতার সন্তান

ছেড়ে সবে অভিমান থাক ভুতলে।

পতন হইওনা ভাই হিংসা আনলে।।

১। এবার দেখতেছি দুনিয়ায় আসি, মারা মারি দ্বেষা দেষি,

কতই যে রাশি রাশি হতেছেরে ভাই।

মুখেতে নাই আল্লা হরি, তাতে প্রাণে কষ্ট ভারি।,

সহ্য না করিবে হরি কোন কালে।।

২। ভবে ভাই ভাই সবাকার বিবাদ কৈরনা আর,

হিংসা হিংসি করে সবে, হওনা পয়মাল।

যেই আল্লা সেই হরি, মিছে কর বাড়াবাড়ি,

আখেরেতে যেয়ে জবাব দিবা কি বলে।।

৩। মনে ভেবে দেখ ভাই গণ, এক মাটিতে গঠন,

এক মাটিতে চলাফেরা, সেই মাটিতে পতন।

কোথা রবে ঘর বাড়ী যেতে হবে এসব ছাড়ি,

আমার আমার দিন দুই চারি, যারা সব ফেলে।।

৪। ভাইরে যাদের আছে যেই ধর্ম্ম সবে কর তার কর্ম্ম,

কেহ কারব ধর্ম্ম নিন্দা কৈরনা।

ধর্ম্ম নিন্দা করলে পর, পাবানা আর কুল কিনার

দুর্গতি ঘটিবে তার, অন্তিম কালে।।

৫। ভাইরে ভেবে দেখ এই ভাবে, জোরামালী করে সবে,

কতদিন আর থাকা যাবে, ভাবেরি মাঝার।

বোকা দ্বীনবন্ধু কর কর্ম্ম, তবে পাবি হরি ব্রহ্ম,

তবে যদি তেযতে পার, ঐ ধর্ম্ম বলে।।

 

লোকশিক্ষা

১১৮ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

এবার মৃত্যু কাছে এল, এবার মৃত্যু কাছে এল।

আছে যার যেই ধর্ম্ম, সে তার কর্ম্ম করে সবে বেহেস্তে চল।।

১। হিন্দুস্থান পাকিস্তানে, হিন্দু আর মুসলমানে,

সুস্থ প্রাণে একমনে, যাদের যেই ধর্ম্ম সে তাই পাল।

দ্বেষহিংসা ছেড়ে দেও সবাই, রসাতল সব গেল,

ঐ দ্বেষ হিংসা দুষ্টামির পাপে, ব্রহ্মান্ড ডুবিয়া গেল।।

২। যত হিন্দু মুসলমান, সবে এক খোদার সন্তান

কেউ জপেনা খোদার নাম, মিছে পাপ কর্ম্মে দিন ফুরাল।

এখন পাপে ধরা, বোঝাই সারা, করে টলমল,

তাইতে হরি ক্রোধ করি, ধ্বংসের পথ গঠন করিল।।

৩। এমন সোনার রাজ্যে অগ্নি লেগে, মানব কিবা কীট পতঙ্গে,

পশু পাখী অগ্নির সঙ্গে, পুড়ে সব ভষ্মময় হইল।

খোদার ঐ ক্রোধ অনলে জীব সকল পড়িল,

উঠল প্রলয় হুহুংকার বাজল সংসার, ক্রদনের ঐ রোল উঠিল।।

৪। দীনবন্ধুর এই বাণী, পাপের ভার সয়না মেদিনী,

উদ্ধারের সেই কর্তা যিনি, এ ধরা ছেড়ে লুকাইল।

যত হিন্দু মুসলমান, ছেড়ে গুমান, আল্লা হরি বল,

এবার মালিক জনকে রাজী করে ভবের পারি বেয়ে চল।।

 

লোকশিক্ষা

১১৯ নং গান, তাল-গড় খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

তবু হরি নাম করেনা, তবু হরি নাম করেনা।

লোকে দুষ্কৃতি স্বভাবের দোষে, কত পায় দুঃখ যাতনা।।

১। শ্রীহরি ভাবে মনে, দিব দুঃখ জীবের প্রাণে,

নাম নিবে প্রাণ পণে, পাপ কর্ম্মে কখনও যাবেনা।

জীবে পেলে রুষ্ট, ভাবে কষ্ট, ঐ কর্ম্ম ভুলে না,

আর গালি মারে হরির ঘাড়ে, তবুও সংজ্ঞান আসেনা।।

২। পোড়া পোড়ি, মারামারি, হতেছে জগত ভরি,

তাই দেখে হাহাকার ভারি, ভাবে তাই দেহমান রবে না।

হায় হায় কি করিব, কোথা যাব, সদা এই কল্পনা,

কেবল দুব্বুদ্ধি আর অসার চিন্তা, হরি নাম মুখে আসেনা।।

৩। যেমন মাছ মাছি মশা, মৃত্যুস্থানে করে বাসা,

তেম্নি মানুষের দশা, দেখতেছি কলিতে নিশানা।

প্রাণে হয় হত তবু যত, অসৎ পথে হানা,

যেখানে হয় না সংকীতর্তন, তাতে কখন মন চলেনা।।

৪। আদিত্য কয় দিন হয় গত, দীনার মন হলনা রত,

হয়ে রিপুর বশীভুত, কুচিন্তা কর কেন জপনা।

হরি গোঁসাই বলে তরতে হলে, হরি নাম ভুইল না,

ও তুই হাতাকারে পড়বি ফেরে, ছেড়ে দে সব কুভাবনা।।


বিচ্ছেদ

১২০ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-ভুরুপানী

আমার মনের আগুন নিবাইবগো

মনের মানুষ পেলেম না এদেশে।

আমার মনের আগুন জ্বরছে দ্বিগুণ গো, হারে দগ্ধ হয় হৃদি আকাশে।।

১। আমি মনের মানুষ পেতম যদি, তারে বলতেম দুঃখ নিরবধি।

আমার ঘুচে যেত আশা নদী গো, হারে মানুষ ধরিব কোন বেশে।।

২। আমি কেন বা এই দেশে এলেম, আমার বন্ধু বান্ধব হারইলেম।

আমর মনের মানুষ না পাইলেম গো, হারে আমার আপন কর্ম্ম দোষে।।

৩। আমি মন মানুষের দেশে যাব, ও তার চরণ ধরে সদা রব।

আমার মনে আগুন নিবাইব গো, হারে ও তার চরণ সহবাসে।।

৪। দীনা কয় মোর মন উদাসী, আমি হব ওড়াকান্দী বাসী।

হব হরিচাঁদের চরণ দাসী গো, (হারে) হব মনেরই উল্লাসে।। 


১২১ নং গান, তাল-একতাফ, রাগিনী -শানিরা

সখী নিল না রাখিল আমায় এসুখ সংসারে।

আমি সহিতে না পারি, ওহে সহচরী, উপায় কি বল আমারে।।

১। হরি হরন করে নিল মোর প্রাণ, রাখালনা মোর একুলমান,

সে বিনে বাঁচেনা পরাণ, ও গো ও প্রাণ সজনী।

ওসে অনাথিনী বলিয়ে, আমায় গেল ফেলিয়ে, আমি তারে ধরি কেমন করে।।

২। আমার মনের আগুন জ্বলে সদায়, কোথ যেয়ে এ প্রাণ জুড়াই,

বন পোড়া হরিণের মত, আমি ঘুরিয়ে বেড়াই।

আমি কার কাছে যাব মন কথা কব, আমার অন্তরের দুঃখ রয় অন্তরে।।

৩। সখী মোর অন্তরে নাই কোন সুখ, দুঃখে আমার ফেটে যায় বুক

কবে আমি দেখব তার মুখ, কবে যুড়াব জীবন।

আমি তার কাছে যাব, এদেশে না রব, আমার মন প্রাণ দিয়াছি তারে।।

৪। আমি ঐ দুঃখেতে হয়ে দুঃখি, আকুল হৃদয়ে ডাকি,

হরি আমায় কর সুখী, আমার অন্য আশা নাই।

দীনা বলে মন বাসনা, পূর্ণ কেন হলনা, হরি নিদয় কেনে হইলা মোরে।।

 

বিচ্ছেদ

১২২ নং গান, তাল-ঝাঁপ, রাগিনী-ভুরুপানি

আমার কর্ম্ম দোষে হলেম দোষী রে, এখন আমি কার কাছে দাড়াব।

নিজের দোষে দোষী করে রোষিরে, হারে দুঃখ কার কাছে জানাব।।

১। আমার কর্ম্ম দোষে এই ঘটিল, আমার অশান্তিতে জীবন গেল

আমার শান্তির প্রয়ার ভেঙ্গে গেল, হারে এখন কোথা চলে যাব।।

২। আমি কার কাছে কই মনের কথা, এমন বান্ধব পাব কোথা।

(আমার) কে বুঝিবে মন ব্যথারে, হারে কবে প্রাণে শান্তি পাব।।

৩। হরি আমায় কেনে দিলে ভবে, আমার এই ভাবে কি জনম যাবে।

আমার হেন ভাগ্য কবে হবে, হারে কবে হরির দেখা পাব।।

৪। দীনা বলে এই কি ছিল, আমার জনম নিয়ে কি ফল হল।

হরি গোঁসাই আমার উ পায় বল, (হারে) কবে কর্ম্ম পাশ ঘুচাব।।

 

বিচ্ছেদ

১২৩ নং গান, তাল-ঝাঁপ, রাগিনী-কাহিনা

আমি উপায় কি করিব রে, আমার মন মানে না।

আামর মন বলে যাই চলিয়ারে- দিবা নিশি এই ধারণা।।

১। আমার বিবেক বন্ধু বিমুখ ছিল, বাধ্য হয়ে কাছে এল।

আমার অজ্ঞান অন্ধ ছেড়ে গেল, জন্মে জ্ঞান সুমতি জনা।

২। আমার দুষ্ট ভগ্নি হয় কুমতি, যাত্রা কালে করে স্তুতি।

(অনুরাগ) ভ্রাতা চঞ্চলা অতি, আমায় গৃহে রৈতে দেয় না।।

৩। আমি মায়া মাতা তেজ্য করে, যাব এখন কি প্রকারে।

আমি সদা ভাবি তাই অন্তরে, আমার মায়া মাতা আর ছাড়ে না।।

৪। হরি গোঁসাইর করণ চোটে, মায়ার বন্ধন যাবে কেটে।

এবার দীনা বলে নিস্কপটে, (চলে) যাব কেন শুনি মানা।।

 

১২৪ নং গান, তাল-ঝাঁপ, রাগিনী-অরুন ভাণ্ডার

ভাবি অন্তরে-

আপন বলতে কেউ নাই সংসারে।

আমি যারে আপন আপন বলিরে, হারে আমার সে হয়ে যায় পররে।।

১। আমার সুজন বন্ধু ছিল ছয় জন, তারা বিমুখ হল, ওহে পিতা, মায়া মাতা, তাজ্য করে গেল।

আমি ছয় বন্ধুকে করে বাধ্য রে, (হারে) কবে ওড়াকান্দী যাব রে।।

২। আমার আমোদ আহ্লাদ দুটি পুত্র, করে নাম সংকীর্ত্তন; কুমতি মহিষী এসে, করিতেছে বারণ।

আমি সামর্থ ভ্রাতাকে দিয়েরে, হারে তারে তাড়াতেছি ভারিরে।।

৩। আমি চৌষট্টি মহন্তের সঙ্গে, হইব মিলন, শান্তি হরির যুগল রুপে, রাখব দুট নয়ন।

আমি রূপের ঘরে দিয়ে আখিরে, হারে বসে রব রূপের কাছেরে।।

৪। স্বামী হরি চরণ রূপে কিরণ, হেরিয়ে সদায়, চাঁদ বদনে আকুল প্রাণে হরিনাম গুণ গায়।

পায়না এক বিন্দু তার, দীনা বর্ব্বর, (হারে) ঐ রূপ পায়না আপন দোষেরে।।

 

বিচ্ছেদ

১২৫ নং গান, তাল-একতাফা, রাগিনী-শনিরা

বন্যার তরঙ্গে মরি আতঙ্কে,

প্রণ মানেনা ভেবে মরি আমি উপায় কি করি,

মরি প্রলয় অনলে-বিরহ বিষানলে, তরঙ্গ তাই হল ভারি।।

১। আমার প্রেম মহিষী হল আকুল, ভাব রসিকে হল বেকুল,

নয়ন জলে ভাসে দুকুল, তাতে ধরা ভেসে যায়।

এবার উঠে গেল তুফান, ক্ষণে ক্ষণে অজ্ঞান, অসুস্থ সে আছে পড়ি।।

২। তুফান স্বর্গ মর্ত্ত পাতাল ভূতল, ছেদন করে সে সপ্ত তাল,

ঢেউ লাগিয়ে মুক্তি তরু, আমার সকল ভেসে যায়।

আমি উপায় কিবা করি, ডুবে বুঝি মরি, আমার দেহ বাঁচাই কেমন করি।।

৩। এবার প্রেম বন্যা হইল ভারি, ধৈর্য্য হতে নাহি পারি,

কি করিতে কি না করি, প্রাণ মোর হতাশ হয়ে যায়।

আরও ফল বৃক্ষ যা ছিল বন্যায় ভেঙ্গে নিল, ছুটে গেল মায়ার ভেরী।।

৪। স্বামী হরিচরণ, জেনে কারণ, প্রেম অনুরাগ করে ধারণ,

হুঙ্কারে কাম করে বারণ, সদা প্রেমানন্দে রয়।

ভেবে আদিত্য কয়, প্রেম বন্যায় সব ডুবে যায়, দীন ডুবে থাক গে মরি।।


 

বিচ্ছেদ

১২৬ নং গান, তাল-একতাফা, রাগিনী-শানিরা

হৃদয় আলোকে মনের পুলকে

হরিনামের হুঙ্কারেতে করব দশ ইন্দ্রিয় বস,

ঐ নাম হৃদয় ধামে নিব দমে দমে, কাম দস্যু হইবে বিনাশ।।

১। হরিনামের ঝঙ্কার শুনি, পাগল হয় শূল পানি,

চিত্তগুহ দিন রজনী, আমার নাচে সর্ব্বদায়।

ভগ্নি আমোদ আহ্লাদিনী, পতি বিরহিনী, তারা নেচে পুরায় মান অীভলাষ।।

২। আমার দেখে শুনে সে সব কাণ্ড, কম্প হয় হৃদি ব্রহ্মাণ্ড,

ধর্ম্ম পূন্য সকল পণ্ড, আমার কিছুই না রয়।

ভেঙ্গে মোক্ষ মুক্তির বাসা, করিল এই দশা, আমায় সব দিকে করিল নৈরাশ।।

৩। আমি অজ্ঞান রাজার রাজ্য ছেড়ে, আসিলেম জ্ঞান রাজার ঘরে,

বিবেক মন্ত্রীর অত্যাচারে, ঘরে থাকা বিষম দায়।

আরও অনুরাগ চাপরাসী, যাতনা দেয় আসি, ও তার যাতনায় মোর প্রাণ হয় হুতাশ।।

৪। হরি গোঁসাইর পদে হয়ে আলি, কুলে দিয়ে জলাঞ্জলি

মায়া মাতা ছেড়ে চলি, যাব ভাগ্যে যাহা হয়

বোকা দীনবন্ধু বলে, প্রাণ যায় আমার জ্বইলে, কেন আমি নিলেম ঐ বেশ।।

 

বিচ্ছেদ

১২৭ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

আমায় ছাড়িল বহুদিন ধরে কি দোষেতে পাইনে তারে।

আমি আশা করি দুঃখ ভারি, দেখা দেয়না অভাগীরে।।

১। আমি আশা করি পাব পাব, পেলে পরে ঐ চরণে; বিকায়ে রব।

আমার সে কল্পনা, তাই হলনা কাজ কিরে ছার জীবন ধরে।।

২। আমি এ দেহ আর রাখি কি কারণ, এ জনমের মত যেয়ে ত্যজিব জীবন,

যাব আকুল প্রাণে, দারুণ বনে, জীবন থাক কানন ভিতরে।।

৩। আমি বেহাল বেশে বনে এসে, ঘুরে ঘুরে বেড়াতেছি সদা হুতাসে।

আমার হয়না মরণ এছার জীবন, বিসর্জ্জন দেই কেমন করে।।

৪। আদিত্য কয় দীনবন্ধু শুন, গুরুর দেহ মিছে যেয়ে কেন কর বিসর্জ্জন।

হরি অপরাধী মরবি যদি, হরি গোঁসাইর থাক চরণ ধরে।।

 

বিচ্ছেদ

১২৮ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণভেরি

আমায় ফাঁকি দিয়ে এই করিলে, কোথায় যেয়ে লুকাইলে।

অনাথা অবলা আমি, তাই জেনে কেন নিদয় হলে।।

১। তারে যদি ধরা পেতেম একবার, প্রাণ অন্তে ছাড়তেম না কখন বাসনা আমার।

আমি কেমনে ধরি সহচরী, কবে রব রূপ নেহালে।।

২। কো সন্ধানে তারে ধরি সই, (বিরহ) যাতনায় মরি বল, কেম্নে ঘরে রই।

আমি যখন ভাবি রূপের ছবি, তরঙ্গ ভীষণ উথলে।।

৩। আমি অনুমানে রব কতদিন, বর্ত্তমানে পেলে হয়ে রইতেম চরণের অধীন।

রইতেম কায়োমনে শ্রীচরণে, চিরদিনের দাসী বইলে।।

৪। আদিত্য কয় পেতে চাও যদি, চাতক হয়ে তারে ভেবে, রও নিরবধি।

দীনা কয় সখী বল, মন নাই সরল, ধরি তারে কি কৌশলে।।

 

বিচ্ছেদ

১২৯ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

গুরু তোমার জন্যে এই অরণ্যে-এলেম আমি পাব বলে।

আমি ঘুরে বেড়াই যেখানে যাই, দুঃখের ছেড়া কাঁথা গলে।।

১। আমি কোন গুণেতে পাই গুণনিধি, (ভক্তি) শূন্য দেহ লয়ে বনে রই নিরবধি।

বেড়াই বনে বনে, অধম পানে, চেয়ে দেখ নয়ন মেলে।।

২। বল গুরু থাক কোন খানে, (দেখা) দিয়ে প্রাণ রাখ নইলে মরি জীবনে।

কেন হলে নিদয়, নিদান সময়, বাঁচি তোমার দেখা পেলে।।

৩। আমায় এই ভাবেতে রাখবা কতদিন, মন পোড়া চাতকীর মত, আছি রাত্রি দিন।

কর দুঃখ মোচন হে গুরুধন, স্থান দেও তোমার চরণ তলে।।

৪। হরি গোঁসাইর কঠোর করণে, গৃহ ছেড়ে এলেম আমি নিদারুন বনে।

আদিত্য কয় সুবচনে, দীনা গুরুর চরণ জাসনে ভুলে।।


১৩০ নং গান, তাল ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

আমার প্রাণ নিয়েছে প্রাণ বল্লভে, মন হল মোর বিদেশবাসী।

বেড়াই দেশ বিদেশে, হা হুতাসে, দুঃখের তরঙ্গে ভাসি।।

১। হয় না দেখা প্রাণ বন্ধুর সনে, (আমায়) বহুদিন হয়ে ছেড়ে গেল নাই বুঝি মনে

রইল কোথায় গিয়ে, কেমন হিয়ে, দয়াময়া নাই এক মসি।।

২। অসহ্য বিরহে অনলে, তার জন্য হৃদপর্ণ কুঠীর, আমার যায় জুইলে।

আমি হায় কি করি, সহচরি, হল মন আমার হুতাশি।।

৩। যাব আমি প্রাণ বন্ধু কাছে, চরণের দাস হয়ে রব, সে যথায় আসে।

আমি চরণ পাশে, মন উল্লাসে, বসে রব দিবানিশি।।

৪। মন আমার হল চঞ্চলা, প্রেম নিধি তরঙ্গিনী, হল উতলা।

দীনা কয় অন্তিমের বেলা, হরি হই যেন চরণের দাসী।।


১৩১ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

যে জন ভাব সাগরে ঝাপ দিয়েছে

তার কিরে আর ভাবনা আছে।।

সদা বলে হরি, অতল বারি, মায়ার ভেরি ছুটে গিয়াছে।।

১। ভাব সাগরের কুল কিনারা নাই,

(ও তার) তিনটি ধারা, বহে সারা দিবা বিভা ঠাঁই।

দেখে তুফান ভারি, দিশে হারি, অজ্ঞান বন্ধু এল কাছে।

২। অনুরাগ এক বান ডেকে সাগর, ভীষন গর্জ্জিয়া উথল দিচ্ছে ভয়ঙ্কর।

খিলে আকাশ, পাতাল, সে সপ্ত তাল, মহা প্রলয় ঘটিয়েছে।।

৩। প্রেম বারির উত্তেজনে, মহা বিপ্লব, বৃক্ষাদি সব, বিশ্ব জীবজনে।

যত সাধু মকর, হয়ে বিভোর তরঙ্গে সাঁতার খেলতেছে।।

৪। হরি গোঁসাই বলে দীনা শোন, ভাব সাগরে মকর সেজে করগে ভ্রমণ।

হইলে অনুগত, মনের মত, থাকবি মন মানুষের কাছে।।


বিচ্ছেদ

১৩২ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

আমার প্রাণ ঘৃত আহুতি দিলেম, হে গুরু তোমার নাম যজ্ঞে।

আমার কঠিন হৃদয় হে দয়াময়, (তোমায়) দিলেম এখন যা দেও আজ্ঞে।।

১। আমি জ্ঞানের অগ্নি জ্বেলেছি এবার, (মায়া) বিল্বপত্রে, ঘৃত মেখে, দিলেম তার উপর।

দিলেম জীবন যৌবন, ও গুরুধন, কর যা হয় উপযুগ্যে।

২। ভক্তি চন্দন দিলেম পদঠাঁই, আনন্দেতে নেচে বেড়ায় আমার ভাগ্যজোড়ের ভাই।

আমার বিবেক বুদ্ধি পুত্র দুইজন, মগ্ন হয়ে নাচে অগ্রে।।

৩। প্রেম অনুরাগ সহায় রেখে তায়, যজ্ঞ করি কাতর হিয়ে, তোমারি আশায়।

আমার বলতে যে সব ছিল, সব দিলেম ঐ মহাযজ্ঞে।।

৪। দীনা কয় মোর চিত্ত গুহে, আমোদ আহ্লাদ দিবানিশি আছে উৎসাহে।

জ্বেলে পঞ্চবাতি করি স্তুতি, হরি গোঁসাইর ঐ সআজ্ঞে।

 

বিচ্ছেদ

১৩৩ নং গান, তাল-ঠুংরী, রাগিনী-অরুণ ভেরি

আমার হৃদয় কানন হে গুরুধন, আবাদ কর শ্রীপদ পরশনে।

আমার হৃদয় কানন অতি ভীষন, কাম-ব্যঘ্র রয় সেই বনে।।

১। কাম ব্যাঘ্রের ঐ ভীষন গর্জ্জনে, বনজন্তু পালিয়ে যায় দুর্গম অরণ্যে।

আমি বলব আর কি, যত পাখী, ভয়ে কম্প রয় গোপনে।।

২। কাননে কি সহর গ্রামে, বায়ুভরে কাম ব্যাঘ্র, দিন রাতি ভ্রমে।

থাকলে বেহুসিয়ারে, খায় সে ধরে, সারা করে জানে প্রাণে।।

৩। বনে আঠার জন, আঠার পাশে, অস্ত্র হাতে গোপনেতে, রয়েছে হুসে।

বনে করে ধাববান, আরও নয়জন, আছে কাম ব্যাঘ্রের ঐ অন্বেষণে।।

৪। জ্ঞান অনুরাগ ব্যাধ হয় দুজন, (ব্যাঘ্র) মারবার লাগি, চির যোগি রয়েছে চেতন,

তবু তার ভিতরে, ব্যাঘ্র বরে, আহার করে দিন দিনে।।

৫। আদিত্য কয় চাও যদি মুক্তি, হরি গোঁসাইর কাছে গিয়ে শিলে কও যুক্তি।

দীনবন্ধুর এই ভাব উক্তি, (গুরু) ব্যাঘ্র মার কৃপা বাণে।।

 

বিচ্ছেদ

১৩৪ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-ভেন্ডিল কাহিনী

দয়াল হরিচাঁদ তুমি আমায়, ঘরের বাহির করলারে হরিচাঁদ।

করে দেশান্তরী দীন ভিখারী রে এখন আমায় কেনে দিলে বাদ।।

১। এক দিন রূপ দেখালে মোরে, প্রাণ তো ফিরে যায় না ঘরে।

আমি সেইরূপ আর দেখলেম না ফিরে, আমি ধরব বলে রূপের চাঁদ।।

২। রূপ দেখায়ে পাগল করে, কোথা গেলে আমায় ছেড়ে।

আমি বাঁচিনা আর ঐ রূপ বিনেরে, মোরে কর রূপের আত্মসাত।।

৩। রূপের ঘরে দিলে আখি, অন্য দিকে ধায় মন পাখী।

আমি কেমন করে সে রূপ রাখিরে, ক্ষামার মন প্রাণ ধরে কু পথ।।

৪। দেশে বিদেশে বেড়াইর ঘুর, করলে সে রূপের ভিখারী,

দীনা রয় আকক্সক্ষায়, ঐ রূপ সদায় রে, দেখলে ঘুচে আমার কর্ম্মফাঁদ।।


বিচ্ছেদ

১৩৫ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

হরিচাঁদের যুগল মুরতি, আমি দেখব দিবা রাতি, আশা করি আকুল মনে।

আমার আশায় আশায়, জনম গেল হে, আশা পূর্ণ হইল না কেনে।।

১। হরি মন প্রাণ নিয়ে হরে, বসত করে নিরন্তরে, যাব আমি তার কাছে এবার।

তিনি যেখানে রয়, মন চোরায় রে, সেই খানে যাব অন্বেশণে।।

২। মন প্রাণ নিয়ে বসে রল, আর না পুঃন দেখা দিল না জানি কোন পাষাণ হিয়ে তার

এখন আমার কথা নাই বুঝি মনে, আমি বাঁচিনা আর সে বিনে।।

৩। আমি ঐ রূপেতে নয়ন দিয়ে, থাকব পদে বিকায়ে, এ জীবনে আসিব না আর।

সদা রূপের সনে, নয়ন রাখব হে, যুগল রুপ দেখব রাত্রি দিনে।।

৪। আমি সে রূপের পাব দরশন, শান্তি হবে আমার জীবন, তবে আমি হয়ে রব তার।

হরি গোঁসাই বলে, নেহারিলে রে, দীনা রূপ দেখবি রাত্রি দিনে।।

 

নারী শিক্ষা

১৩৬ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

আমি বলব কিরে ভাই

কলির কাণ্ড দেখে শুনে দুঃখে মরে যাই।

ভবে মান্য গণ্য হল শুণ্য দেখিতেছি সর্ব্ব ঠাঁই।।

১। জন্ম দাতা পিতা মাতা, আন্দ ভরে, ছেলে বিয়ে, করায় নিয়ে উৎসাহ করে।

নিচ্ছে পরের কন্যে, শান্তির জন্যে, শান্তি থাক হয় ঘরের বালাই।।

২। মাসেক দুমাস, শান্তিতে বাস করে বুড়া বুড়ি,

তার পরে অলক্ষ্মীর ভাণ্ড, দোষী হয় ভারি।

তারা কথায় কাজে দোষী সাজে, দোষ ভিন্ন যশ ভাগ্য নাই।।

৩। বধুরাণি ক্রোধে তিনি বলে বুড়ি হাঙ্গর,

ঠোঁটটা ঝুলায় বাঁদরের ন্যায়, যেন পোড়া বাদুর।

আরও স্বামীকে কয়, ঐ নির্ব্বংসিয়ায় না মরিলে শান্তি নাই।।

৪। টাকা খেয়ে দিল বিয়ে, আমার বাবা মায়,

অসুরটাকে নিয়ে আমি ঠেকেছি দায়।

বলে নিরবধি, ঝোলঅয় যদি, এটা নিলে বেঁচে যাই।।

৫। কু-বুলি আর কু-কর্ম্মেতে, ডুবল এ ভুবন,

ঘুচাও সবার, এই ব্যবহার, ওহে ভগবান।

কর বাঞ্ছা পূরণ ও গুরুধন, দীনারে দেও পদে ঠাঁই।।

 

নারী শিক্ষা

১৩৭ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশি

মরি নিজের ব্যবহারে, মরি নিজের ব্যবহারে।

মোদের নাই একতা, ভণ্ডকথা, ব্যভিচারি ঘরে ঘরে।।

১। সামনে রেখে পিতা মাতা, বলে কুছার কুৎসিত কথা,

শুনে লাগে প্রাণে ব্যাথা, যে বোল শুনি নাই সেই বোল ধরে।

শুনে কুৎসিত গালি, কুৎসিত বুলি, লজ্জাতে যাই মরে,

হায়রে দারুন বিধি, নিরবধি, এই কথা কি শুনতে পারে।।

২। খুড়ী পিসী জ্যেঠি মাসী, মান্য নাই দিবানিশি,

ব্যভিচারে মত্ত বেশী, মান সম্মান লজ্জা ফেলে দূরে।

গ্রামের যত মান্যবান, তাদের মান্য নাইরে,

তার থেকে ওর মান্য বেশী, বেমানীর মান গেছে বেড়ে।।

৩। মুখেতে নাই হরিনাম, সদা কুবলি কু-কাম,

সৎলোকের ঘটায় বিষম, যাহাতে নাম নিতে না পারে।

সতের সঙ্গে করে ভঙ্গ, দুষ্টা দুরাচারে,

ও তার সতের সঙ্গ নেওয়া হয়না কলি দুষ্টের অত্যাচারে।

৪। আরও কু-চরিত্র হলে নারী, মানেনা শ্বশুর শাশুড়ী,

স্বামী ভাসুর তুচ্ছ করি, ভ্রমে সে নগরে নগরে।

তিনি ঝগড়ার নালা পেলে জ্বালা বাঁধায় তথাকারে,

নারীর মুখের কথায়, করে প্রলয়, ব্রহ্মাণ্ড ডুবাতে পারে।।

 

নারী শিক্ষা

১৩৮ নং গান, তাল-ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

স্বামী হল মেয়ের ভগবান, পুজ বর্ত্তমান আর অনুমান, রিপুর বশে যেওনা ভুলে।

রে এবার স্বামী ধর, পূজা করহে, নৈলে উদ্ধার হবা কোন বলে।।

১। স্বামীর পদে ভক্তি রেখ, সদায় বাসধানে থেক, রতি মতি দিও স্বামীর পায়।

সবে স্বামীর মতে, মত রাখিও হে, নৈলে যেতে হয় রসাতলে।।

২। মাতা পিতা তুষ্ট হয়ে, বর এনে দিল বিয়ে, সাধন ভজন করিবার আশায়।

হল স্বামী গুরু, কল্পতরু হে, কল্পনা রেখ তার চরণ তলে।।

৩। স্বামী স্ত্রী ঐক্য হয়ে, সাধন কর একমন দিয়ে, মুক্তি পাবে অন্তিম সময়।

দয়াল হরিচাঁদের, দয়া হলে হে, দুজন শান্তি ধাম যাবে চলে।।

৪। মহা সতী তারার পতি, নিধন করে জগৎ পতি, রামায়নে শুনিয়াছি তাই।

তখন রামের শরে, বালি মরে হে, তারা অভিশাপ দেয় সেকালে।।

৫। সেই অভিশাপ রাম নেয় বেধে, সীতার শোকে বনে কাঁদে, এড়াতে না পারে দয়াময়।

ভেবে বলে দীনা কুল পাবানা হে, স্বামীর চরণ পূজা না হলে।।


১৩৯ নং গান, তাল-গড়খেমটা, রাগিনী-উল্টাকেশী

দুঃখ হয় যার কর্ম্ম ফেরে- দুঃখ হয় যার কর্ম ফেরে।

ভক্তি মুক্তি তপঃস্বর্গ নিরসন তাই হয়ে যায় রে।

তিন প্রকার আছে নারী, এ ভব সংসার ভরি,

সাধ্বী, ভোগ্য, কুলটা নারী, তাহারা এই তিনটি নাম ধরে।

পরকালের ভয়ে কেহ, সাধ্বী নারী হয় রে

ও তার পতির মনকে তুষে সদা, অতি যত্ন সহকারে।।

আপনার যশ কীর্ত্তি, রটাবার জন্য অতি,

কাম বশ রাখিতে সতী, বসিয়ে পতি সেবা করে।।

ভোগ্যা নারী চলে ভারী, বস্তু অলংকারে,

বিলাসিতার অনুগত হয়, পতির সেবা করে।

কুলটা রমনী যারা, অন্তরে কপট করা,

অবনী মাঝার তারা, ঐ রূপে পতি সেবা করে।

বশ্যতা দেখায়, পতিরে তায়, দুর্বুদ্ধি অন্তরে,

কামবশে অন্য পুরুষ, মনে মনে বাঞ্ছা করে।।

আত্মরাম জনে যাহা, বুঝিতে পারে তাহা,

অন্য জনে নাহি তাই, কখনে বুঝিতে না পারে।

হরিগোসাইর বচন, দীনা দুর্জ্জন, মরিসনে কাম শরে,

তুই অনুরাগ ধনুক শর নিয়ে, দাঁড়িয়ে থাক রূপের দ্বারে।। 


১৪০ নং গান, তাল-কহরাবা, রাগিনী-জয়জিয়ালই

যে জন সতী নারী হয় পরিত পদে মনকে বেধে মহানন্দে রয়।

যিনি সৎ কুলোদ্ভবা কন্যা তিনি পতিব্রতা হয়।।

১। অসৎ কুল জাতা কন্যা পিতৃ মাতৃ দোষে, কুলটা হইয়া তাকে সর্ব্বশাস্ত্রে ঘোষে।

ওসে স্বর্গ বেশ্যা অপ্সরা গনের জন্ম তারা হয়।।

২। স্বামী যদি গুণবান তবুও কখন, করে না তাহার সেবা, গুণ দিয়া মন।

করে নিন্দা ভৎসন, সে সর্বক্ষণ এই ব্যবসা সদারয়।।

৩। অগ্নি মধ্যে সর্প মুখে, কন্টকের বন, বসতি করা সহ্য হয়, তবুও কখন।

তবু দুষ্ট নারী, অতি ভারি, সঙ্গ করা নাহি যায়।।

৪। ভেবে হরি গোঁসাই বলে, শুনহে সবায়, রমনী কলে দুষ্টা, কিন্তু কভু নয়।

ওরে শুনরে দীনা, মন দিলিনা, কেন গুরুপতির পায়।।

 

১৪১ নং গান, তাল--ঝাপ, রাগিনী-উরুশেন

শুন বলি কুল বালা গণ-সবে রক্ষা কর পতির মন,

পতির রণ ভজ সর্ব্বদায়।

পতি না ভজিলে কোন কালে হে, ও তার মুক্তি নাই আর এ ধরায়।।

১। পতিতে বঞ্চনা কৈরে যে অন্যকে আম্রয় করে, কুম্ভিপাকে পরিয়া সে রয়।

উঠলে প্রহার করে যম কিঙ্করে হে, দিবানিশী কীটগণ দংশে তায়।।

২। চন্দ্র সূর্য্য স্থিতি কাল রয়, সে নারী থাকেন তথায়, ঐ রূপেতে সদা কাল কাটায়।

ভীষণ প্রহার করে, নাহি মরে হে, বিকৃত ভীষন শব্দ করয়ে।।

৩। কুল ধর্মের ভয়ে পরি, পতির বসগা যেই নারী, অন্তিমে বস বৈকুণ্ঠে তার হয়।

পতি ভজ সবে, সুখে রবে হে, পাবে গোলক পতির পদাশ্রয়।।

৪। সতী বসুন্ধরা বলে, পতি নিন্দুক যে সকলে, তাদের ভার মোর, সহ্য নাহি হয়।

দীনার কাতর বচন, কুলবালগন, রতি মতি রাখ পতির পায়।। 


১৪২ তাল-কাহারবা, রাগিনী-জয় জিয়ালই

সবে পতি কর সার, পতি বিনে সতী নারীর গতি নাইরে আর।।

ভবে অসতী না পারে কভু  পতির মনকে তুষিবার।।

১। অসতি যে করে লয় ঐ পর পতি আশ্রয়, সদাচারে মন-প্রাণ তার কখন না যায়।

সদা কুৎসিত বুলি কু-কর্ম্মেতে মত্ত থাকে অনিবার।।

২। ভর্ৎসনা স্বামীকে নারী করে দিবা নিশী, শ্বশুর শাশুরী হয় যেন দাস দাসী।

কথা কয় না স্পষ্ট, প্রাণে কষ্ট দিয়ে চলে নিরন্তর।।

৩। দুর্ব্বাক্যেতে দুর্শ্চারিনী পরানে কষ্ট দেয়, নিজা দেহ শান্তি রেখে, তাদের খাটায়।

খাটে নিরবধি তবু যদি, খেতে সইতে কষ্ট তার।।

৪। পুত্র হয়ে নারী বাধ্যে থাকিয়া সদায়, বুড়া বুড়ির উপরে কুৎসিত গালি দেয়।

তাতে শাপ গ্রস্থ ব্যাধি যুক্ত নরকে বাস বংশ তার।।

৫। দীনা বরে মাতাগুণ শুন বলি তায়, শ্বশুর শাশুরী পরম পূজ্য এ ধরায়।

পুজো তাদের পদ, পতি ভজ, এ ভিন্ন গতি নাই আর।।

 

দীনবন্ধু গোসাইয়ের পান্ডুলিপিতে পাওয়া

কয়েকখানা নতুন গান সংযোজিত হইল।

আসর গান

১৪৩ নং গান, তাল-একতালা, রাগিনী-পালা গানের সুরে

যেন মম নেত্র কোনে হেরি নিশিীদিনে, বসাইয়া হৃদি উত্তম আসনে।

আমার কঠিন হৃদয় এসে দয়াময়, আনন্দে নাচাও এ নিরানন্দ মনে।।

১। অন্তরালে লুকি, থাক নিরঞ্জন, হৃদপর্ন কুটিরে কর পদার্পণ।

শ্রদ্ধা সুচন্দন, করিব অর্পন, এসে বস এই, চিত্ত সিংহাসনে।।

২। ব্রহ্মান্ডের কর্ত্তা, ব্রহ্ম সনাতন, কি দিব তোমারে নাহি ভক্তি ধন।

শক্তি দেও এবার, দুকৃতি আমার, বিনাশিয়া ডাকতে পারি সর্বক্ষণে।।

৩। ডাকি হে তোমারে এস এই আসরে, তব রাতুল পদ পূঁজিব  সাদরে।

দীবনবন্ধু কয়, হরি দয়া ময়, দেখা দেও আমায় শান্তি সু-মিলনে।।

 

১৪৪ নং গান, তাল কাওয়ালী, রাগিনী বিরলা

হস্তপদ বন্দী করে দরবারেতে নিয়া,

মন তোরে মার খাওয়াব, গুরুর কাছে কইয়া।

কেন চল যুতে যুতে, সদা ঐ কু-পথে, গুরু কর্ম করিতে, কষ্ট যায় তোর হইয়া।।

১। ভ্রাতা ছয়জন নিয়ে সুযুক্তি করি, জোর জুলুমে ধরে নিব গুরুর কাছারি।

বিচার করি আইন মতে, দেয় যদি ঐ করণ পথে, হরি বলি ঘাটে পথে কাঁদবি আকুল হইয়া।।

২। জ্যেষ্ঠ গুরু ভ্রাতা হয় অনুরাগ সন্ন্যাসী, জ্ঞান গুরুর ঐ বাম পার্শে, রয় সদা বসি।

সে অনুরাগ শাসন চোটে, দুর্ব্বুদ্ধি তোর যাবে ছুটে, বিচ্ছেদ গুরু ভগ্নির হাতে, যাবি দগ্ধ হইয়া।।

৩। বিবেক নামে গুরু ভ্রাতা, আছে একজন, সুশৃঙ্খলে বেঁধে তোরে, করিবে পীড়ন।

হিংসা নিন্দা করি নিধন, করবে তার মনের মতন, গুরু পদে হবি পতন, আসবি না আর ফিরিয়া।

৪। ভেবে দীনবন্ধু  বলে, ওমন বেপারী, গোনার দিন সরিয়া যায়, বল হরি হরি।

সরল পথে হাঁ'টা চাই, নৈলে তব নিস্তার নাই, তোরে চিনে নিশি দিনে, আছি ধৈর্য্য ধরিয়া।।


১৪৫ নং গান, তাল- খেমটা, রাগিনী-লম্পট

মন মাঝি বলি তোমারে

পারি ধরে যেয়ো পারে - অতি হুসিয়ারে।

এবার সাবধানে ধরিও পারি, মৈরনা ঘোলায় পরে।।

১। একেত বিপ্লব ঝটিকা আঁধার শর্বরী

অকুল ঘোর তরঙ্গ বহে দুরন্ত পাড়ি।

যেয়ো সুযোগ চিনে, নাম স্মরণে, সু-সন্ধানে হাইল ধরে।।

২। শ্রদ্ধা পালে ভাবের মাস্তুল দাড়া করিয়ে,

অনুরাগের বাদাম টেনে থেকে বসিয়ে।

যদি দয়া পবন উঠে তখন, নিঃসন্দেহে যাবি পারে।।

৩। আনন্দে তরঙ্গ তরী, ঢেউয়ে ঢেউয়ে বাও,

রসের তরী রসাং দিয়ে ঐ রসে চালাও।

যে জন রসিক সুজন গুরুর চরণ, সার করে সারাৎ সারে।।

৪। মধ্য রাতে তরী নিয়ে হাইল চাপিয়ে রও,

মন প্রাণ সমর্পিয়ে, গুরুর পদে ধ্যেও।

তবে পারে যাবি রূপের ছবি দেখবি দীনা সাদরে।।



১৪৬ নং গান, তাল- গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

চিতার থেকে চিন্তা ভারী রে, চিন্তায় জ্যাতা মানুষ পোড়ে।

ও যার চিন্তা অনল, হল প্রবল রে, নিরন্তর অন্তর জ্বারে।

১। চিন্তা ভীষন কঠিন ব্যারাম, এ ব্যারামের নাহি আরাম, এ ভব সংসারে ।

যত ওঝা বৈদ্য, নাইক সাধ্যরে, এ ব্যারাম না সারতে পারে

২। কেউ করে কু- পথের চিন্তা, কেউ করে সু-পথের চিন্তা, চিন্তা দুই প্রকারে ।

ভবে যে চিন্তায় যারে ধরেছে রে, ও তার জানে প্রাণে সারা করে রে

৩। চিতার অনল সবে দেখে, চিন্তার অনল কেউনা দেখে, (পোড়ে) অন্তরে অন্তরে ।

যে জন অন্তর জানে, সে জন বিনে রে, কেউ না জানে ত্রি সংসারে।

8। চিন্তার সাগর চিন্তা মনি দেও হে দেখা দিন রজনী চিন্তা তব তরে ।

গুরু দেখা দিয়ে জুড়াও হিয়ে হে, তবে দীনার চিন্তা যাবে দুরে।


১৪৭ নং গান, তাল- কাওয়ালী, রাগিনী - করুন ভান্ডার

দয়াল গুরুহে আমার দরদি নাই তুমি বিনে ।

আমার দুঃখের কথা বলবো কোথা হে, হারে দরদ বুঝবে কেউ নাই ভূবনে।

১ । দরদের বান্ধব তুমি দরদি আমার, তুমি দরদ না বুঝিলে, কে বুঝিবে আর ।

দুঃখ কার কাছে আর বলব গুরু হে, হারে ব্যাথিত কেহ নাই এ নিদানে।

২। আমার নাহি করি নাই কান্ডারী তুমি কর্ণধর, অসীম সাগরের পারি, আমায় কর পার ।

আছি ঐ ভরসায় কর উপায় হে হারে দরদ বন্ধু নাই তুমি বিনে।

৩। অকুল সাগরের পারে, পাঠালে আমায়, আদেশ পেয়ে এলেম ধেয়ে দুরন্ত খেদ হৃদয় ।

যার চান্দের শহর, হে গুরুধন হারে বল যাব আমি কেমনে


১৪৮ নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-ফকির ধাওয়া

শুরু এই কি ছিল কপালে-

দুরন্ত সাগরের মাঝে আমায় কেন ভাসালে ।

ভাগ্যে এই কি ছিল, জীবন গেল, এখন সাগর হতে নেও ভুলে।

১। (সাগর) দেখে শুনে লাগে ধন্ধ, মন মনুরা হয় আতঙ্ক।

(হেরি) সাগরের ঐ ভীষন কান্ড, তোমার দয়াময় নাম যাই ভুলে ।

যে দিকে চাই সে দিক শূন্য, দরদী নাই রক্ষার জন্য।

(আমার) মনমতি হয়ে যায় হন্য, সাগর পানে তাকালে

৩। না হেরিলেম শ্রী চাঁদ মুখ, দুঃখে বিদরে মোর বুক ।

তোমার অভাগারে চেয়ে দেখ, ঐ কৃপা নয়ন মেলে।।


১৪৯ নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-অরুন ভেরী

কি সাজ সাজে, সাগর মাঝে পাঠাইলে গুরু চাঁদ আমার,

দিয়ে সাগর পাড়ি, ভয়ে মরি গো চতুদিকনা হেরি কিনার

১। মায়ানু আভরণে, পাঠালে সাগর ভ্রমনে সাগর মাঝার।

এখন দিলেম পাড়ি, যদি মরি গো, কলঙ্ক হইবে তোমার

২। অকুল দরিয়ার পাড়ি, ত্বরিতে চলিছে তরী অতি বেগ ভর ।

তব কৃপা পবণ লেগে দ্বিগুন গো শঙ্কা নাই আর

 ৩। তব অসীম দয়ার সীমা, দিতে শক্তি নাহি আমা বর্ণিব কি আর ।

গুরু তুমি বিনে ঘোর নিদানে গো, (দীনার) ভবে কেহ নাই তরাবার।।


১৫০ নং গান, তাল- একতালা, পালা গানের সুরে

ও হে অন্তৰ্য্যামী দেখা দেওহে তুমি, তোমা লাগি ভ্রমি, জঙ্গলে জঙ্গলে।

 (প্রভু) বিপদ ভঞ্জন, আমি অভাজন, তব শ্রী চরণ, ঘটলো না কপালে।।

১। এ ঘোর বিপদে, কোন অপরাধে, হলেম অপরাধী তব ঐ শ্রীপদে ।

দেও পদ ছায়া, হইও না নিদয়া, দয়ার লাগিয়া ভ্রমি ভূ মন্ডলে।।

২। পঞ্চভূতে দেহ, দিলে সৃষ্টি করি, মায়াতে ভুলিয়া নাম লইনা তোমারি ।

(হরি) দুষ্কৃতি নাশিতে, এসেছ জগতে মো- সম দুষ্কর্মি জগতে না মিলে।।

৩। গোলক পতি হরি, আমায় সৃষ্টি করি, পাঠালে জগতে পূর্ণ দেহ গড়ি ।

তোমায় না ভজিয়ে, কুরসে ডুবিয়ে, জনম কাটিল, কুমতির ঐ হলে!।।


১৫১ নং গান, তাল- ঠুংরী ,রাগিনী-অরুন ভেরী

এ বিপদে ঐ শ্রীপদে কৰ্ম্মদোষে না পেলাম ঠাঁই ।

 (এবার) আমি পেয়ে পদ হারাইয়ে গো, নিরস্তন খুঁজিয়ে বেড়াই।।

১। এই আকাঙ্খা ছিল মনে, পদে আত্মসমর্পনে থাকব এ জীবনে ।

সদা পদে রব, প্রাণ জুড়াবো গো, ঘুচে যাবে সকল বালাই ॥

২। তোমা লাগি এসে আমি, দূর্গম অরন্যে ভ্রমি, ওহে অন্তৰ্য্যামি ।

হলে কেন অন্তর্ধান, অন্তরের ধন গো, পুনরায় আর খুঁজে না পাই ৷।

৩। তব আজ্ঞা রক্ষিবারে, এসে অরন্য মাঝারে না যাই বুঝি ফিরে ।

ঘুচাও এ ঘোর বিপদ, হে গুরুচাঁদ গো, নৈলে এ অভাগার দরদি নাই ॥


১৫২ নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-অরুন ভেরী

অপরূপে দেখা দিলে, কি দোষে আমায় ছেড়ে লুকালে ।

আমি হেরিয়ে না পুনঃ হেরি গো তারে, পাইব কোথায় খুঁজিলে ॥ 

১। আমি কত অপরাধী, দেখা দিয়ে গুন নিধি বিরোধী হয়েছে ।

তাইতো দেখা দিয়ে নিদয় হয়ে গো, ফেলিয়া গেল আড়ালে ॥

২। আহারে দারুন বিধি হারাইলেম গুননিধি, এই ছিল কপালে ।

এখন কোথায় যাব, তারে পাব গো পুজবো চরণ নয়ন জলে।।

৩। আসিয়া দূর্গম কাননে, ভীষন আকৃতি দরশনে আতঙ্ক হই মনে ।

 হেরি পদ চিহ্ন কীৰ্ত্তি ধন্য গো জ্ঞান শূন্য হই এককালে।।


 ১৫৩ নং গান, তাল- গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

গুরু পদে ভক্তি নাই যার-

নরকে বাস, কৃতান্তের পীড়ন সার ।

(দিবি) বিশ্বাস ভক্তি প্রেম শক্তি রে, গুরু বাক্য তাই শ্রেষ্ঠ কর॥

১। সদা বল সত্য কথা, অন্তরেতে সরলতা, রাখ মন আমার।

হেরি পর স্ত্রী কে মাতৃ তুল্য রে, (ছেড়ে) কাম, ক্রোধ, লোভের অধিকার।।

২। নিরন্তর বগদন ভরি, নিশিদিনে বল হরি, ত্যাজে বেদান্তর ।

(দিবি) হিংসা, নিন্দার কুলে কালিরে, হরি বলি ছাড় হুঙ্কার।।

৩। ডেকে হরি গোসাই বলে, মায়া নিম্ন তরুতলে, বাঁধিয়াছো ঘর ।

(কর) রিপুদমন, গুরু ভজন রে, (নৈলে) দীনবন্ধু নাই তোর সুসার।।


১৫৪ নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-লম্পট

মন তুই যে মানুষের সঙ্গ নিবি যেতে পরপারে ।

এবার তালাশ করে লওগে তারে আছে মানুষ মনিপুরে।।

১। মানুষ ধরবি রে তুই কোন সন্ধানে, গুরুর নিকট তত্ত্ব আগে লও জেনে ।

তবে পাবি রতন, মনের মতন যতনের ধন রতন পুরে॥

২। মানুষ দমে আসে, হাওয়ায় চলে, কখন স্কুলে, কখন মুলে, রয় মহিতলে ।

কখন শ্বেত বৰ্ণ হয় চতুর্দলে, কখন স্থিতি হয় পদ্ম পরে।।

৩ । মানুষ রয় ষড়দলে কনিকাপুরে, উভানলে সদা চলে তরঙ্গ ভরে ।

মানুষ ঢাকা আছে স্বর্ণদলে, খুঁজলে পরে পাবি তারে।।

৪ । দীনবন্ধু বলে আমার মন, গোনার দিন সরিয়া গেল না করলি সাধন ।

তোর কিসে মিলবে মানুষ রতন, হারালি সব হেলা করে।।


১৫৫ নং গান, তাল- ঠুংরী, রাগিনী-লম্পট

মনে আমার যত দুঃখ, জানেনা কেউ তুমি বিনে।

 দুঃখ জুড়াইতে স্থান না পাই, দুঃখাগ্নিতে দহে প্ৰাণে ॥

১। দুঃখাগ্নি প্রবল ভারী, দহে দিবা বিভাবরী, প্রানে ধৈর্য্য নাহি মানে ।

আমার এ দুষ্ট মন, আর দুই নয়ন, যায়না ঐ রূপ দরশনে।

২। গুরু তোমার পদ যুগল, হৃদয়ে যেন করি সম্বল, এই বাসনা আমার মনে ।

 গুরু জনম ভরি নেত্র বারি, যেন দিতে পারি শ্রীচরণে

৩। জন্মিয়া এই মানব কুলে, তোমার কথা রলেম ভুলে, অরণ্য এই দেশ ভবনে ।

গুরু দিবা রাত্রি এই মিনতী, চরণে নেও আমায় টেনে

৪। দুঃখে দীনবন্ধু বলে, জনম আমার গেল চলে, তোমার ঐ নাম অস্মরণে ।

দয়াল হরি গোসাই, এই ভিক্ষা চাই, যেন হেরি যুগল রাত্র দিনে


১৫৬ নং গান, তাল- গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

শান্তি হরি যুগল মিলন, কে দেখবি আয় সকলেরে ।

 হেন শোভা জগৎ মাঝে হয় নাই হবে নারে

১। শান্তি মায়ের দক্ষিনে, দাড়াইল হরি ধনে ।

কিবা শোভা নগরবাসী, দেখরে নয়ন ভরে

২। শান্তি হরির সু- কিরণে, আলো হল ত্রিভুবণে ।

ও তার সৌরভে জগৎ মাতিল, ঘুচল জীবের রৌরব রে!

৩। শান্তি শ্রীহরি মিলনে, চাঁদ সূর্য্য নাচে গগনে।

 ইন্দ্র অরুণ নাচে বরুন, নাচে ব্রহ্মা মহেশ্বর রে।।

৪। নাচে ময়ুর ময়ূরী, ভূমে দিয়ে গড়াগড়ি ।

শাস্তি হরি গুনগানে, জগৎ মোহিত হল রে।।

৫। নাচে ভ্রমর ভ্রমরী, গুন গুন স্বরে বলে হরি।

 কলুষ বিনাশ হলো, কলি যুগ ধন্য হলো রে।।

৬। অধম দীনবন্ধু বলে, মম দেহ অন্ত কালে ।

যুগল পদ হেরি গুরু, এই মিনতি নিশি দিনে রে।।


ভোগ আরতি

১৫৭ নং গান, তাল- গড়খেমটা, রাগিনী-লম্পট

ভজপতিত উদ্ধারণ দয়াল শ্রী হরি,

পতিত মাঝে পতিত পাবন গোলক বিহারী ।

ওড়াকান্দি অবতির্ণ পুর্ণ শক্তি ধরি।।


১) এসো এসো শ্রীহরি, লয়ে শান্তি মাতা ।

 ক্ষীরোদ ঈশ্বর তুমি, ত্রিজগৎ পিতাঃ।।


২) উচ্চা, শিক্ষা, কাসি, বাজে, বাজে করতাল।

প্রেমানন্দে সবে মিলে, বলে হরি বল।।


৩) দশরথের নারী আরও, ভক্ত গণ গৃহিনী ।

জয় গানে সবে মিলে, করে উলুধ্বনি।।


৪) বসিতে আসন দিল, সু-কোমল আসন ।

নয়নের জলে কৈল, পদ প্রক্ষালন।।


৫) শান্তি মাতা হরিচাঁদ, করি নিবেদন ।

ভোজন মন্দিরে প্রভু, কর আগমন ।।


৬) গোলক তারক হীরামন, আরও ভক্তগণ ।

মধ্যাসনে বসে আছে, শান্তি হরি দুইজন।।


৭) ভোজন সামগ্রী অন্ন, ব্যাঞ্জন তরকারী ।

কাশীশ্বরী মাতা দিল, গলে বস্ত্র করি ॥


৮) দশরথ আর মৃত্যুঞ্জয়, ভোজন আরতী গায় ।

ভক্তগনে বাহু তুলে, হরি হরি কয় ।।


৯) নাহি জানি পরিপাটি, না জানি রন্ধন ।

 কৃপাময় কৃপাকরে, করহ ভোজন ॥


১০) জগতের নাথ প্রভু, জগতের হরি ।

আনন্দে ভোজন করে, যশসুত হরি।।


১১) ভোজন সারিয়া প্রভু কৈল আচমন ।

সুবর্ণ খড়িকায় করে, দত্তের শোধন।।


১২) সেবা অস্তে শাস্তি হরি, বসি শষ্যাসনে ।

কর্পূর তাম্বুল যোগায়, প্রিয় ভক্তগনে ॥


১৩)  বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরে, শ্রীহরির গায় ।

মালাবতী সতী এসে, বাতাস দিছে গায়॥


১৪) ফুলের পাপড়ি উড়ে পড়ে প্রভুর গায় ।

তাঁহার মধ্যে শান্তি হরি সুখে নিদ্রা যায়।।


১৫) আনন্দিত ভক্তগনে প্রসাদ, নিবে সারি সারি ।

দীনহীন রমেশকে কর, প্রসাদে অধিকারী ॥


১৫৮ নং গান,

মহোৎসবের পয়ার

১। আশ্চর্য এক ঘটনা শুন দিয়া মন ।

হীরা মনের কথা কিছু করিব বর্ণন।।


২। পাতলার গ্রামে এবে করিল গমন।

বালুকের বাড়ি যেয়ে দিল দরশন।।


৩। দুগ্ধ গাভী একটি সে বাল্লুকের হয় ।

নিশি ভোরে সে গাভী মৃত্যু হয়ে যায়।।


৪। বাল্লক ছিল না বাড়ী এমন সময় ।

 তখনে গোস্বামী যেয়ে হইল উদয়॥


৫। বাল্লকের মা বুড়ি বসতে দিল ঠাই ।

ঘরে যেয়ে অমনি বসিলেন গোসাই।।


৬। পরক্ষনে যায় বুড়ি তামাক সাজিতে ।

তামুক এনে দিল বুড়ি গোস্বামীর হাতে।।


৭। বুড়ির পেটেতে ছিল বেদনা অঙ্কুর ।

ভাবে মনে শ্রীচরণে ব্যাধি করবো দূর ।।


৮। সেবা দিয়ে গোস্বামীর পদে দিল হাত ।

গোস্বামী করিল তারে হুঙ্কার আঘাত।।


৯। হুঙ্কার আঘাতে বুড়ি মৃত্যু যে হইল ।

তাহা দেখে গ্রাম্য লোকে আক্রমন কৈল॥


১০। কোথা হতে এল এই দুরন্ত পাগল ।

নিয়ে চলো থানায় কিসের কোলাহল ॥


১১। গোস্বামী বসিয়ে আছে নির্ভয় শরীরে ।

বাল্লুক আসিয়া দেখা দিল তার পরে।


১২। গ্রাম্য লোকে বলে বাল্লক কি করিবা তুমি ।

তোমার মাকে মেরেছে পাগল গোস্বামী।।


১৩। বাল্লুক বলে মাকে যদি গোসাই মেরেছে ।

অনায়াসে মা আমার বৈকুণ্ঠে গিয়াছে।


১৪। সে জন্য তোমরা কেন কর গন্ডগোল।

প্রেমানন্দে সবে মিলে বল হরি বোল।


১৫। গ্রাম লোকে বলে ওর মাথা খারাপ হলো।

সবে মিলে এবে মোরা বাড়ির দিকে চলো


১৬। বালুক গোস্বামীকে দন্ডবত করিয়ে ।

দাঁড়াইল সম্মুখে করজোেড় করিয়ে।


১৭। বালুকে গোস্বামী বলে মম বাক্য ধর।

তব মাতা কর্ণ মূলে সিঙ্গা ধ্বনি কর।


১৮। মৃত গাভী কোথা আছে দেখি গিয়া তাই ।

এ কথা বলিয়ে অমনি চলিল গোসাই।


১৯। গাভীর কাছেতে গিয়ে মাথা জাগাইয়ে ।

 বলে মা তুই এখানে কেন বুলি শুয়ে।


২০। দুগ্ধ বিনা ভগ্নি কাঁদে হাম্বা হাম্বা রবে ।

তুমি দুগ্ধ না দিলে মা কেমনে বাঁচিবে।।


২১ । এ কথা বলে গোস্বামী হাত বুলালো গায় ।

হাম্বা হাম্বা বলে গাভী উঠিয়া দাঁড়ায়।


২২। বালুকের মার কর্ণে সিঙ্গাধ্বনি দিল ।

হরি বলে উঠে বুড়ি নাচিতে লাগিল।


২৩। তাহা দেখে গ্রাম্য লোকের লাগে চমৎকার ।

বলে এমন দয়াল কোথা পাব আর


২৪ । সবে মিলে গোস্বামীর পদে লুটাইল ।

দুনয়নের জলে কেহ বক্ষ ভাসাইল।


২৫ । দীনবন্ধুর বলে এই হরিচাঁদ লীলা ।

 হরি হরি হরি বল যত হরি বোলা।



১৫৯ নং গান, তাল-  রাগিনী-

মহোৎসবের পয়ার

১। তুই তো প্রেমের শুরু, সর্ব্ব বাঞ্ছা কল্প তরু, পেয়েছিলি তোর ভাগ্য গুনে।

আপন কর্ম্মেরি দোষে, হারাইলি সব দিশে ভাব প্রেম নিল কুপ বনে।।


২। ভাব প্রেম কিছু ছিল, সকল হরিয়া নিল, সে কুপবনেরি হাওয়ায় । 

নাহি তোর কোন ভাব, ভাবেরি হল অভাব,  ভাব বিনে হরি নাহি পায়।।


৩। বদনে হরি বলিলে, ভাব প্রেম না থাকিলে, তাহাতে কি শ্রীহরি কে পায় ।

মিছে শুধু ডাকাডাকি, তারে কেন দেও ফাঁকি, সব ডাকা বিফলেতে যায়।


৪ । সতী দ্রৌপদীর কষ্ট, বস্ত্র হরে যাবে দুষ্ট, দ্রৌপদী ডাকিয়া ছিল ভারি।

সতী এক হস্তে বস্ত্র, আর এক হস্তে মাত্র, ডাকিতেছে রক্ষা কর হরি।।


৫। প্রেমময় গুণমনি, অন্তরে ভাবেন তিনি, অর্দ্ধ ভক্তি দিলেন আমায় ।

আমি না করিব রক্ষা, কিছু সময় অপেক্ষা, করে দেখি তাতে কিবা হয়।।


৬। রক্ষা নাহি পেয়ে সতী, ডাকে পুনঃ পুনঃ অতি, এ বিপদে কোথা র'লে হরি ।

সতী করজোর করি, ডাকেন বিরাগ ভরি, দুনয়নে বহিতেছে বারি।।


৭। হরি প্রেম দয়াময়, অন্তরে ভাবেন তায়, প্রেম ভক্তি দিল সমুদয়।

অন্তর জানিয়া হরি, গেল তথা ত্বরা করি, বলে সতী না করিও ভয়।।


শ্রীশ্রী হরির ভাব সংকীৰ্ত্তন

(লঘু ত্রিপদী)

৮। তাতে ভগবান, দ্রৌপদীর মান, রাখে সে সভার স্থলে ।

সে মত ডাকিলে, হরি লবে কোলে, তাতে হরিধন মিলে।।


৯। তেমনি মত ভাব, রাখিও স্বভাব, তবে যদি হরি পাও।

হরি সৰ্ব্বময়, বদনে সদায়, হরি হরি গুণ গাও।।


১০ । দীনবন্ধু বলে, জনম বিফলে, ভাব না হল আমার।

শ্রী হরি গোসাই,আমা দিও ঠাঁই, শ্রীচরণ মম সার।।



১৬০ নং গান,

পয়ার

১। ক্রমে ক্রমে প্রভুনাম জগতে প্রকাশে । 

হরি বলে নাচে গায় প্রেমানন্দে ভাসে।

২। আরো একটি ঘটনা শাস্ত্রে পাওয়া যায় । 

সে কথা বলিব আমি শ্রী হরির দয়ায়।।

৩। কুবের নামেতে জোলা যবন জাতি ছিল ।

 উপাসনা রাম মন্ত্রে মহাসাধু ছিল।।

৪। আরোপের গুণ শক্তি ছিল অতিশয় ।

সদা আরোপে দেখিত কৃষ্ণ দয়াময় ॥

৫ । মনোসুতে ভক্তি ফুলের হার নিল গেথে ।

সেই হার পরাইবে কৃষ্ণের গলেতে ॥

৬। সে হার তুলিয়া দিল শ্রী নাথের গলে ।

চূড়াতে ঠেকিয়া হার পড়ে ভূমিতলে।।

৭ । পুনঃ যবে সেই হার দিতে আরম্ভিল ।

 পুনর্ব্বার সেই হার চূড়াতে ঠেকিল৷।

৮। কুবেরের পুত্র ছিল নামেতে নকিম ।

নিরবধি কৃষ্ণ ধ্যান যাহার অসীম।।

৯ । সদা থাকে আরোপেতে তাঁত বুনে হাতে ।

সৰ্ব্বক্ষণ কৃষ্ণরূপ দেখে আরোপেতে।।

১০ । বাপের আরোপ দেখি নকিমের সুখ ।

 বলে হাত আরও কিছু উপরে উঠুক।।

১১ । দেখ জোলা যবনের ভক্তি কত দুর ।

সেই জন সূক্ষ্ম মন ভক্ত সুমধুর।।

১২ । হরি গোসাইর পদ ভাবি দীনবন্ধু কয় ।

 হরি বলে ডাক মন দিন বয়ে যায়।।



 -:সমাপ্ত:-

PDF by Dilip Majumdar

Mobile - 9831650644

BARASAT


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.